মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে মাসুদ বাংলাদেশে এস আলম নামে পরিচিত। ব্যাংক খাতে তার দাপট ছিল পাহাড়তুল্য। এই দাপটে তিনি দেশের ১০টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান একেবারে খালি করে নিয়ে গেছেন দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।
এই পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বার্ষিক বাজেটের চার ভাগের একভাগ প্রায়। এসব ঋণের মধ্যে এস আলম গ্রুপের নামে ৯২ হাজার কোটি টাকা, বেনামে ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং ৩৬ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ‘ইনডিরেক্ট সুবিধা’ বা অন্যান্য উপায়ে নেওয়া ঋণ।
লুট করা অর্থ বিদেশে পাচার করে এস আলম নিজেও পালিয়ে গেছেন। ব্যাংক ঋণের নামে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটে নিয়ে এস আলম যেমন আলোচনায় এসেছেন, তেমনি উলটো আলোচনার ঝড় তুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারকে হুমকি দিয়ে।
আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নিজের মালিকানাধীন ব্যাংক ছাড়াও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়েছেন এস আলম। কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই নিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিপুল পরিমাণ ঋণ নিতে মানা হয়নি ব্যাংকিং নিয়মনীতি।
এসব অর্থের বেশিরভাগ পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এস আলম গ্রুপের অর্থপাচার অনুসন্ধানে যৌথ তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
এস আলম দেশে না থাকায় তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য নিতে পারেনি আমার দেশ। এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিকের কাছে লিখিতভাবে বক্তব্য চাওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেননি।
দুদকের অনুসন্ধান বিষয়ে কথা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, আইনের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ করছে দুদক। শিগগিরই এর ফলাফল জানা যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা আমার দেশকে বলেন, যেসব ব্যাংক এতদিন এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা মুক্ত করা হয়েছে। এটা অনেক বড় কাজ। তার ঋণ অনিয়ম নিয়ে এখনো তদন্ত চলমান রয়েছে।
কী অভিযোগ এস আলমের বিরুদ্ধে
মোহাম্মদ সাইফুল আলম ব্যাংকের ঋণ নিতেন আগে, ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র তৈরি হতো পরে। তার প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে, ঋণ চেয়ে কোনো ব্যাংক ফাইল ফেরত পাঠানোর নজির নেই। বরং ‘আগে টাকা পরে কাগজ’ এই শর্ত প্রযোজ্য ছিল এস আলমের বেলায়।
তার ক্ষমতার জোর ছিল ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা নিজেই। এস আলমের বিরুদ্ধে হাসিনার অনেক মন্ত্রী-এমপি অভিযোগ তুলেও বিফল হয়েছেন। বরং সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এস আলমকে দেশের ভালো ভালো ব্যাংকগুলো দখল করে নেয়ার সুযোগ দিয়েছিল হাসিনা সরকার।
এস আলম যে ১১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে টাকা লোটেন সেগুলো হচ্ছে- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও আভিভা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে এতদিন ৭টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকগুলো তার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। গঠন করা হয় নতুন পরিচালনা পর্ষদ।
ইসলামী ব্যাংক থেকে লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ
একসময় দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকিং নিয়মনীতি পরিপালন, গ্রাহককে সেবা দেওয়া ও আর্থিক সূচকে অন্য সব ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির আকার এতটাই বড় হয়ে উঠেছিল যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হতোÑ ইসলামী ব্যাংক ঝুঁকিতে পড়লে পুরো খাতে ‘পদ্ধতিগত ঝুঁকি’ তৈরি হবে, যা রোধ করা সম্ভব হবে না। বাস্তবে এখন সেই চিত্র ফুটে উঠেছে। এই ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা নাজকু। তারল্য সংকটের সঙ্গে খেলাপি ঋণে হাবুডুবু খাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে একটি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বৃহৎ এই ব্যাংকটি দখল নেয় এস আলম গ্রুপ। শেখ হাসিনার অন্যতম ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এস আলম। বোর্ড ভেঙে দেওয়ার আগে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের বড় ছেলে আহসানুল আলম।
দখল নেওয়ার পর থেকে এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার আগপর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনাম ঋণের নামে এক লাখ ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা নিয়ে যায় এস আলম গ্রুপ, যা ব্যাংকের মোট ঋণের ৬১ শতাংশ। গত জুন শেষে ইসলামী ব্যাংকের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা।
এস আলম এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বেশিরভাগ নেন ভুয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলমের ভুয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানের ঋণ তার গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুবিধাভোগী এস আলম তার প্রমাণও পেয়েছে বিএফআইইউ। ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ‘টু’ শব্দও করা হয়নি।
তথ্য অনুযায়ী, ‘এস আলম’ নাম যুক্ত আছে ইসলামী ব্যাংক থেকে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণই ৩৪ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অফশোর ইউনিট থেকে ১৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এবং অন্য উপায়ে আরও ৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
এর বাইরে তার বেনামি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, নিজাম রোড ও পাহাড়তলী এবং রাজধানীর গুলশান ১ নম্বর শাখা থেকে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ ফার্স্ট সিকিউরিটি থেকে
২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপের কাছ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। তখন থেকে বোর্ড ভেঙে দেওয়ার আগ পর্যন্ত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল আলম নিজেই। এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থাকাকালীন ব্যাংকটি থেকে ৪৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণের নামে বের করেন তিনি।
সূত্র জানায়, নিজের মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই এস আলম গ্রুপ বিভিন্ন বেনামি প্রতিষ্ঠান খুলে এই ব্যাংকটি থেকে পুরো ঋণ বের করেন। জুন শেষে ব্যাংকের আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। ঋণের পরিমাণ ৫৮ হাজার ১০৪ কোটি টাকা।
এস আলমের নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ ঋণের অর্থ ফেরত না আসায় তারল্য সংকট চরমে ব্যাংকটিতে। পলাতক সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের আমলে ব্যাংকটির চলতি হিসেবে ঘাটতি থাকার পরও অবৈধ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়। তবে নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আসার পর সব অবৈধ সুবিধা বন্ধ করে দেন।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা
শরিয়াভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা সরিয়েছেন এস আলম, যার মধ্যে ২ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা খেলাপি। বেনামি ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে এই ঋণ নেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত ঋণসীমা ছিল ১১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। বর্তমান ঋণ রয়েছে ২৭ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ঋণের বিপরীতে ছিল না কোনো ধরনের জামানত। এখন পর্যন্ত কোনো টাকাও ফেরত দেয়নি। ফলে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ হু হু করে বাড়ছে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ার কারণে তারল্য সংকটে ব্যাংকটি। গ্রাহকের টাকা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।
ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় মোট ঋণের ৪২ শতাংশ খেলাপি বলে উঠে এসেছে। যদিও গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে তারা খেলাপি দেখিয়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে সম্প্রতি টাস্কফোর্সের একটি টিম অনুসন্ধান চালায় ইউনিয়ন ব্যাংকে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকটির ঋণের ৯৫ শতাংশ খেলাপিযোগ্য। তাই ব্যাংকে ঋণগুলোকে খেলাপি করার নির্দেশ দেয় টাস্কফোর্স দল।
নানা অনিয়মের কারণে আর্থিক বিপর্যয়ে পড়া এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গ্লোবাল ইসলামী থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা
এস আলম গ্লোবাল ইসলামী থেকে বেনামি প্রতিষ্ঠানে ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৯৯ শতাংশ।
ব্যাংকটির বোর্ড ভেঙে দেওয়ার আগে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের মেয়ে মায়মুনা খানম। ১১ বছর বয়সী ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন এস আলমের ভাই শহিদুল আলম ও বোন রোকেয়া ইয়াসমিনসহ আরও সাতজন আত্মীয়।
২০১৩ সালে যাত্রা করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক)। কিছুদিন পর গ্লোবাল ইসলামীতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারকে। এ ব্যাংক যা ঋণ দিয়েছে, তার বেশির ভাগই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের নামে। এসব ঋণ এস আলম গ্রুপের বলেই প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ।
পিকে হালদারের সময় বিভিন্ন নামে টাকা বের করে নেওয়ার পর ব্যাংকটি আর খুব একটা ঋণ বিতরণ করেনি। বছরের পর বছর এসব ঋণ আর আদায় হয়নি। প্রতি বছর সুদ যুক্ত হয়ে তা শুধু বাড়ছে। গত জুন শেষে ব্যাংকটির ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। আর সেপ্টেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা।
এসআইবিএল থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে প্রায় ১২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় এস আলম গ্রুপ এসআইবিএলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
আগের দিন রাতে ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কোম্পানি সচিবকে তুলে নিয়ে যায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা। ব্যাংকটি দখলের পর চেয়ারম্যান করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফকে। বোর্ড ভেঙে দেয়ার আগে চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ। এস আলমের আরও পাঁচ আত্মীয় এই ব্যাংকের বোর্ডে ছিলেন।
বাদ যায়নি সরকারি জনতা ব্যাংক
নিজের মালিকানাধীন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার করে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে টাকা বের করেন এস আলম। ব্যাংকটি থেকে ১২ হাজার ৩৩২ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে, মোট ঋণের ৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকাই এখন খেলাপি। ইতোমধ্যে ঋণের বিপরীতে বন্ধক দেওয়া এস আলমের কিছু সম্পত্তি নিলামে তুলেছে ব্যাংকটি।
এছাড়া এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৩৭৬ কোটি, এক্সিম ব্যাংকে ৬ হাজার ৩৪৬ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ৫০ কোটি এবং ন্যাশনাল ব্যাংকে ৩৯ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। তাছাড়া এস আলমের মালিকানাধীন আভিভা ফাইন্যান্স অর্থশূন্য হয়ে ঋণের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এক হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে আর্থিক খাতের এই প্রতিষ্ঠানটি থেকে।
এদিকে সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ২৪টি কোম্পানিতে তাদের নামে থাকা ৩২ কোটি ১০ লাখের বেশি শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
সরকারকে হুমকি
সাইফুল আলম ওরফে এস আলম বিনিয়োগ ‘ধ্বংসের’ অভিযোগে এনে সরকারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টার কাছে একটি বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিস পাঠিয়ে ছয় মাসের মধ্যে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নিয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে বলেন এস আলম।
ধারণা করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার করা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে হুমকিতে ফেলতে পারে এস আলমের এই পদক্ষেপ।