আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান ও তার সহযোগী আবুল কালাম আজাদ, নয়া তালুকদারসহ একাধিক সন্ত্রাসী অপহরণ শেষে বর্বর নিযাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পানি খাইতে চাইলে প্রস্রাব খাইয়ে দেয় তারা এমন অভিযোগ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের। সন্ত্রাসীরা তার সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে থাকা ৮০ হাজার টাকা এটিএম কার্ড দিয়ে তুলে নিয়েছে। এ ঘটনার ৭ দিন পর ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম আমতলী থানায় সোমবার রাতে মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল উদ্ধার করেছে। ঘটনা ঘটেছে গত ২১ অক্টোবর রাতে।
জানা গেছে, বরগুনা সদর উপজেলার ধুপতী গ্রামের ইউনুস আলী মীরের ছেলে মোঃ রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে আমতলী উপজেলার চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর আমতলী উপজেলা যুবলীগ সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে তিনি বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে এমন অভিযোগ শিক্ষক রফিকুল ইসলামের। গত ২১ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ নয়া তালুকদার ও তাদের সহযোগীরা বিদ্যালয় হোস্টেল থেকে শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ওই রাতে তারা ঘোপখালী এলাকায় নয়া মিয়ার কলা বাগানে নিয়ে বেঁধে লোহার রড দিয়ে রাতভর অমানষিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের এক পর্যায় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম পানি খাইতে চাইলে তাকে প্রস্রাব খাইয়ে দেয়। রাতভর নির্যাতন শেষে তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। নির্যাতিত শিক্ষক টাকা দিতে অস্বীকার করলে পুনরায় তাকে নির্যাতন করে এমন অভিযোগ শিক্ষকের। নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি তার সোনালী ব্যাংক হিসাব নম্বরে ৮১ হাজার টাকা আছে বলে তাদের কাছে স্বীকার করে। ওই সময় তার সাথে থাকা এটিএম কার্ড এবং পিন নম্বর নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
সন্ত্রাসীদের অমানুষিক নির্যাতনে তার কান, মুখমন্ডল ও চোখসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়। শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে নির্যাতন শেষে ওই দিন ভোররাতে তাকে বিদ্যালয়ের হোস্টেলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে তারা বিদ্যালয় হোস্টেলের তার কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ ও তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল নিয়ে যায়। ওই সময় তাকে তারা শাসিয়ে যায়, এ বিষয়ে কাউকে জানালে তাকে হত্যা করে পায়রা নদীতে ফেলে দিবে। পরিবারতো দূরের কথা কেউ হদিস পাবে না। প্রাণ ভয়ে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। ২২ অক্টোবর শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। ঘটনার ৭ দিন পর শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আমতলী থানায় মিজানুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা ও চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন আবুল কালাম আজাদ, নয়া মিয়া, তোতা তালুকদার ও সেলিম তালুকদার।
মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল চরকগাছিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমতলী ও তালতলী থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
নির্যাতিত শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, বিদ্যালয়ে চাকুরী নেয়ার পরপরই মিজানুর রহমান আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে যুবলীগ নেতা মিজান। ২১ অক্টোবর রাতে আমাকে বিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসী নয়া তালুকদারের কলা বাগানে নিয়ে বেঁধে অমানষিক নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের এক পর্যায় আমি পানি খেতে চাইলে আমাকে প্রস্রাব খাইয়ে দেয়। তিনি আরো বলেন, ওই রাতে আমাকে নির্যাতন শেষে হোস্টেলে ফেলে রাখে। ওই সময় তারা আমার কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ, মোটর সাইকেল এবং সোনালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড নিয়ে যায়। ওই এটিএম কার্ড দিয়ে ৮০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, তারা আমাকে হত্যা করে পায়রা নদীতে ফেলে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমি সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।
চরকগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, আমার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসী মিজানুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদসহ তাদের সহযোগীরা তুলে নিয়ে অমানষিক নির্যাতন করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাশেদ মাহমুদ রোকনুঁজ্জামান বলেন, আহত শিক্ষকের শরীরের চোখ মুখ মন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল
আমতলী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে। তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যহত আছে।