চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর দায়িত্বে থাকা বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দায়িত্ব পালনে অনিয়ম ও কার্যক্রমে অনুপস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একইসঙ্গে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চের পর থেকে তিনি যে সম্মানি গ্রহণ করেছেন, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত তার ব্যাংক হিসাবে সম্মানির অর্থ পাঠানো হয়েছিল। সে হিসেবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে।
এর আগে ১৯ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটির সপ্তম সভার সিদ্ধান্ত ও ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬২তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।
২০২৪ সালের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ সভায় দায়িত্ব পালন না করেও দেড় বছরের বেশি সময় বেতন-ভাতা ভোগের অভিযোগ ওঠে মুনতাসীর মামুনের বিরুদ্ধে। সভায় বলা হয়, ২০২৩ সালের ৫ মার্চের পর থেকে তিনি কোনো গবেষণা, প্রবন্ধ বা বক্তৃতা আয়োজনের প্রমাণ দিতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি ছয় মাসে চেয়ারকে কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হয় এবং বছরে অন্তত দুটি প্রবন্ধ রচনা ও চারটি বক্তৃতা আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এসব দায়িত্ব পালনের কোনো তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, জাদুঘর বা রেজিস্ট্রার দপ্তরে পাওয়া যায়নি। পরে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি লিখিত উত্তর দিলেও তাতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ওনার যে চুক্তি ছিল তা তিনি বাস্তবায়ন করেননি, এ ছাড়া সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না উনি। এসব কারণে ওনার বঙ্গবন্ধু চেয়ার থেকে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে টাকা তিনি নিয়েছেন সেগুলো তাকে ফেরত দিতে হবে। তবে এখনো মুনতাসীর মামুনের পক্ষ থেকে কোনো রেসপন্স আমরা পাইনি।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১০তম সিন্ডিকেট সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদ সৃষ্টি করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছরের ১৫ মার্চ তিনি যোগ দেন। ২০২৩ সালের মার্চে তার মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছিল।