Image description

দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ২০১৯ সালে রাজনৈতিক সরকারের আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচিতদের সাফল্য নিয়ে অনেকের মনেই ছিল সংশয়। এরপর চব্বিশের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন হলে শিক্ষার্থীরা ফের স্বপ্ন দেখতে থাকেন সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের এবং নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তনের। সে প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের ডাকসুতে নির্বাচিতদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিবর্তনের স্পৃহা লক্ষ্য করা গেছে। কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ও ধরন নিয়ে প্রশ্নও উঠছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে।

সম্প্রতি ওঠা এমনই এক বিতর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হকার ও ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ অভিযান। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ডাকসুর কিছু নেতা রীতিমতো ‘জেরা’ করছেন হকার ও খাবারের দোকানিদের। এক ভিডিওতে দেখা যায়, ডাকসুর এক সদস্য বাদাম বিক্রেতাকে প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি এখানে দোকান দিয়েছেন, কোনো পারমিশন নিয়েছেন?’ ভীত কণ্ঠে দোকানি উত্তর দেন, ‘না, বাবা।’ এরপর ওই নেতা বলেন, ‘আপনাকে পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে যান।’ 

ডাকসু নেতাদের বিভিন্ন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি অংশের প্রশ্ন, ডাকসুর নেতারা কি এখন ‘মোরাল পুলিশিং’-এ নেমেছেন?  শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কি ডাকসুর নির্বাচিত কয়েকজন নেতার? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের? যদিও এর ব্যাখ্যায় ডাকসু নেতাদের বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা। এটা শিক্ষার্থীদেরই দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ডাকসু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, আবাসন সংকট, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, মানহীন খাবার পরিবেশন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতের চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অপর্যাপ্ত শিক্ষার পরিবেশ এবং রাজনৈতিক একাধিপত্য ও জবরদস্তিমূলক পরিবেশসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাবি শিক্ষার্থীদের যেন একমাত্র প্রশ্ন ছিল— ‘কবে হবে এসব সমস্যার সমাধান?’ ডাকসু নির্বাচনের পর ছাত্র প্রতিনিধিরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাদের কার্যক্রম বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও নিয়ম মেনে হচ্ছে না বলে কেউ কেউ দাবি করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্ছেদ অভিযান

বিশেষ করে, ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়ায় মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশনের শাস্তিস্বরূপ মালিকদের সঙ্গে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের রূঢ় আচরণ ও জরিমানা করা, সরাসরি নিজেদেরই ভবঘুরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা ও আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে ডাকসুর ফান্ডের হিসেব চাওয়ার সময় ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণসহ নানা বিষয়ে ডাকসুর প্রতিনিধিদের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। কেউ কেউ তাদের এমন কর্মকাণ্ডকে ’মব’ বা ‘ম্যুরাল পুলিশিং’ বলেও অভিহিত করছেন। তাদের দাবি, ছাত্র প্রতিনিধির দায়িত্ব হিসেবে তারা এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষকে বড়জোর আবেদন জানাতে বা চাপ প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু নিজেরা প্রশাসনিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারেন না। 

ডাকসুর অন্যতম কাজ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা। আর মাদক ও অবৈধ দোকান মুক্ত একটা নিরাপদ পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার নিশ্চিত করতেই প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি আমরা, প্রশাসনকে সহায়তা করছি। আর এটা নতুন কিছু না।- এবি জুবায়ের, ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধি

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, মাদকাসক্ত, হকার ও অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছেন ডাকসুর প্রতিনিধিরা। গত ২৪ অক্টোবর থেকে বৃহৎ পরিসরে তাদের এ কার্যক্রম শুরু হয়। সর্বশেষে গত সোমবার ডাকসু সদস্য সর্ব মিত্র চাকমাকে মধুর ক্যান্টিনের খাবারের মান তদারকির নামে প্রশাসনিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে। এছাড়া, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের ও মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদসহ অনেককেই এ কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে দেখা যায়। 

গত ২৬ অক্টোবর হল সংসদ এবং ডাকসুর অতীতের সকল ফান্ডের হিসাব দিয়ে বাজেট বুঝিয়ে দেওয়া, নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে টোকাই, ভবঘুরে, মাদকমুক্তকরণ এবং ট্রেজারার অফিসে কর্মরত ডেপুটি রেজিস্ট্রার রুহুল আমিনসহ সকল ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপসারণ করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে রেজিস্ট্রার ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে ডাকসু নেতাদের বাক-বিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায়, যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এর আগে, গত ১২ সেপ্টেম্বর মাস্টারদা সূর্য সেন হলের এক দোকানে এক কেজি টেস্টিং সল্ট মজুত রাখার অভিযোগে ওই হল সংসদের নব নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) আজিজুল হক দোকানদারকে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের বেশ আলোচনা ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এমনকি জরিমানা করা ওই প্রতিনিধি এ কাজের প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়েও উঠে প্রশ্ন। 

যদিও ডাকসু নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেড অনুযায়ী কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদেরই সমর্থন রয়েছে। ছোট্ট একটা অংশ; যারা আমাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করেন তারা নানাভাবে বিরোধিতা করার চেষ্টা করছেন। 

ডাকসুর নেতারা গিয়ে হকারদের উপর চড়াও হয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজ। এ জাতীয় কিছু করতে হলে প্রশাসন করবে। এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব এসব বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি নীতিমালা তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য করা। কাজেই যেভাবে হকারদের গায়ে হাত তুলেছেন এসব নেতারা, তারা অন্যায় করেছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। এই কাজ করার এখতিয়ারই তাদের নেই।- ড. কাবেরী গায়েন, অধ্যাপক, গণযোগাযাগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

এ বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়ে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ডাকসুর নেতারা গিয়ে হকারদের উপর চড়াও হয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজ। তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হোক। সবচেয়ে বড় কথা তাদের ফাটাকেষ্ট হয়ে উঠবার ক্ষমতা দেয়া হয়নি।’ তিনি বলেন, এ জাতীয় কিছু করতে হলে প্রশাসন করবে। এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব এসব বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি নীতিমালা তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য করা। কাজেই যেভাবে হকারদের গায়ে হাত তুলেছেন এসব নেতারা, তারা অন্যায় করেছেন। এটা বন্ধ করতে হবে। এই কাজ করার এখতিয়ারই তাদের নেই।

রমনা কালীমন্দির গেট সংলগ্ন ‘দার্জিলিং মোমো’ নামে এক ভাসমান দোকানি মো. মহীনুদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, তারা যখন আসছিলেন, আমরা অনেকে সরে যাচ্ছিলাম। তারপরও আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। আমি দোকান নিয়ে সরে যাচ্ছিলাম, তবুও আমার দোকানটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়ে আহত হয়েছিলেন
প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যও

উচ্ছেদের ঘটনার প্রতিবাদে গত ২৫ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল করেছেন উচ্ছেদ হওয়া হকার ও দোকানদাররা মিছিল করেন ক্যাম্পাসে। মিছিলে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোকে সংহতি জানিয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে। এরপর ক্যাম্পাসে নিবন্ধনবিহীন দোকানদার ও হকারদের মিছিলের প্রতিবাদে রাত ১১টার দিকে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়েরসহ বিভিন্ন হল সংসদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিবাদ জানিয়ে প্রক্টর অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন। পরে রাত সাড়ে ১১টায় প্রক্টরের অফিসে কয়েকজন সহকারী প্রক্টরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং হকারদের সঙ্গে মিছিলকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ কয়েকটি দাবি জানান। এ সময় হকারদের নিয়ে মিছিলকারী শিক্ষার্থীদের ‘শোকজ’ করা হবে বলে জানান সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম। 

নিজেদের বিরুদ্ধে উঠা নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগের জবাবে সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ডাকসুর অন্যতম কাজ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা। আর মাদক ও অবৈধ দোকান মুক্ত একটা নিরাপদ পরিবেশ শিক্ষার্থীদের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার নিশ্চিত করতেই প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করছি আমরা, প্রশাসনকে সহায়তা করছি। আর এটা নতুন কিছু না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম প্রায়শই এমন অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু হওয়ার পরে আমরা জাস্ট আমাদের অধিকার একটা নিরাপদ ক্যাম্পাস পেতে প্রশাসনকেই সহায়তা করছি। এতে করে যাদের কমিশন বাণিজ্য ও মাদকের সিন্ডিকেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তারাই উল্টো ন্যারেটিভ দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার কাজ আমরা চালিয়ে যাব।

শুরুটা হয়েছিল সূর্য সেন হলে জরিমানা করার মধ্য দিয়ে  

ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা বলেন, আমরা সবাই জানি, ডাকসুর আলাদা একটি গঠনতন্ত্র আছে, নিয়মনীতি মানার জন্য। তারপরও আমাদের সর্বাগ্রে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেডকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্র্যাক্টিক্যাল ও থিওরি এই দুটি বিষয়ের কোনটিকে প্রাধান্য দেব সেটা পরিবেশ,পরিস্থিতি ও সময়ের প্রয়োজনে বিবেচ্য। তবে বৃহৎ স্বার্থে শিক্ষার্থীদের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে ভালোর জন্য আমি যতটুকু পারি করে যাব। দ্বিতীয়ত, আমি সবসময় ডাকসুর সদস্য হিসেবে নিজেকে গন্য করব না। নিজেকে শিক্ষার্থী হিসেবে গণ্য করলে একজন শিক্ষার্থী কখনো চাবে না যে, ক্যাম্পাসে মাদকের কারবারি চলুক। সুতরাং একজন শিক্ষার্থী হিসেবে যেমন আমার কনসার্ন আছে, ঠিক তেমনই ছাত্র প্রতিনিধি বা ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবেও কনসার্ন আছে। 

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় না যে, শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা যা করছি তা নিয়ম ভেঙ্গে করা হচ্ছে। আর বিষয়টা তো এমন নয় যে, আমাকে নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতেই হবে। ডাকসু এমন একটা প্লাঠফর্ম যে, সব অনিয়ম ও গোড়ামি ভাঙার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন সেটাই করতে হবে। 

ম্যুরাল পুলিশিং বা মবের অভিযোগের জবাবে সর্ব মিত্র চাকমা বলেন, বিভিন্ন মহলের বিপুলসংখ্যক লোক এসব অভিযোগ করছে না। করছে একশ্রেণির লোক, যারা সংখ্যায় খুবই কম এবং যারা শিক্ষার্থীদের কল্যাণ চায় না। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এপ্রিশিয়েট করছে, এমনকি বাইরের লোকও এপ্রিশিয়েট করছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন মাদক কারবারি থাকবে? দোকানে কেন সিন্ডিকেট থাকবে? আমরা তো এগুলো সমাধানের জন্যেই কাজ করছি। 

ডাকসু প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে দায়িত্বগ্রহণ করেছে। আর নিরাপদ ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদেরই প্রতিদিনের চাওয়া। তাদের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েই পুলিশ-প্রক্টর অফিস ও এস্টেট অফিস ভবঘুরে ও মাদকসেবী উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে; যেখানে ডাকসু নেতারাও ছিল। কিন্তু একটা পক্ষ এটাকেই বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে নেমেছেন, যাদের চাওয়া অনিরাপদ ক্যাম্পাস।- সাদিক কায়েম, ডাকসু ভিপি

কেন দরকার হলো উচ্ছেদ অভিযান?
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছেন, ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের। এই চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয় আরেকটি পুরোনো সমস্যা। ক্যাম্পাসে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ বহুদিনের। এমনকি প্রক্টরিয়াল টিমের কিছু সদস্যকেও এসব অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তদন্তে সত্যতা মেলায় ২০২৩ সালে প্রক্টরিয়াল টিমের একজনকে বহিষ্কার এবং ছয়জনকে সতর্ক করে প্রশাসন।

পরবর্তী সময়ে অবৈধ দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আবারও নতুন করে তাদের উপস্থিতি দেখা যায়। এবার সেগুলো নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক ডাকসু নির্বাচনে বেশিরভাগ প্যানেল ও প্রার্থী তাদের ইশতেহারে বহিরাগত যান নিয়ন্ত্রণ ও ভাসমান হকার-ভবঘুরেদের উচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি দেন।

জয়ী প্যানেলের ইশতেহারে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, ক্যাম্পাসের সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বাহিরের লোকজন ও যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। অন্যদিকে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল প্রস্তাব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে গ্রিন, ইয়েলো ও রেড—এমন তিনটি জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা।

যা বলছে প্রক্টর অফিস ও ডাকসু নেতারা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকসু হোক আর যা-ই হোক, ছাত্র ছাত্রই। ছাত্রদের প্রক্টরিয়াল শৃঙ্খলার কোনো কাজে লাগানোই আমাদের টার্গেট নাই। ডাকসুকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি না। উচ্ছেদ কার্যক্রমে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ বলেন, শিক্ষার্থীরা চাওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ কাজগুলো চলছে, তার মানে প্রশাসন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না। সেখানে ডাকসুর সুপারভাইজিং লাগবে নিশ্চিতভাবে। ডাকসু যদি ক্যাম্পাস নিরাপদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্বেচ্ছায় কাজ করে, তাহলে সমস্যা কোথায়, বাধা কোথায়? ডাকসুর দায়িত্বই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের ভয়েস এডভোকেসি করা।

ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম

ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা এবং পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির প্রত্যাশা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দিয়ে ডাকসুর প্রতিনিধি বানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস, এস্টেট অফিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ক্যাম্পাসকে ভবঘুরে, মাদকসেবী এবং অবৈধ স্থাপনা থেকে মুক্ত করতে অভিযান পরিচালিত হয়েছে, যেখানে ডাকসু নেতৃবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধান করেছে। কিন্তু একটি পক্ষ এই মহৎ উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে বিরতিহীনভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সাদিকের অভিযোগ, এই অপতৎপরতার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পাসকে পূর্বের মতোই অনিরাপদ রেখে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট পরিচালনা করা এবং অবৈধ দোকান থেকে চাঁদাবাজির পথ পুনরায় উন্মুক্ত রাখা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) তাদের এই অপতৎপরতা সফল হতে দেবে না।