
আগামী বছর সরকার মোট ২৮ লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি করবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হবে ডিজেল, যার পরিমাণ ১৯ লাখ মেট্রিক টন। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (বিনা টেন্ডারে) এই পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাবটি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
কাল বুধবার সচিবালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকে যোগদানের জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। তাই তিনি ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরে যে ২৮ লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার মধ্যে ১৯ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল (ডিজেল)। তিন লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন জেটএ-১। এক লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন গ্যাসোলিন (অকটেন); তিন লাখ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল (১৮০ ‘সিএসটি’) এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল (০.৫% সালফার) (সব পণ্যের ক্ষেত্রে ১০%) রয়েছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণের জন্য গত ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০% জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় এবং ৫০% আন্তর্জাতিক দরপত্রের (কোটেশন) মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রেডের জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। এ লক্ষ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে এক স্মারকে উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়ার আওতায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পদ্ধতি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ‘মানদণ্ড নির্ধারণ সংক্রান্ত সংশোধিত নীতিমালা’ প্রণয়ন করা হয়। ওই নীতিমালার ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রতি পঞ্জিকা বছরে আমদানিতব্য তেলের ৫০% অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানি তেল বিভিন্ন দেশের চুক্তিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে জি-টু-জি (সরকার-টু-সরকার) ভিত্তিতে আমদানির ক্ষেত্রে বিপিসি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পূর্বানুমোদন গ্রহণ করবে।’
জি-টু-জি ভিত্তিতে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আটটি দেশের ১০টি প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জ্বালানি তেলের উৎস হিসেবে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) সর্বোচ্চ পরিমাণ জ্বালানি তেল সরবরাহ করে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত বিভিন্ন জ্বালানি তেল উৎপাদনকারী ক্রুড অয়েল ভিত্তিক বিটুমিনাস প্ল্যান্ট, ক্যাটালিটিক রিফর্মিং ইউনিট (সিআরইউ) প্ল্যান্ট এবং নন-সিআরইউ প্ল্যান্টগুলো ২০২৬ সালেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঁচামাল হিসেবে কনডেনসেট/ক্রুড অয়েল এবং ন্যাফথা আমদানি করবে বলে আশা করা যায়।
স্থানীয় প্ল্যান্টগুলো যদি বছরব্যাপী স্বাভাবিক উৎপাদনে যুক্ত থাকে তাহলে ওই উৎস থেকে প্রাপ্তব্য জ্বালানি তেলের পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তা জ্বালানি তেল আমদানি হ্রাসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।