Image description

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্রে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও মূল সংঘর্ষ কেন্দ্রিত হয় বিএনপির নয়া পল্টনের মহাসমাবেশকে ঘিরে। সংঘর্ষ চলাকালীন বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে আগুন দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য ও যুবদলের এক নেতা নিহত হন। এ সময় অর্ধশতাধিক পুলিশ ও প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বিএনপির মহাসমাবেশ শেষ পর্যন্ত পণ্ড হয়।

অন্যদিকে, জামায়াতের সমাবেশ পুলিশের লাঠিচার্জের মুখোমুখি হলেও পরে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় এবং সন্ধ্যার আগে নেতাকর্মীরা ফিরে যান। আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে পরের দিন সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকা হয়। বিএনপি তাদের নেতাকর্মীর গ্রেফতার ও শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে হরতালের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হরতাল অমান্য করার পাশাপাশি দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয়।

বিএনপি নয়া পল্টনের মহাসমাবেশে সরকারের পতনের দাবিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ ডাক দেয়। নেতাকর্মীরা সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন। প্রথম দিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কর্মীরা নিজ নিজ সমাবেশে যোগ দিলেও সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মগবাজার থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের পিকআপ যাত্রার সময় সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। কাকরাইল মোড়ে বিএনপির কর্মীদের উপস্থিতি পিকআপকে গুলিস্তানের দিকে যেতে বাধা দেয়। ১৫–২০ মিনিট ধরে উত্তেজনা চলাকালীন কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। বিএনপির কর্মীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়, পুলিশি ব্যারিকেড ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। আইডিইবি ভবনে রাখা দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এই সংঘর্ষ বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা ও শান্তিনগরেও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের পাল্টা পদক্ষেপে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-প্রতিধাওয়া ও সংঘর্ষ চলতে থাকে।

পরে কিছু বিএনপি নেতাকর্মী আরামবাগ থেকে নয়া পল্টনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে সড়ক ফাঁকা করে পুলিশ। পল্টন মহাসমাবেশ পণ্ড হয়। সন্ধ্যার দিকে নয়া পল্টন এলাকায় পুলিশ অবস্থান নেয়। রাত ৭টার দিকে সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালের ফটক ও হাসপাতাল চত্বরে রাখা মোটরসাইকেল, একটি বাইসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্সসহ দুটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয় বিএনপির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতর ও খিলগাঁও ইউনিট বিকাল ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ থেকে হরতালের ডাক দেন। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ায় সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগে তিনি হরতালের ঘোষণা দেন। জামায়াতও সরকারের পদত্যাগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নেতাকর্মীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়।

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ সকাল সাড়ে ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে শুরু হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশাত্মবোধক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গান ও কবিতা আবৃত্তি হয়। সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম গান পরিবেশন করেন।

বেলা ১টার পর সমাবেশ শুরু হয়। ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। নেতা ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের জন্য বিএনপিকে দায়ী করা যায়। তিনি হরতালকে ভোঁতা অস্ত্র উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ থাকার নির্দেশনা দেন। বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল পারভেজ নিহত হন। যুবদল নেতা শামীম মিয়া নিহত হন। সংঘর্ষে পুলিশের প্রায় ৭০ জন সদস্য, সাংবাদিক ও বিএনপির নেতাকর্মীরা আহত হন।

মামলার সূত্রে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও দণ্ডবিধি আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আদালত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৬৭ জনের অব্যাহতির সিদ্ধান্ত দেন।