Image description

লক্ষীপুর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকারের বিরুদ্ধে ঘুষ ছাড়া ফাইলে সই না করার অভিযোগ উঠেছে। এর পাশাপাশি এক ঠিকাদারকে হেনস্তা করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ৪টি রাস্তার কাজের বিল উত্তোলনের জন্য গেলে প্রকৌশলী ২০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার আবু ছিদ্দিকের কাছে। পরে ১০ হাজার টাকা দিলে প্রকৌশলী তার ফাইলে বিলের জন্য সই করেন। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে পাওয়া ৪টি কাজের বিল ও বাকি ৩টি কাজ বুঝে নিতে গেলে প্রকৌশলী নাজিমুল ওই ঠিকাদারকে হেনস্তা করেন। একপর্যায়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে চেয়ার থেকে মেঝেতে ফেলে দেন। পরে সেখান থেকে তিনি হিসাবরক্ষকের রুমে গেলে সেখানে গিয়ে নাজিমুল তাকে বের করে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। 

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ‘লক্ষীপুর জেলা পরিষদে প্রকৌশলীই ঠিকাদার’ শিরোনামে আমাদের সময় পত্রিকার শেষ পাতায় একটি সংবাদ প্রচার হয়। 

সংবাদটি দেখে প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রামগঞ্জের ঠিকাদার নজরুল ইসলাম জিএস বলেন, ‘সাংবাদিক সাহেব, এই প্রকৌশলী মসজিদের বিল থেকেও টাকা খায়। তার অত্যাচারে আমি জেলা পরিষদে এখন টেন্ডার দিই না। এই লোক ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে আমাকে বলেন, বসেন, আমি নামাজ পড়ে আসি।’ 

এদিকে ইসমাইল হোসেন বাপ্পী নামে একজন ঠিকাদার জানান, এই প্রকৌশলী ঘুষ ছাড়া কিছু বুঝেন না।

আবু ছিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আমি জেলা পরিষদের লাইসেন্স করি। ২০২৪ সালের ২১ জুলাই ই-জিপিতে দরপত্র দাখিল করে ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় ৭টি রাস্তার কাজ পাই। ৬ মাস প্রকৌশলীর পেছনে ছুটে অনেক হয়রানির শিকার হয়ে ৪টি কাজ বুঝে পাই। এর আগে তিনি আমার কাছ থেকে কাজগুলো কিনতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি বিক্রি না করায় তার কাছে গিয়ে হয়রানির শিকার হই। কাজ শেষে তিনি আমার বিল আটকে রেখেছেন। বিল ও বাকি ৩টি রাস্তার কাজ বুঝে নিতে তার কার্যালয়ে গেলে গত ১৭ মার্চ তিনি আমাকে হেনস্তা করেন। চেয়ার থেকে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে সেখান থেকে হিসাবরক্ষকের রুমে গেলে তিনি আমাকে সেখান থেকেও বের করে দেন।’

আবু ছিদ্দিক আরও বলেন, ‘বাকি কাজের কথা বললে প্রকৌশলী আমাকে কাজ না করেই বিল করে জমা দেওয়ার জন্য বলেন। এসব ঘটনায় পরদিন জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক রাজীব কুমার সরকারের কাছে আমি লিখিত অভিযোগ করি। তিনি ৩ দিনের মধ্যে ঘটনাটি মীমাংসা করা জন্য নির্দেশ দেন। প্রকৌশলী আমার বিলের জন্য ফাইলে সই করতে ২০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন। পরে তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমার ৩টি কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।’

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরও তিনজন ঠিকাদার জানান, সহকারী প্রকৌশলীর কাছে সকল ঠিকাদার এবং কর্মকর্তারা জিম্মি। এই সুযোগে প্রকৌশলীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা বিশ্বস্ত কয়েকজন ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। 

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী প্রকৌশলী নাজিমুল হক সরকার বলেন, ‘আবু ছিদ্দিকের অভিযোগ সত্য নয়। উনি উত্তেজিত হয়ে পড়ায় তাকে চলে যেতে বলেছি। উনার কাজের বিল দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩টি কাজের লোকেশন খুঁজে পাচ্ছি না।’ 

লক্ষীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুন নাহার বলেন, ‘ঠিকাদার আবু ছিদ্দিকের বিষয়টি নিয়ে আমরা বসেছি। এরকম কোনো অভিযোগ তিনি আমাকে করেননি। তাকে হেনস্তার বিষয়টি সত্য নয়। প্রকৌশলীর কাছে কাজ বিক্রি বা ঘুষের বিষয়টিও তিনি আমাকে জানাননি।’

ঠিকাদারের লাইসেন্স ব্যবহার করে ৩টি কোটেশনে প্রকৌশলী নিজেই ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা পরিষদ ভবনের গেইট ও নিরাপত্তা দেওয়াল নির্মাণ কাজ করার বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার কোনো অভিযোগ করেননি।’

আমাদের সময়