Image description

রাজনীতির মাঠে চলছে চাপাচাপি। লেগে আছে আছে অনেক জট। দৃশ্যায়ন রাজনৈতিক প্যাঁচ। বড় দলগুলোর শীর্ষ ব্যাক্তিরাই যথা সময়ের ভোট নিয়ে নানা শঙ্কার কথা বলছেন। দেশের সর্বস্তরের মানুষেরই এখন প্রশ্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন কী ফেব্রুয়ায়ারিতে হচ্ছে? যথা সময়ে ত্রয়োদশ ভোট নিয়ে নিয়ে অজানা শঙ্কা সর্বমহলে। বাংলাদেশের অন্যৎম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টন। ঢুকতেই ডান পাশে রয়েছে একটি চায়ের দোকান। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে দলবেধে ২/৩ গ্রুপ চা খাচ্ছে। তাদেরও মূল আলোচনা ভোট কি ফেব্রুয়ারিতে হবে। তারেক রহমান কী নভেম্বরে দেশে আসবেন। জুলাই সনদ, পিআর জটিলতার সমাধান কী হবে। গণভোটের ফয়সালা কখন হবে। এনসিপি কোনদিকে যাবে। ছোট দলটি যে দিকে যাবে সেদিকে কূটনৈতিক হিসেব থাকবে। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর বড় মুভমেন্ট মোকাবিলা বিএনপি কিভাবে করবে। জামায়াতকে ঠেকাতে না পারলে ছাত্রসংসদের ভোটের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে পারে। ভোট নিয়ে সরকারের নানা প্যাঁচ গেইমিং চুলছেরা বিশ্লেষণ চলছে সেখানে। 

 

এমন জনমত এখন শুধু রাজনৈতিক পাড়ায় নয়। কূটনৈতিক থেকে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টর সবখানেই জোরালো গবেষণা চলছে। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, প্রশাসনের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছেন, এখনও যথা সময়ের ভোট নিয়ে পর্দার আড়ালে অজানা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলই এখনো সবুজ সঙ্কেত পাননি। ভোটে অংশ নিলে লাভ ক্ষতির হিসাব এখনও কোনও দলই বুঝে পাননি। সরকারও এখনও তাদের ঘোষণা অনুযায়ী জনগণকে দেওয়া গণহত্যার বিচার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতির পূর্ণ রোডম্যাপ তৈরি করতে পারেননি। এজন্য ভোটের সম্ভাবনার মধ্যেও অনেক অজানার হাওয়ার ইঙ্গিত উড়ছে বাতাসে।    

প্রশাসনিক একাধিক সূত্র বলছে, রমজানের আগে ভোট হতে পারে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার মাধ্যমে। অন্যথায় আরও কিছু সময় লেগে যেতে পারে। ভোট পিছিয়ে গেলে সরকারে মধ্যে কিছু পদের রদবদল হতে পারে। এখন পর্যন্ত অনেক বড় দলও ভোটের প্রস্তুতি শেষ করতে পারেননি, পর্দার আড়ালে এমন বার্তাও দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচনের জন্য কমিশনের যে টেকনিক্যাল এবং ম্যানপাওয়ার আবশ্যক সেগুলো রাজনৈতিক জটিলতায় অনেক কিছুই থমকে আছে। জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশিজন একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান জনকন্ঠকে নাম প্রকাশে অনিশ্চুক হয়ে বলেন, ২৬ ধরে নিয়ে আমরা ভোটের প্রস্তুতি নিইনি। ২৭ এর শেষ ধরে নিয়ে আমরা ভোটের প্রস্তুতি নিয়েছি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোট একগুলোর রাজনৈতিক জটিলতা শেষ হতে সময় লেগে যাবে। অন্যদিকে বিএনপির সমমনা জোটের শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচন যদি পিছিয়ে যায় বড় দলগুলোর জন্য অনেক অশনি সঙ্কেত রয়েছে। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে, তাদের ভোটে যুক্ত করতে বাংলাদেশে অনেকগুলো লেয়ার সম্পৃক্ত হয়ে যাবে। তবে এখন যথা সময়ে ভোটের নিশ্চয়তা নির্ভর করছে তারেক রহমানের দেশে আসার উপর। উনি যদি ডিসেম্বরে বাংলাদেশে পা রাখেন তাহলে তারেক রহমানের উপস্থিতি জনস্রোতে নির্বাচন হওয়ার অনেক সম্ভাবা রয়েছে। আবার যদি তারেক রহমানের জামিন হওয়া মামলা গুলো পুনরায় কেউ রিভিউ করে, নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র তৈরি করে তাহলে তার ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে।   

 

এদিকে ভোট যতই এগিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠে চাপাচাপি ততই বাড়ছে। বিগত তিন নির্বাচনে যাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক আছে, তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ট্রাস্টসহ রাজনৈতিক দলের প্রভাবাধীন ব্যাক্তিকেও ভোটে যুক্ত না রাখার আবেদন করা হয়েছে।নির্বাচন পূর্ব ছাত্রদের পক্ষ থেকে হওয়া দুই উপদেষ্টারও অপসারণ চাওয়া হয়েছে বলে বিশস্ত বিএনপির সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিসহ আটটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ ফা দাবিতে শনিবার থেকে মাঠে নামছেন।এছাড়া  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মধ্যে 'শাপলা' প্রতীক নিয়ে টানাপোড়ন কাটছেই না। এনসিপি স্পষ্টই বলেছেন, শাপলা ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না, নির্বাচন হতেও দেবেন না।  এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) একে অপরের চাপাচাপিতে যথা সময়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখছেন দেশের সচেতন মহলও।  
 
এদিকে স্বচ্ছ এবং গ্রহমণযোগ্য ভোটের জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া বলা হয়েছে জোটের প্রার্থীকেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। পলাতক আসামি ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না। এবার ভোট গণনার সময় গণমাধ্যম সরাসরি থাকতে পারবে। যে আসনে একজন প্রার্থী থাকবেন সেখানে 'না' ভোটের বিধান থাকবে। ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী নিয়মিত বাহিনীর মতো কাজ করবে।অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে ইসি। প্রার্থীকে দেশি-বিদেশি আয়-সম্পদের বিবরণী দিতে হবে। প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। এই বিধানগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক অনেক হিসাব নিকাশ যুক্ত হয়েছে। অনেকে বলছেন, ছোট দলগুলো এখন আর নিম্ন কক্ষের ভোটে জিতে আসার সুযোগ থাকবে না। ছোট দলগুলোর একমাত্র ভরসা করে থাকতে হবে যদি উচ্চ কক্ষে পিআর হয় তবেই তারা নির্বাচনে যেতে পারবে। 

 

ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এক বছরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করে আমরা একটা জায়গায় আসার চেষ্টা করছি একটা নির্বাচন যেন করা যায়। কিন্তু কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন যেন পিছিয়ে যায়, নির্বাচন যেন সঠিক সময়ে না হয় তার চেষ্টা করছে। দ্রুত নির্বাচনের মধ্যমে একটি রাজনৈতিক সরকার দেশের দায়িত্ব না নিলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা সবকিছুই আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে।

দেশের বাহিরে একটি অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে সন্দেহ এবং সংকট দুটোই দেখা দেবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের পক্ষে। বিগত ১৫ বছর সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের ভোট দিতে পারেনি। তাই সবার আগ্রহ রয়েছে এই নির্বাচন নিয়ে। সঙ্কট দূরীকরণে দ্রুত নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। 

তবে নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে শক্ত বার্তা দিয়েছেন  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।তিনি বলেছেন, বিএনপি জনগণের চাপে গণভোটে রাজি হয়েছে, কিন্তু একটা প্যাঁচ লাগিয়ে রেখেছে । ‘আমরা এই প্যাঁচ বুঝি না। সহজভাবে গণভোট আগে হতে হবে এটা আলাদা বিষয়। এটা যদি হ্যাঁ হয় তাহলে নির্বাচন। আর না হলে মাইনাস করে নির্বাচন। খুব সোজা জিনিস।’

১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে, তারা যদি আন্তরিক না হয়, সে ক্ষেত্রে একটা শঙ্কা তো থেকেই যায়। তারপরও আমার মনে হয় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে যা ঘটবে, সেটা বহন করার মতো শক্তি আমাদের নেই।

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রশাসন ও পুলিশের দুর্বল অবস্থার কারণে নির্বাচন নিয়ে একটা বড় শঙ্কা দেখছি। 
রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ যেকোনো সময় দ্বন্দ্ব-সংঘাতে রূপ নিলে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ এবং দৃঢ় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেরাও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া কার্যক্রম নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ঘিরে নানা কৌশলে অপতৎপরতা চালাবে। এসব কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কার কথা আমরা বারবার বলছি।