Image description

তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে, নাকি পূর্বশত্রুতার জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যা করা হয়েছিল, রহস্যে ঘেরা আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি সাড়ে ৫ মাসেও। গত ১৩ মে রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাম্য। চলতি সপ্তাহে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় এজাহারভুক্ত ৯ আসামির (গ্রেপ্তার হয়ে সবাই জেলে আছেন) মধ্যে ৭ জনের নামে চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবির পুলিশ পরিদর্শক মো. আখতার মোর্শেদ।

আজ রবিবার (২ নভেম্বর) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে তিনি বলেন, সাম্য হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট চলতি সপ্তাহে দেওয়া হবে। এ হত্যা মামলায় ৭ জনকে আসামি করে এই চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে।

চার্জশিটভুক্ত সবাই মাদক কারবারি ও মাদকসেবী বলে জানা গেছে। তারা হলেন-মেহেদি হাসান, রাব্বি ওরফে ‘কবুতর’ রাব্বি, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন ও রিপন।

সাম্যর বড় ভাই সরদার সাহরিফ সৈকত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এ হত্যার দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস পার হয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য

জানা গেছে, ঘটনার সময় সাম্যকে সুইচ গিয়ার দিয়ে হত্যা করেন মেহেদী হাসান গ্যাং। এরপর ডিবির একাধিক টিম কক্সবাজার, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন মেহেদি হাসান, রাব্বি, নাহিদ হাসান পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ইসলাম, রবিন, সুজন সরকার ও রিপন। তাদের মধ্যে দুজন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সেই সময় এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ডিবি কর্মকর্তা নাসিরুল ইসলাম বলেছিলেন, ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বি, যার হাতে একটি টিজারগান (যেটিতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। সাম্য জানতে চান সেই টিজারগানটা শো করেছে, সেটা তার কাছে কীভাবে এলো। সেই টিজারগানটা কী কাজে ব্যবহার করা হয় জানতে চাইলে দৌড়ে পালিয়ে যান মেহেদীর গ্রুপের দুজন। সে সময় সাম্যর সঙ্গে থাকা বায়েজিত তাদের ধরতে পেছনে দৌড় দেয়। ওই সময় পাপেল ও রাব্বিকে ধরে আনেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় পাশেই কারওয়ান বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে মদ খেতে আসা তিনজনের বাইকের ওপর পড়ে গেলে তাদের মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাস ও বডি ভেঙে যায়। এ সময় ত্রিমুখী সংঘর্ষের সুযোগে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে এ হত্যাকাণ্ডটা ঘটে।

 

দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস তদন্ত শেষে অবশেষে সাম্য হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৯ আসামির মধ্যে ৭ জনের নামে চার্জশিট যে কোনো সময় দেওয়া হবে। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ছাত্রদলের স্যার এএফ রহমান হল ইউনিটের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

সাম্যর বড় ভাই সরদার সাহরিফ সৈকত দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে বলেন, ‘তার ছোট ভাই সাম্য গত ১৩ মে দিবাগত রাতে নবীনবরণ অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীকে নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও সালিস শেষে বন্ধুদের নিয়ে তাসকিনার দোকানে যান নাস্তা খেতে। সে সময় চা ও সিগারেট বিক্রেতা দোকানি আল আমিন সাম্যকে একাধিকবার কল দেন দোকানে আসবে কি না জানতে। আলামিন রুটির দোকান না চালালেও সোহরাওয়ার্দীসহ আশপাশের যত দোকান ছিল, সে দোকানের ভাড়া ও টাকা তুলত আল আমিন। 

সরদার সাহরিফ বলেন, ‘সে সময় নাস্তা খেতে যাওয়া সাম্য তাসকিনার দোকান থেকে মন্দিরের দিকে যাওয়ার পথে মেহেদীর গ্রুপের রাব্বির হাতে টিজারগান দেখতে পায়। পেরে ফিরে এসে টিজারগানটা কী কাজে ব্যবহার করা হয় জানতে চান। সে সময় দৌড় দিয়ে পালায় মেহেদীর গ্রুপের দুজন। সাম্যর সঙ্গে থাকা বন্ধু বায়েজিত ও রাফি রাব্বিকে ধরে আনলে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পাশেই কারওয়ান বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে মদ খেতে আসা তিনজনের বাইকের ওপর পরে গেলে তাদের মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাস ও বডি ভেঙে যায়। পরে সাম্য ঝাপটে ধরে রাখে রাব্বিকে। এ সময় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি। একজন সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুর পেছন দিকে আঘাত করে। এতে সে রক্তাক্ত হয়ে জখম অবস্থায় মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় ‘দুষ্কৃতকারীরা’ সাম্য ও তার বন্ধুদের বিভিন্ন ধরনের ভয় দেখানোর পাশাপাশি হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে সুজন রায় নামের এক ছাত্রদল নেতা এসে সাম্যকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’’

ঘটনার পরদিন ১৪ মে নিহতের ভাই শরিফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ইতোমধ্যেই পাঁচজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে রিপন আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।