জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতা। দলীয় কোন্দল থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষ সব মিলিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতি জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে এনেছিল নতুন আশাবাদ। ফ্যাসিবাদ পতনের সেই আন্দোলন জন্ম দিয়েছিল ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই রাজনৈতিক ঐক্য যেন ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার পুরনো বৃত্তে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত নয় মাসে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৩ জন, আহত হয়েছেন ৩৯২ জন। এতে উদ্বেগ বাড়ছে সর্বত্র।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, জামায়াত আর বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। এটি শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। যদি কেউ এসে ঝামেলা করে, আমরা আমাদের মতবাদ প্রচার করব। সংঘর্ষ হলে শুধু বিএনপিকে দায়ী করা ঠিক নয়।
ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথভাবে কার্যকর করা না গেলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে কোথাও কোথাও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সবার উচিত সমতা বজায় রাখা।
হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সভাপতি সমতার যে আচরণ করছেন, আমরা যদি সেই লেভেল বজায় রাখতে পারি তাহলে এমন ঘটনার মাত্রা কমে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, শত বছরের রাজনৈতিক কালচার এটা চাইলে একদিনে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব না। আমি মনে করি জুলাই পরবর্তীতে এটা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। রাজনীতিতে কথার লড়াই হবে, কিন্তু হাতের লড়াই নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিনে বদলানো সম্ভব না ঠিকই, তবে জুলাই পরবর্তী বাস্তবতায় দলগুলোর দায়িত্ব ছিল ভিন্ন বার্তা দেয়ার।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন না। তবে তাদের দাবি সরকারকেই শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আল মাসুদ হাসানুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, দলীয় স্বার্থে অনৈক্য বাড়লে জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। দলগুলোকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে, নইলে সাংবিধানিক সংস্কারসহ ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যকর হবে না।