Image description

আওয়ামী লীগের আমলে সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকায় উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছিল ‘ইচ্ছেপূরণ প্রকল্প’। সরকার পতনের পর এটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে এখন আবার সেই প্রকল্পের ব্যয় ৩৯ শতাংশ এবং মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন-২ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২২ সালের মার্চে। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট এক হাজার ৮২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয় ওই বছরের জুলাই থেকে।

তবে প্রকল্পটি যখন হাতে নেওয়া হয়, তখন কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। সাধারণত ৫০ কোটি টাকার বেশি যে কোনো প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাই না হওয়া প্রকল্পটির অন্যতম দুর্বল দিক।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল মূলত সংসদ সদস্যদের ইচ্ছে পূরণের জন্য। এর মাধ্যমে এমপিরা নিজেদের মতো করে মসজিদ, মন্দির এমনকি নেতাদের নিজস্ব কবরস্থানও উন্নয়ন করেছেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যেসব কাজ শেষ হওয়ার পথে রয়েছে তা দ্রুত শেষ করতে হবে। আর যেসবের টেন্ডার এখনো হয়নি, সেসব কাজ বাতিল করে দ্রুত প্রকল্প শেষ করতে হবে। কিন্তু এখন আবার ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে উল্টো ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইচ্ছেপূরণ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নতুন সংশোধনী প্রস্তাবে মেয়াদ আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে এক হাজার ৮২ কোটি টাকায় অনুমোদিত প্রকল্পটি ৪১৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল অনুমোদিত ব্যয়ের তুলনায় প্রস্তাবিত ব্যয় ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।

জানা গেছে, প্রকল্পটির কাজ ৬৪ শতাংশ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রকল্পের কিছু খাতের ব্যয় বাড়ানো, কিছু খাতে কমানো, কিছু প্যাকেজ বাতিল বা সংযোজন করে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

মাঝপথে এসে প্রকল্পের ব্যয় ৩৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়ার কারণ হিসেবে এলজিইডি বলছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংস্থান অনুযায়ী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ যথাযথভাবে না পাওয়ায় প্রকল্পের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। এজন্য প্রকল্পের বাজেট ও বাস্তবায়নকাল এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে বিভিন্ন সময় জারি করা পরিপত্র মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন বিশেষ সুবিধাভাতা ঘোষণা করায় নতুন ইকনোমিক সাবকোড অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী বিষয়টি আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

এলাকাভিত্তিক ব্যয় বিভাজন পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশোধিত নতুন প্রস্তাবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়, সবচেয়ে কম বরাদ্দ রয়েছে মেহেরপুরে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, চট্টগ্রাম জেলায় সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫০ লাখ এবং মেহেরপুর জেলায় সর্বনিম্ন ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

প্রকল্পটি নিয়ে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমডি) সাম্প্রতিক এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, প্রকল্পে কাজ শুরু হওয়ার আগে কোনো ধরনের ফিজিবিলিটি স্টাডি না হওয়াতে মাঠ পর্যায়ে কিছু কাজের ক্ষেত্রে প্রাক্কলন সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটির আরেকটি দুর্বল দিক হলো- কাজ শুরুর প্রথম অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ বেশি থাকলেও পরবর্তী অর্থ-বছর ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ -এ এডিপি বরাদ্দ পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে আর্থিক অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।

এ প্রকল্পের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব, সামাজিক বিরোধের কারণে বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং যথাসময়ে কাজ শেষ করতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা ভূমিকম্পের কারণেও অবকাঠামোগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

এতে পরামর্শ দেওয়া হয়, ভবিষ্যতে সমজাতীয় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ করে স্কিমের জন্য প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা হলে উন্নয়ন কার্যক্রম আরো কার্যকর হবে।

সংস্থাটি আরো বলছে, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী নির্ধারিত অর্থবছরভিত্তিক আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে এডিপি বরাদ্দ নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। এটি প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তি শেষে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও জবাবদিহিতার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে একজন অভিজ্ঞ প্রকল্প পরিচালকের মাধ্যমে প্রকল্প শেষ করা বাঞ্ছনীয় বলেও মনে করে আইএমইডি। প্রকল্পের বিভিন্ন খাতের অব্যয়িত ও সাশ্রয়কৃত অর্থ প্রকৃত চাহিদার নিরিখে ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যয় করা হলে অধিকতর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানায় তারা।

ইচ্ছেপূরণ প্রকল্পের এ বাজেট ও সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।