Mohammad Imran Hossain (মোহাম্মদ ইমরান হোসেন)
সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে এতই উঁপচে পড়া জনপ্রিয় হয়েছেন যে তাঁর ব্যাপারে কোনো কিছু লিখতে ভয় হয়। কি ডান কি বাম তিনি সকলের প্রিয়ভাজন । কিন্তু জুলাই বিপ্লবের বছর না যেতেই, রক্তের দাগ না শুকাতেই আওয়ামী সফট পাওয়ার হিসেবে কত সুক্ষ্মভাবে তিনি বিপ্লবকে আঘাত করতে পারলেন , কত সুক্ষ্মভাবে তিনি ভারতীয় ফ্যাসিবাদি ন্যারেটিভকে রক্তস্নাত ঢাকায় ফেরি করতে পারেন তা শুনেই অনেকটাই হতাশ , আবার আতঙ্কিতও বটে। অনেকক্ষণ ভাবার পর আমার সামনে দু’টি পর্যবেক্ষণ সামনে এসেছে|
প্রথমত; নিউ ইয়র্কের মিডিয়া পাড়ায় একটি কথা চাউর হয়েছিল আওয়ামী পয়সায় খালেদ মহিউদ্দিন ডয়েচে ভেলে ছেড়ে নিউ ইয়র্কে পাঁড়ি জমিয়েছেন নতুন মিডিয়া করবার জন্য। আমার এখন মনে হচ্ছে- চাউর হওয়া কথার সত্যতা মিলতে শুরু করেছে। আমি ব্যাক্তিগত আলাপে অনেককেই বলেছিলাম ডয়েচে ভেলে ছেড়ে খালেদ মহিউদ্দিন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার অনলাইন প্লাটফর্মে কাজ করতে এসেছেন? এটি বিশ্বাসই হচ্ছে না। নিউ ইয়র্কের এক সহকর্মী বললেন মাসে যেখানে অন্য সাংবাদিকরা ১৬০০ ডলার পেতে কষ্ট করতে হয় সেখানে খালেদ মহিউদ্দিন ১০ হাজার ডলার পেলে কেন সে নিউ ইয়র্কে আসবে না। আর এখানেই ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। যেখানে ঠিকানা সাপ্তাহিক ফ্রি পত্রিকা হওয়ায় নিজেই যখন কয়েকটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সাথে প্রতিযোগিতা করছে টিকে থাকবার জন্য, সেখানে খালেদ মহিউদ্দিনকে যুক্তরাষ্ট্রে ৩ হাজার ডলারের একটি বাসা , সাথে মাসে ১০ হাজার ডলার বেতন দিয়ে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা কেন তাঁকে সাংবাদিক হিসেবে নিয়োগ দেবে। যেখানে পত্রিকাটির অন্যসব সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের বেতন সবমিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি না। আপনি হয়তো বলতে পারেন, পত্রিকা মনে করেছে, তাই দিচ্ছে এখানে আমার প্রশ্ন তোলার কি আছে। কিন্তু নিউ ইয়র্কে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার আয় কত এবং কিভাবে আয় করতে হয় তা কারো অজানা নয়। সুতরাং এইযে বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে এটির উতস হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অর্থ । অন্যথায় এটি ইনভেষ্টিগেশনের দাবী রাখে।
দ্বিতীয়ত; এ মুহুর্তে দেশে গিয়ে খালেদ মহিউদ্দিনের ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাক্ষাতকার নিতে তিনি যে জেলে যাবার ঝুঁকিও নেবেন বলে মত প্রকাশ করেছেন - এটি হচ্ছে তাঁর মৌচাকে ঢিল মারার কৌশল। যাতে করে তিনি দেশে হামলার স্বীকার হন কিংবা মামলার মূখোমূখি হন। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রে মিলবে স্থায়ী আশ্রয়। একঢিলে অনেক পাঁখি মারার কৌশল। সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিন শুধু এখানেই থামেন নি তিনি জুলাই বিপ্লবকে , হাসনাত , সার্জিসদের যে অঙ্গভঙ্গিতে ব্যঙ করেছেন এর পর তাঁকে ফ্যাসিষ্ট এর সহযোগী ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে। এটি প্রথমেই ট্রেইস করেছেন প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ । তিনি টকশোতে খালেদ মহিউদ্দিনকে ধমকের সুরে বলেছিলেন , আপনার কথাতো ফ্যাসিষ্টদের সাথে মিলে যায়। দুনিয়া জুড়ে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের নীতিমালা হচ্ছে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম গনতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলবে। যেখানে খালেদ মহিউদ্দিনের ষ্ট্যান্ড হবার কথা ছিল জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার সেখানে তিনি প্রধান আসামীর সাক্ষাতকার নিতে মরিয়া। যাতে তাঁর সাক্ষাতকারের পর আরো দেশে গুলযোগ লাগে।
খালেদ মহি্উদ্দিন যদি এতই পেশাদার সাংবাদিক হয়ে থাকেন তিনি কেন ডয়েচে ভেলেতে তারেক রহমানের সাক্ষাতকার প্রচার করেন নি। ডয়েচে ভেলে তো বাংলাদেশি কোনো মিডিয়া ছিল না। ওই সময় তাঁর সাংবাদিকতার এথিকস কোথায় লুঁকিয়ে ছিল।
এখন আসি মূল আলাপে খালেদ মহিউদ্দিনরা ফ্যাসিবাদের কণ্ঠস্বর এই জন্যই হয় কারণ এতে তাদের জীবিকায় টান পড়ে না। বরং একের পর এক আসে তাদের পেছনে বড় বড় পুঁজি। আর এ পুঁজি যে শুধু আওয়ামী লীগ ঢালে তা নয় এতে বিএনপি জামাতও জাতে উঠার জন্য শরিক হন। বিএনপি জামাত মনে করে জাতীয়তাবাদীরা মিডিয়াটা আসলে বুঝে না। সব বুঝে বাম ও আওয়ামী পন্থীরা। বিএনপির আমলে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সংবাদ ভিত্তিক চ্যনেল সিএসবির নেতৃত্বে কারা ছিলেন, কিংবা জুলাই বিপ্লবের পর চ্যানেল ওয়ানের নেতৃত্ব কাদের হাতে গেঁছে তা দেখলেই এর উত্তর ঠিকঠাক মত পেয়ে যাবেন। জুলাই বিপ্লবের পর জাতীয়তাবাদী ধারার কিছু সাংবাদিক কয়েকটি গণমাধ্যমের দায়িত্ব নিয়েছেন ।এখন তাদেরকে সরাতে মরিয়া জাতীয়তাবাদী ইসলামি মূলবোধের লোকজনেরা। ঝেঁকে বসা ফ্যাসিবাদিরা বিভিন্ন কায়দায় প্রশ্ন তুলছেন যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ওর তো হেড অব নিউজ হবার এক্সপেরিয়েন্স নেই। আরে ভাই হেড অব নিউজ হবার সুযোগ পাইলেই না তাঁর এক্সপেরিয়েন্স হইত।
এক বছর গেছে , আরো এক বছর যেতে দেন তাঁর পরই না যাচাই করবেন জাতীয়তাবাদীরা পারছে কিনা। বাংলাদেশ এমন একটি যায়গা যেখানে ফ্যাসিষ্টদের পক্ষে কথা বললে , মানবাধিকারের বিপক্ষে কথা বললে আপনি প্রগতিশীল সনদ পাবেন। বিনিময়ে চাকুরি যাবার চিন্তা করতে হবে না। কালো টাকার বিশাল বিনোয়োগ চলে আসবে আপনার পেছনে। যাতে আপনি নতুন নতুন মিডিয়া খুলতে পারেন, নেতৃত্ব দিতে পারেন। যেহেতু মিডিয়ার হাতিয়ারটি আওয়ামী পন্হীদের হাতে সুতরাং এর ব্যবহারে বিএনপি জামাতের লোকজন এসব বাকশালী সাংবাদিককে আদরে নম নম। এইতো সেদিন জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফরে বিএনপির মহাসচিব খালেদ মহিউদ্দিনকে একান্তে সাক্ষাতকার দিয়ে প্রীত হয়েছেন। অথচ দীর্ঘ দিন বিএনপি বীট করার পরও কয়েকটি টেলিভিশনের সাংবাদিকরা মীর্জা সাবের সাক্ষাতের কূল কিনারা করতে না পেরে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখলাম হোটেল লবিতে। এই রুঢ় বাস্তবতার কারণেই বারবার উন্মাদ আর দাম্ভিকদের আস্ফালন দেখতে পাই।ভাল থেকো বাংলাদেশ