Image description
 
 

বাংলাদেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) এখন বিব্রত এক বেপরোয়া কর্মকর্তার কারণে। উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মুহাম্মদ আরিফ আহম্মদ বছরের পর বছর ধরে দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, শৃঙ্খলাভঙ্গ ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগে প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

 

একাধিকবার শোকজ, কারণ দর্শানো, এমনকি সাময়িক বরখাস্তের পরও তাকে থামানো যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তিনি ‘অদৃশ্য প্রভাববলয়ে’ থেকে প্রতিবারই পার পেয়ে যান।

অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিমত, আরিফ আহম্মদ যেন উপ-সহকারী নয়, নির্বাহী প্রকৌশলী! যখন ইচ্ছা অফিসে আসেন, আবার যখন ইচ্ছা চলে যান। সহকর্মীদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অভিযোগ পাঠানো, সাংবাদিকদের ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার, এসব তার ‘অভ্যাসে’ পরিণত হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে গৌরনদী পৌরসভায় যোগদানের পর থেকেই আরিফের কর্মজীবন ঘিরে নানা বিতর্ক। ২০১৩ সালে প্রয়াত মেয়র এম এ মান্নানের সময় তদবিরের মাধ্যমে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে যোগ দেন তিনি। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই প্রথম শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শোকজ হন। এরপরও চলতে থাকে তার অব্যাহত প্রশাসনিক বিদ্রোহ।

 

২০২১ সালের শেষ দিকে তাকে বাসন অঞ্চলে বদলি করা হলেও তিনি নির্দেশ অমান্য করে নগরভবনে পদচারণা চালিয়ে যান। এ কারণে ২০২৪ সালের মে মাসে কারণ দর্শাতে বলা হয় এবং ৩১ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে—প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা দীর্ঘদিন কার্যকর হয়নি।

অঞ্চল-৫ (কাউলতিয়া) অফিসের কর্মীরা বলেন, আরিফ ভাই সকালে এসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। পরে নগরভবনে গিয়ে একেক কর্মকর্তার কক্ষে বসে প্রশাসনিক কাজে ব্যাঘাত ঘটান।

অন্যদিকে, একাধিক কর্মকর্তা জানান, তিনি নিজের প্রভাব দেখিয়ে ভয় দেখান, সাংবাদিকদের ব্যবহার করেন, এমনকি পদোন্নতি নিয়েও বিতর্ক তৈরি করেন।

এ বিষয়ে আরিফ আহম্মদ দাবি করেন, আমি নামে-বেনামে কোনো অভিযোগ দিইনি। তবে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন এবং পরে ফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মুহাম্মদ সোহেল হাসান জানান, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে সিটি কর্পোরেশনের ভেতরে অনেকেই বলছেন, একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি আজ প্রশ্নের মুখে। বারবার শাস্তি দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না আরিফ আহম্মদের আচরণ।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে আরিফের বিষয়ে একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তিনি দাপটের সঙ্গে স্বপদে বহাল রয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন—আরিফের খুঁটির জোর কোথায়, তা নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে এলে থলের বিড়াল ফাঁস হবে।