ঘনিয়ে আসছে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। দেশ জুড়ে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। মাঠে সরব রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বিঘ্নে ভোট ও সুষ্ঠ নির্বাচনের অপেক্ষায় জনগণ। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেন পরিণত হয়েছে একটি নির্বাচনী মাঠে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে নির্বাচনী আলোচনা-সমালোচনা। পাশাপাশি বাড়ছে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা। রাজনৈতিক দলগুলো পোস্ট লাইভের মাধ্যমে নির্বাচনী সভা, মিটিং, ভিডিও বা গণসংযোগ সরাসরি সম্প্রচার করছেন। অনলাইনে মত প্রকাশ, জনমত গঠন ও প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের একটি বড় অংশ সক্রিয় রয়েছে এসব প্ল্যাটফর্মগুলোতে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থীর মতামত, প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রম জানতে পারছে। গণতন্ত্র চর্চার নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে এ মাধ্যম। তবে শুধু ইতিবাচক নয়, কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে এইসব মাধ্যমে। গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সংখ্যাও বাড়ছে। ভুয়া একাউন্টের মাধ্যমে বেড়েছে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ রয়েছে তরুণ ভোটার। তারা নিজেদের মতামত প্রকাশে অনেকটা নির্ভরশীল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের দোরগোড়ায় তাদের কার্যক্রম, নির্বাচনী ইশতেহার পোস্ট, লাইভ, ভিডিও মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন। এ মাধ্যম শুধু ইতিবাচক নয়, এর নীতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। অনেক দল বা ব্যক্তি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ভুল, মিথ্যা তথ্য পরিকল্পিতভাবে ছাড়ায়। এআই ভিত্তিক অপ্রপ্রচার ও গুজব মোকাবিলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান মানবজমিনকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটা বড় চ্যালেঞ্জ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে। অসংখ্য মানুষ এই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছেন। সেই জায়গা থেকে একটা বড় ভোটের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব রাখবেই। এবং সেটিকে মাথায় রেখে আমার ধারণা, আমরা সম্প্রতি এর যে প্রবণতা দেখেছি গত কয়েক বছরে পারস্পারিক দ্বন্দ্ব-বিবাদের যে জায়গাটা বা ভোট কালেকশনের চিন্তা ভাবনা, আমরা যদি ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের কথা বলি এটা একটা বড় উদাহরণ হয়ে আছে।
এছাড়াও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানটাও কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়েছে। ওই জায়গা থেকে অনেক বড় একটা ভূমিকা আছে। কিন্তু তারপরও যেটা হয় যে, ট্র্যাডিশনাল বাঙালি মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত বা ভোটব্যাংক যেটা একটি-দু’টি বড় দলের একটি বড় ধরনের মনোজাগতিক প্রভাব আছে। এখন এই প্রভাবটা নতুন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে কতটা পরিবর্তন করা সম্ভব সেটা আসলে ভোটের হিসাব বলে দিবে। এখন হয়তো অনেক কিছু বোঝা যাবে কিন্তু আরও যত সময় ঘনিয়ে আসবে তখন হয়তো আরও ভালো বোঝা যাবে। তিনি বলেন, আগে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না তখন একজন প্রার্থীর বিরোধী শক্তির বা দলের কথা প্রচার করতে হলে লোকমুখে এক একজনের কাছে কথাগুলো যেতো। লোকমুখে একটা পুরো ভোট ব্যাংকে কথা যেই সময় লাগে তার একশ’ ভাগের এক ভাগও সময় লাগবে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি কথা ছড়িয়ে দিতে। অসম্ভব শক্তিশালী একটা মাধ্যম এটি প্রচার বা অপপ্রচারের জন্য। তবে এটির নেগেটিভ জায়গাটা অনেক বেশি আর নেগেটিভ ভাবে শক্তিশালী। এত শক্তিশালী যেটা ওভারকাম করা দুই পক্ষের জন্যই অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ দ্রুত যেকোনো নেগেটিভ কথা ছড়িয়ে যাবে। মানুষতো গুজবে বিশ্বাস করে ফলে গুজবগুলো যখন এতদিন যখন মুখে মুখে ছড়াতে হতো সেটি এখন ডিভাইসের মাধ্যমে সেকেন্ডে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে ভোটারদেরও বড় ধরনের একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে যে, আসলে তারা গুজবে কান দিবে নাকি সত্যকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাবে। ভোটাররা একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে যখন পক্ষ-বিপক্ষ নানান ধরনের অপপ্রচার-প্রচার চলে কোনোভাবেই আমরা কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। এটা সম্ভব কিনা সেটাও কঠিন ব্যাপার একটা কারণ এটা একটা আন্তর্জাতিক বিষয়। এটা সহজ না যে, চাইলেই ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া। আর সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়াটাও আসলে কোনো কার্যকর হবে না- কারণ তখন আবার অন্য ধরনের অপপ্রচার হবে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়, জনগণকে যতটা সচেতন করা যায় ফেসবুক সম্পর্কে। সেক্ষেত্রে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলো একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জিনিসগুলো কতটা সত্য-মিথ্যা সেটি সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে ক্রস চেক করার একটা অভ্যাস জনগণের মধ্যে যেন তৈরি হয়। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারমধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। সেটির অনৈতিক, অগ্রহণযোগ্য বা অযৌক্তিক ব্যবহার। আরেকটি হচ্ছে এআই’র ব্যবহার। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কোনো নীতিমালা নেই। যে যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করছে। যার যা মনে চাচ্ছে সে সেই নামে আইডি খুলছে, ভিডিও-ছবি ছাড়ছে। শিষ্টাচার বহির্ভূত যে কর্মকাণ্ডগুলো চলছে সেটির পিছনে রাজনৈতিক বা কোনো ব্যক্তি প্রসঙ্গগুলো চলে আসছে। বিভিন্ন নামে-বেনামে আইডি রয়েছে সেটি দিয়ে রাজনৈতিক দল, কোনো ব্যক্তিকে ছোট করা এই টর্চারগুলোকে আমরা একটা উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ লক্ষ্য করছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব, প্রোপাগান্ডা, অশ্লীলতা বা রিউমান তৈরি হয়েছে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা স্থাপন করতে দেখিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে, কোনো রাজনৈতিক দলের বা নাগরিক সমাজ এবং জনগণের পক্ষ থেকে এগুলো নিয়ন্ত্রণে কথা বলা উচিত। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশকে বিতর্কিত করা সম্ভব যদি সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের বিনিয়োগ করার মতো কোনো অর্থ বা জনগণ থাকে। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াকে একটা গাইডলাইনের মধ্যে নিলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে এক ধরনের পরিবেশ ফিরে আসবে। যতটুকু বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে, সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে বিরোধ বা বিভাজন তৈরি হয়েছে। অনেক ঘটনা কিন্তু ঘটেছে সোস্যাল মিডিয়ায়, ঘোষণা দিয়ে মারামারি ঘটনায় আহত বা নিহত হয়েছে। আর আমাদের জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তো মানুষের মধ্যে সহিংস আচরণ একেবারে কম না। এই ব্যাপারে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা কেন কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না। নীতিমালা বা নীতিমালার আলোকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু এই পর্যন্ত আমরা অগ্রসরমূলক কোনো ব্যবস্থা দেখছি না। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে নাশকতার, অস্থিরতা সৃষ্টির পরিকল্পনা, নির্বাচনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিকল্পনা করে। কোন দল বা ব্যক্তিকে আক্রমণ করা, অপমান করছে কে বড় কে ছোট দেখছে না। এ ধরনের লড়াই-সংগ্রাম সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কেউ যদি প্রয়োগ করে তবে এর প্রভাবটা কিন্তু আর সোস্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকে না এর প্রভাবটা রাজনীতি, জাতীয় নির্বাচন বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার উপরে প্রভাব পড়ে।
তিনি আরও বলেন, গুরুত্বটা সবচেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে বা নির্বাচন সংক্রান্ত, রাজনৈতিক দল বা কোনো জনগণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় বেড়েছে গত বছরের ৫ই আগস্টের আগে আন্দোলনের সময় এবং আন্দোলনের পরে। কেউ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে, পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ নষ্ট করে তবে সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা অনেকে খতিয়ে দেখেন না, ভিডিও বা ছবি দেখে বিশ্বাস করছেন। সে অনুযায়ী দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে। দায়িত্বশীলদের এ ধরনের মাধ্যমগুলোকে যথাযথ ভাবে মনিটরিং করে সেখান থেকে তথ্য বা উপাত্ত গ্রহণ করে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। একটা মনিটরিং টিম থাকা প্রয়োজন। তারা সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্য, ছবি, ভিডিও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এবং যেগুলো ফেক বা যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই সেগুলো আইডেন্টিফাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের যে এক্সপার্ট টিম রয়েছে তাদের সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে না ঘটে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার যথাযথ পরিচালনা ও এখনো নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে একটা ঝুঁকি থেকে যাবে।
সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনে পুলিশ আরও কঠোর হবে এবং এ মুহূর্তে পুলিশ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে দেড় লাখ পুলিশকে পেশাগত দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হবে। আইজিপি বলেন, আমরা ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ, ভোটিং, নির্বাচন কেন্দ্রের বিধি-বিধান শেখানো হবে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনে ১ লাখ ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন হবে। গত নির্বাচনে ছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩/৪শ’ বেড়েছে। পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা গত জুন মাস থেকে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় একটি মডিউল তৈরি করে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিন ধাপে ২২০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে। তারা সারা দেশে আগামী ৫ই অক্টোবর থেকে দেশের ১৩০টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একযোগে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করবেন। আগামী ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে আশা করি আমরা দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হবো। এই প্রশিক্ষণে অডিও, ভিডিওসহ সমস্ত বিধি-বিধান, বডিঅন ক্যামেরার ব্যবহার অত্যাধুনিকভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। অস্ত্রের নীতিমালা মেনে অস্ত্র ব্যবহার হবে। আমরা যে নির্বাচনে প্রশিক্ষণের মডিউল তৈরি করেছি সেটা নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নিয়েই করেছি। সব বিধিমালা নিয়ে তাদের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের নিজস্ব বিধিমালা নিয়েই প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাইবার বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা মানবজমিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের সামনে নতুন যে চ্যালেঞ্জ আসবে ফেক নিউজ এবং এআই রিলেটেড যে কোনো অডিও অথবা ভিডিওকে কেন্দ্র করে। সেক্ষেত্রে নাগরিকদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে সিটিজেন জার্নালিজমের ক্ষেত্রে। কোনো নিউজ যখন ছড়িয়ে পড়বে সেটি যাতে তারা না ছড়ায় বা শেয়ার বা লাইক না করে।
ডিএমপি’র অধ্যাদেশে ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী আইনে আছে, যে কোনো ভুয়া নিউজ বা বিতর্কিত কোনো নিউজ যেটা ব্যক্তি, ধর্ম ও সংগঠনদেরকে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করে সেক্ষেত্রে লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করলে কিন্তু প্রচলিত আইনে সে এই আইনের মধ্যে পড়ছে। এবং এটার জন্য বিটিআরসি’র একটা সুনির্দিষ্ট কমিটি আছে। আমাদের দেশে দুঃখজনক হলেও সত্যি তেমন কোনো উদাহরণ নেই কেউ গ্রেপ্তার হয়ে তার জেল-জরিমানা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু আইনে আমাদের এই অবস্থানটা স্পষ্টভাবে বিদ্যমান। তিনি বলেন, যেকোনো প্রকার মানহানিকর বক্তব্য এবং বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা তৈরি যেকোনো রকমের কন্টেন্ট যদি কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ার করে তাহলে সেটা প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার, জেল-জরিমানার সম্মুক্ষিণ হবে। এখন দেশে পরিবর্তিত অবস্থায় সাইবার পেট্রোলিংটাকে আরও উন্নততর করতে হবে। জেলা পর্যায় যে সাইবার টিম আছে সেই টিমগুলোকে ওপেন সোর্সিং ইনটেলিজেন্টস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে লোকাল সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে যে সকল কনটেন্ট ক্রিয়েটররা আছেন, যারা এ জাতীয় বক্তব্যগুলো প্রদান করে থাকেন তাদেরকে সার্ভেলেন্সের মাধ্যমে সতর্ক করে দেয়া। এবং যেকোনো প্রকার ভুয়া কনটেন্ট হলে যাচাই-বাছাই এবং সন্দেহ হলে ফেসবুকে রিপোর্ট করতে হবে।