গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর টিএন্ডটি কলোনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী (৬০) নিজেই নিজের অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন-এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি)। একদিন নিখোঁজ থাকার পর পঞ্চগড়ে 'উদ্ধার' হওয়া এই আলেম পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ও ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেছেন, তিনি নিজেই ইচ্ছায় টঙ্গী থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত গিয়েছিলেন এবং গুমের পুরো ঘটনাটি সাজিয়েছিলেন নিজের পরিকল্পনায়।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) জিএমপি সদর দপ্তরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান।
২২ অক্টোবর সকালে টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় ‘অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অপহরণের’ অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, সকাল ৭টার দিকে ৪-৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে অপহরণ করে নির্যাতন চালায়, পরে পঞ্চগড়ে রাস্তার পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি উদ্ধার হন বলেও দাবি করেন।
অতিরিক্ত কমিশনার তাহেরুল হক জানান, তদন্তে টঙ্গী থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার পর মুফতি মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটতে হাঁটতে পূবাইল এলাকার দিকে যাচ্ছেন। কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা অপরিচিত ব্যক্তির উপস্থিতি ফুটেজে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে তিনি ঢাকার সোবাহানবাগ এলাকায় অবস্থান করছেন। দুপুর ২টার দিকে তিনি নিজেই গাবতলী থেকে 'শ্যামলী পরিবহন' এর পঞ্চগড়গামী বাসের টিকিট ক্রয় করে ই-১ সিটে বসে যাত্রা করেন। বগুড়ার শেরপুরে পেন্টাগন হোটেলে যাত্রাবিরতির সময়ও সিসিটিভিতে তার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সকল প্রমাণ সামনে আনার পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মুফতি মুহিব্বুল্লাহ স্বীকার করেন যে, তিনি নিজেই পঞ্চগড়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই। মন চাইল গাবতলী যাই, তারপর টিকিট কেটে পঞ্চগড় চলে যাই। কেন করেছি, কিছু বুঝতে পারিনি। যা মাথায় এসেছে, তাই করেছি। তিনি আরও জানান, পঞ্চগড়ে পৌঁছে ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, জামা-কাপড় খুলে ফেলেন এবং অচেতন অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকেন। পরে স্থানীয়রা তাকে দেখতে পায়।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ইসলামী বক্তা আতাউর রহমান বিক্রমপুরীর ফেসবুক লাইভে যোগ দিয়ে মুফতি মুহিব্বুল্লাহ নিজেই স্বীকার করেন, আমি নিজেই সব করেছি। নিজের পরিকল্পনায় পঞ্চগড়ে গিয়েছি, গুমের অভিনয় করেছি। তোমরা আর এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি করো না। লাইভ চলাকালে তার মেয়ে ও ছোট ছেলে উভয়েই নিশ্চিত করেন যে, তাদের বাবা নিজের ইচ্ছাতেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
জিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মুফতি মুহিব্বুল্লাহ নিজের পরিকল্পনায় নাটকটি সাজিয়েছেন। কেন এমন করেছেন, তা তদন্তাধীন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।