প্রকাশ্য আদালতে অধস্তন বিচারকের ঘোষণা করা রায় গোপনে ছিঁড়ে ফেলেছেন ঘুষ লেনদেনে বেপরোয়া এক জেলা জজ। তিনি হলেন শরীয়তপুরের সিনিয়র জেলা জজ ও দায়রা মো. সোলায়মান। অধস্তন বিচারক, সিনিয়র সহকারী জেলা জজ মো. আরিফুল ইসলাম রায় ঘোষণার দুই দিন পরে নথি তলব করে নেন জেলা জজ সোলায়মান। নথি তলবেও তিনি জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেন। সাবেক জেলা জজ অনুপ কুমারের নামে নথিটি তলব করেন তিনি। যদিও এর ১৪ দিন আগে অনুপ কুমার অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। বস্তুত, বড় অংকের ঘুষ লেনদেনে এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন যে, কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছিলেন না সোলায়মান। পুনঃবিচারের জন্য জেলা জজ নথিটি অন্য আদালতে প্রেরণ করেন। সেই আদালতের বিচারক, সহকারী জজ সাদ্দাম হোসেন জেলা জজ মো. সোলায়মানেরই অনুগত। এদিকে সিনিয়র সহকারী জেলা জজ মো. আরিফুল ইসলাম যাতে রায় ছিঁড়ে ফেলা এবং পুনঃবিচারের কথা জানতে না পারেন, এজন্য তাকে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র আদালতে বদলি করেন জেলা জজ।
কিন্তু ঘটনা ফাঁস হয়ে যায় বিচারক মো. আরিফুল ইসলাম নথিটি তলব করলে। রায় ঘোষণার পরে নথির শেষ আদেশ লেখার জন্য আরিফুল ইসলাম নথিটি উপস্থাপনের জন্য বললে বেঞ্চ সহকারী ও সেরেস্তাদার তাকে জানান, জেলা জজ এ মামলার নথি তলব করে নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। এবং রায়ের কপি ছিঁড়ে ফেলেছেন। এও জানতে পারেন, তাকে ইতিমধ্যে জেলা জজেরই অধীন অন্য অপেক্ষাকৃত জুনিয়র কোর্টে বদলি করা হয়েছে। এতে হতভম্ব হয়ে যান সিনিয়র সহকারী জজ মো. আরিফুল ইসলাম।
পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য আরিফুল ইসলামকে খাস কামরায় ডেকে নেন জেলা জজ মো. সোলায়মান। আরিফুল ইসলামকে হুমকি-ধমকি দেন। ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য বলেন। আরিফুল ইসলাম যাতে এই মামলার রায় আর না লেখেন এজন্য নিষেধ করেন। জেলা জজকে আরিফুল ইসলাম জানান, রায়টি ইতিপূর্বে প্রদান করা হয়েছে এবং ডায়েরি ও কজ লিস্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে। রায় নথির সামিলে আছে, রায়ের ধার্য তারিখেই যথাযথভাবে রায় প্রদান করেছি। এ কথা শুনে জেলা জজ রাগান্বিত হয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি করে খাস কামরা থেকে আরিফুলকে বের করে দেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের ঘটনা এটি। আরিফুল ইসলাম ইতিমধ্যে ঢাকার সিএমএম আদালতে বদলি হয়ে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি নিজের ২০২৪ সালের এসিআর-এর জন্য জেলা জজ মো. সোলায়মানকে ফোন করেন। জেলা জজ তাকে সেখানে যেতে বলেন। সেই অনুযায়ী তিনি গত ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ শরীয়তপুর যান। জেলা জজ সোলায়মানের সঙ্গে খাস কামরায় দেখা করেন। কিন্তু, আরিফুল ইসলামকে দেখেই জেলা জজ তাৎক্ষণিকভাবে অত্যন্ত ক্ষেপে যান। চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করে দেন। আদালতের স্টাফরাও সেখানে উপস্থিত হন। এসিআর তো দেনই-নি, উল্টো দীর্ঘক্ষণ ধরে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন, হুমকি-ধমকি দেন। আরিফুল ইসলামকে এসিআর খারাপ দেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, এমনকি পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারেরও ভয় দেখান জেলা জজ সোলায়মান। আরিফুল ইসলাম নিজের মোবাইল ফোনে জেলা জজ সোলায়মানের কথোপকথন এবং অসদাচরণ রেকর্ড করেন।
ধারণকৃত এই অডিও রেকর্ড এবং মামলার রায় ছিঁড়ে ফেলাসহ আগের-পরের সার্বিক ঘটনা তুলে ধরে আইন সচিবের নিকট অভিযোগ দাখিল করেছেন মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে ঢাকার সিএমএম আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদে আছেন। গত ২২ অক্টোবর, ২০২৫ তিনি জেলা জজের বিরুদ্ধে এ অভিযোগটি দিয়েছেন। আরিফুল ইসলাম এই অভিযোগপত্রের সঙ্গে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেয়া মামলার রায় (দে. ১৬৭/২১ নং মামলা) এবং এর পরবর্তী ঘটনাসমূহের ডকুমেন্ট সংযুক্তি হিসেবে দিয়েছেন। জেলা জজ মো. সোলায়মানের কথোপকথনের রেকর্ডিংও পেনড্রাইভের মাধ্যমে দাখিল করেছেন।
শরীয়তপুরের সাবেক জেলা জজ অনুপ কুমারও এসব অপকর্মের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন বলে আরিফুল ইসলাম তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন। অনুপ কুমার বর্তমানে জয়পুরহাটের জেলা ও দায়রা জজ পদে আছেন।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক সচিবের কাছে দাখিল করা অভিযোগপত্রের ‘বিষয়’ হিসেবে আরিফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, “বিষয়: শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ মো. সোলায়মান কর্তৃক বিগত ২৬-০৯-২৪ তারিখে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অহঃবফধঃবফ কাগজাদি সৃজন করতঃ বদলি মিস কেসের মাধ্যমে বিগত ২৪/০৯/২০২৪ তারিখের ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের আমার নিষ্পত্তিকৃত দে. ১৬৭/২১ নং মামলার রায়ের মুল কপিটি ছিঁড়ে ফেলে নথি অন্য কোর্টে পুনঃবিচারের জন্য প্রেরণ এবং আমার সহিত দুর্ব্যবহার ও ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি প্রদান করায়, অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে।”
অভিযোগপত্রে তিনি লিখেন, “আমি বিগত ১১-০৬-২০২৩ তারিখে সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যোগদান করি। আমি অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলাম। মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ জনাব মো. সোলায়মান মহোদয় শরীয়তপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ১৫-০৯-২০২৪ তারিখে যোগদান করেন। মাননীয় জেলা জজ মো. সোলায়মান স্যার শরীয়তপুর জেলায় যোগদানের মাত্র ৮ কর্ম দিবসের মধ্যে আমার একটি দে. ১৬৭/২১ নং মামলার রায় প্রদানের পর জেলা ও দায়রা জজ নিজ উদ্যোগে, পূর্বের জেলা জজ জনাব অনুপ কুমারকে প্রেরক হিসেবে নাম ব্যবহার করে, ২৬-০৯-২০২৪ তারিখে আমার নিষ্পত্তিকৃত মোকদ্দমা ১৬৭/২১ নং মামলার নথি তলব করেন এবং আমার অনুপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত্রি ৮ ঘটিকায় নিজ উদ্যোগে নথিটি নিয়ে যান এবং উক্ত নথিতে রক্ষিত রায়টি ছিঁড়ে ফেলে অন্য কোর্টে স্থানান্তর করে পুনরায় বিচারের জন্য প্রেরণ করেন (দে. ১৬৭/২১ মামলার রায়ের ফটোকপি সংযুক্তি-০১)।”
“সাবেক জেলা ও দায়রা জজ জনাব অনুপ কুমার কর্তৃক ২৪ ধারা দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয়ে সৃজিত তলবপত্রের ব্যাপারে আমি প্রশ্ন করি যে, অনুপ স্যার তো ১২-০৯-২০২৪ সালে বদলি হয়েছেন তাহলে ২৬-০৯-২৪ সালে অনুপ কুমার স্যার কিভাবে নথি তলব করেন। জেলা জজ কর্তৃক জালিয়াতির মাধ্যমে নিষ্পত্তিকৃত নথিটি বদলি হয়েছে মর্মে উহা বিচারক, কর্মচারী ও আইনজীবীদের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়।”
“জনাব অনুপ কুমারকে প্রেরক দেখিয়ে উক্ত সৃজিত তলবীপত্রের মূল কপি আমার নিকট রক্ষিত, উহাতে দে. ১৬৭/২১ নথিটি নিষ্পত্তিকৃত হিসেবে উল্লেখ আছে। (জনাব অনুপ কুমার এর নাম ব্যবহার করে ধহঃবফধঃবফ সৃজিত তলবীপত্রের ফটোকপি সংযুক্তি-০২)। উক্ত তলবপত্রটি যে সৃজিত, তা যেন প্রকাশিত না হয়, তার জন্য তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং কর্মচারীদের উপর প্রভাব বিস্তার করেন। তথাপিও সেরেস্তাদার উক্ত অবৈধ তলবপত্রটি সংশ্লিষ্ট বিচারকের নিকট প্রমাণ হিসেবে দাখিল করেন যেন তারা বিপদে না পড়েন।”
“উক্ত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ২৬/০৯/২০২৪ তারিখে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আমাকে ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত হতে বদলী করে সহকারী জজ আদালত গোসাইরহাট, অপেক্ষাকৃত জুনিয়র আদালতে বদলি করেন এবং আদেশটি ২৯-০৯-২৪ তারিখে পূর্বাহ্নেই কার্যকর হবে মর্মে আদেশ জারি হয় (আদালত বদলির আদেশের ফটোকপি সংযুক্তি-০৩)।”
“এই বিষয় জানাজানি হয়ে গেলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, পরবর্তীতে ২৯-০৯-২০২৫ তারিখে সেরেস্তাদারকে ডেকে নিয়ে নথি প্রেরণ রেজিস্ট্রারে ২৬-০৯-২৪ ইং তারিখের ৯৯/টি স্মারকের নিচে ভিন্ন কালিতে একটি মিস কেস-৮৯/২৪ লিপিবদ্ধ করেন, যাহা অহঃবফধঃবফ করে সৃজিত (নথি প্রেরণ রেজিস্টারের কপির ফটোকপি সংযুক্তি-০৪)।”
আরিফুল ইসলাম অভিযোগপত্রে লিখেন, “বিগত ২৯-০৯-২০২৪ আমাকে তার খাস কামরায় ডেকে নিয়ে বলেন যে, ‘তুমি উক্ত মামলার রায়টি পুনরায় লিখতে পারবা না, কাউকে বলতে পারবে না।’ জেলা জজ বলেন, তিনি দেঃ ১৬৭/২১ মামলাটি সহকারী জজ জনাব সাদ্দাম হোসেন এর নিকট বদলি করে দিয়েছেন। আমি মহোদয়কে জানাই যে, রায়টি ইতিপূর্বে প্রদান করা হয়েছে এবং ডায়েরি ও কজ লিস্টে তা উল্লেখ করা হয়েছে এবং রায় নথির সামিলে আছে, আমি রায়ের ধার্য তারিখেই যথাযথভাবে রায় প্রদান করেছি।”
“এই কথা শুনে তিনি আমার উপর রাগান্বিত হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে খাস কামরা থেকে বের করে দেন। তিনি চিৎকার করে আরও বলেন, ‘বেডা তোরে বলতেছি রায় দিতে পারবি না।’ অত্র বিষয়টি বিভিন্ন বিচারকের সাথে শেয়ার করলে, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। উক্ত দেঃ ১৬৭/২১ মামলাটির রায় ২৪/০৯/২০২৪ তারিখে ধার্য থাকায় প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণাক্রমে দৈনিক কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট সংযুক্তি-৫) এবং দিনলিপিতে উত্তোলন করা হয় (ডায়েরি সংযুক্তি-০৬)। দেঃ ১৬৭/২১ মোকদ্দমাটি বিগত ১৫-০৯-২০২৪ তারিখে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ধার্য ছিল উক্ত তারিখে আমি নিজে যুক্তিতর্ক শুনানিয়ান্তে ২৪-০৯-২০২৪ তারিখ রায়ের জন্য ধার্য করি। বিগত ১৫-০৯-২৪ তারিখের দৈনিক কার্যতালিকা (কজ লিস্ট সংযুক্তি- ০৭) এবং দিনলিপিতে দেঃ ১৬৭/২১ মামলায় ঘোষিত আদেশ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় (ডায়রী সংযুক্তি-০৮)।”
“রায়ের মূল কপি নথির সামিলে নেওয়ার জন্য বেঞ্চ সহকারীর নিকট ধার্য তারিখেই প্রদান করি। এখানে উল্লেখ্য যে, রায় প্রদানের পর নথির শেষ আদেশটি লিখার জন্য আমি বেঞ্চ সহকারীকে নথি উপস্থাপন করতে বললে তিনি বলেন, জেলা জজ অবৈধ প্রক্রিয়ায় নথি নিয়ে গেছেন, উক্ত প্রেক্ষিতে আমি ১৪৮/টি নং স্মারকমূলে নথি উপস্থাপনের আদেশ প্রদান করি। (নথি উপস্থাপনের আদেশ কপি সংযুক্তি-৯)।”
“বেঞ্চ সহকারী ও সেরেস্তাদার আমাকে মৌখিকভাবে জানায় জেলা ও দায়রা জজ মহোদয় দেঃ ১৬৭/২১ মামলার রায়ের কপি রাত্রে নিয়ে গিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। অত্র আদালতে জেলা জজ যোগদানের ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই ভেদরগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের নিষ্পত্তিকৃত নথিতে রক্ষিত দেঃ ১৬৭/২১ মালার রায় ছিঁড়ে ফেলা এবং আমাকে অধিকতর জুনিয়র কোর্টে বদলি করায় আমি হতভম্ব হয়ে যাই।”
“মাননীয় জেলা ও দায়রা জজকে আমার ২০২৪ ইং বছরের অঈজ প্রদানের বিষয়ে অনুরোধ করলে জেলা ও দায়রা জজ জনাব মো. সোলায়মান স্যার আমাকে ছুটির গেজেট নিয়ে অফিসিয়াল নাম্বার ০২৪৭৯৯৫৪০১০ হতে নিজেই ফোন করে শরিয়তপুরে আসতে বলেন (কল লগের ফটোকপি সংযুক্তি-১০)। তিনি আমাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করেন ও আমাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া ও পুলিশে গ্রেপ্তার করে দেওয়ার কথা বলে অপেশাদারসুলভ আচরণ করেন।”
“বিগত ১৫-১০-২০২৫ তারিখে জেলা জজ মহোদয় আমাকে ছুটি সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে যেতে বললে আমি অনুমতিক্রমে প্রায় ১:৩০ ঘটিকায় গেজেট বিজ্ঞপ্তিসহ যথারীতি উনার খাস কামড়ায় দেখা করতে যাই। উনি তাৎক্ষণিকভাবে আমার সাথে খারাপ আচরণ শুরু করেন এবং আমার সাথে চিৎকার শুরু করলে স্টাফরা খাস কামড়ায় জড়ো হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আমাকে পুলিশ দিয়ে আটকাবেন বলে হুমকি দেন, তখন আমি বাধ্য হয়ে ভয় পেয়ে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের জন্য আমার হাতের মোবাইল দিয়ে উনার ও আমার কথোপকথন রেকর্ড করি, যাহা পেনড্রাইভ সংযুক্ত করা হলো (পেনড্রাইভে অডিও রেকর্ডিং সংযুক্তি-১১)। পেনড্রাইভে সংরক্ষিত অডিও কথোপকথনের বিষয়টির উল্লেখযোগ্য সারসংক্ষেপ মহোদয়ের সুবিধার্থে বাংলায় লিপিবদ্ধ করেছি। (কথোপকথনের সার-সংক্ষেপ বাংলায় টাইপকৃত-সংযুক্তি-১২)।”
“এসিআর দিতে বার বার অনুরোধ করায় এক পর্যায়ে স্যার বলেন, ‘তুমি বেশি বাড়াবাড়ি করছো, যা আমাকে ইতিপূর্বেকার জেলা জজ অনুপ কুমারও বার বার বলেছেন, আমাকেও এসিআর খারাপ দিতে অনুরোধ করেছেন।’ (সংযুক্ত কথোপকথনের রেকর্ডে আছে)।”
“জনাব মোঃ সোলায়মান স্যার আরোও বলেন, ‘তোমার সম্পর্কে বর্তমান রেজিস্ট্রার জেনারেল জনাব হাবিবুর রহমান এর ধারনা ভাল না, তিনি তোমার বিষয়ে অনেকবার আমাকে বিরূপ ধারণা দিয়েছেন।’ এখানে উল্লেখযোগ্য যে রেজিস্ট্রার জেনারেল জনাব হাবিবুর রহমান মহোদয় এর অধীনে কোথাও কোন দিন কাজ করি নাই এবং ব্যক্তিগতভাবে রেজিস্ট্রার জেনারেল মহোদয়কে আমি চিনিও না, উনার সাথে ব্যক্তিগত কোন সম্পর্কও নাই।”
“আমি জেলা জজ স্যারকে বলি, ‘আপনি আমার ঘোষিত রায় ছিড়েছেন’, তৎক্ষণাৎ জনাব মো. সোলায়মান স্যার রেগে বলেন, ‘তুই খারাপ, পুরা বিচার বিভাগ তোকে খারাপ জানে, তুই ইবলিশকেও ছাড়িয়ে গেছিস, আমি তোকে দেখে নিবো, আইন সচিব, প্রধান বিচারপতি, রেজিস্ট্রারসহ সকল বিচারকের কাছে বলবো তুই খুব খারাপ’। তোর ক্যারিয়ার শেষ করে দিবো (কথোপকথন সংযুক্ত পেনড্রাইভে রেকর্ডে আছে)।”
“আমার মনে হচ্ছে যে, জনাব অনুপ কুমার (প্রাক্তন জেলা জজ, শরীয়তপুর) এর স্বাক্ষরিত ও সৃজিত তলবপত্র ব্যবহার করে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে জনাব অনুপ কুমার স্যারও লিপ্ত আছেন। জনাব মো. সোলেমান তার কক্ষে আলোচনার সময় আমাকে বলেন যে, ‘অনুপও তোমার এসিআর খারাপ দিয়েছে এবং আমাকেও তোমার এসিআর খারাপ দিতে বলছেন’ (যা সংযুক্ত-১১ পেনড্রাইভে আছে)।”
“বিগত ২৯-০৯-২৪ তারিখে রায় ছিঁড়ে ফেলার ব্যাপারে আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবো বলে জেলা জজ মহোদয়কে বললে, তিনি আমাকে হুমকি-ধমকি প্রদান করেন এবং আমাকে দেখে নিবেন বলেন। এখানে উল্লেখ্য যে. বিগত ১৫-১০-২০২৫ তারিখে কথোপকথনের শেষ সময়ে তিনি আমাকে অনুরোধ করেছেন যে, ‘যা হইছে তা ভুলে যাও, তুমিও স্টপ থাকো, আমিও স্টপ হয়ে যাবো, নাহলে আমি প্রধান বিচারপতি, রেজিস্ট্রার জেনারেল, সচিবকে জানাবো তুমি খারাপ এবং তোমার এসিআরও আমি খারাপ দিবো।’ আমার প্রদত্ত পেনড্রাইভ ও কাগজে লিপিবদ্ধ রেকর্ডকৃত বক্তব্য সংযুক্তি- ১১ ও ১২ দেখলে এ বিষয়টি প্রমাণিত হবে। যা আমার মোবাইলেও রক্ষিত আছে।”
“জেলা জজ স্যার কথোপকথনের এক পর্যায়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে বলেন, ‘কোন ক্ষমা নাই তোমার, ফার্দার আরেকটা কথা বললে আমি পুলিশ দিয়ে তোমাকে জেলে পাঠিয়ে দিবো। জেলে পাঠিয়ে দিয়ে তোমার বিরুদ্ধে ফৌজদারী প্রসিডিং শুরু করিয়ে দিবো। তুমি সোলায়মানকে চিনো না।।’ (সংযুক্তি-১১/১২)।”
“এখানে উল্লেখ্য যে উনার আদেশে, উনার খাস কামরায় অনেক কষ্ট করে বাসে চড়ে গিয়েছি, উনার কক্ষে ঢুকার সাথে সাথেই তিনি চিৎকার ও চেঁচামেচি শুরু করেন যা একজন জেলা জজ সুলভ আচরণ নহে, এ কথা বলাতে আমি দুঃখিত কিন্তু মহোদয় যদি পেনড্রাইভে রক্ষিত কথোপকথন শুনেন তা প্রমাণিত হবে। তিনি প্রমাণ ছাড়াই জুনিয়র সহকর্মীর উপর দায়িত্বহীন, ভিত্তিহীন আচরণ করেছেন।”
“আমি জুনিয়ার কর্মকর্তা হিসেবে উনার অধীনে সংক্ষিপ্ত কর্মকালে উনার অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে ও নিজেকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে আমি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ২০২৫ সালের পর বিভিন্ন সময়ে মোট ১১৯ দিনের অর্জিত ছুটি নেই। বিগত ০১-০১-২০২৫ হতে ০৯-০৭-২০২৫ কার্যকালীন সময়ে প্রায় ৪ মাস পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণে অর্জিত ছুটিতে থাকায় উক্ত বছরে আমার কর্মদিবস ছিল ১৮ দিন।”
“দেঃ ১৬৭/২১ নথির মূল রায় ছিঁড়ে ফেলে মামলাটি অন্য কোর্টে ট্রান্সফার করার পিছনে জেলা ও দায়রা জজ জনাব সোলেয়মান আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন মর্মে জনশ্রুতি আছে এবং রায় ছিঁড়া একটি নজিরবিহীন এবং বেআইনি ঘটনা যা তিনি করতে পারেন না। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তিনি আমাকে বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করেন যা জুনিয়র সহকর্মী হিসেবে আমার জন্য অসহনীয় ছিল।”
“তিনি আমাকে বলেন রায় ছেঁড়ার কথা কাউকে বলিলে তিনি যেভাবেই হোক আমার এসিআর খারাপ দিবেন, উনার ভয়ে আমি আতঙ্কে আছি। তিনি ঘোষণা দেন আমার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতিকে বলবেন, সব লোকের কাছে বলবেন আমি খারাপ। জনাবের এই মিথ্যাচার ও জিঘাংসামূলক আচরণে আমি প্রচন্ডভাবে বিচলিত, কর্মচারীদের সামনে আমাকে অপমান করায় আমি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি, এ ব্যাপারে আমি অত্যন্ত আতঙ্কিত ও মানসিকভাবে অশান্তিতে আছি।”
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন সচিবের নিকট আবেদন জানান।
- বিশেষ প্রতিবেদক
শীর্ষনিউজ