Image description
ইকতেদার আহমেদ
 

সাধারণ অর্থে গণতন্ত্র বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন বোঝায়। বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও শাসনব্যবস্থায় ভিন্নতা রয়েছে। আমাদের দেশে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসৃত হয় এটিকে বলা হয় ওয়েস্টমিনস্টার টাইপ অব ডেমোক্র্যাসি। এ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে প্রবর্তিত হয়। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত ওয়েস্টমিনস্টার রাজপ্রাসাদ থেকে ওয়েস্টমিনস্টার শব্দটি উদ্ভূত, বর্তমানে যা ব্রিটিশ পার্লামেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্লামেন্ট শব্দটির বাংলা অর্থ সংসদ। আমাদের দেশের পার্লামেন্ট সংসদ নামে অভিহিত। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্যরা দেশটির একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাগুলো থেকে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত। যুক্তরাজ্যের মতো আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরাও একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত; যদিও আমাদের দেশে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের সদস্য প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সদস্যদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার সুবিধাটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বহাল থাকবে। আমাদের দেশে নারীদের জন্য ৫০টি আসন সংরক্ষিত থাকলেও তা একজন মহিলাকে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত ৩০০ আসনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশগ্রহণে বারিত করে না।

আমাদের দেশে যে সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন মর্মে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান হন, রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। যুক্তরাজ্যে এরূপ ব্যক্তিকে সে দেশের রাজা বা রানী প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেন। যুক্তরাজ্যের মতো আমাদের দেশেও মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।

 

আমাদের দেশে জাতীয় সংসদ এবং রাষ্ট্রপতি ও জেলা পরিষদ ব্যতীত স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এসব নির্বাচনে একজন ব্যক্তি ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাইলে তার যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন তা হলো- ক. তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; খ. তার বয়স ১৮ বছরের নিম্নে হতে পারবে না; গ. কোনো আদালত কর্তৃক তিনি অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত নন এবং ঘ. তিনি একটি নির্বাচনী এলাকার অধিবাসী। উল্লিখিত সব নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচন পরিচালনায় ভোটার তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্ব পালন করে থাকে। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন ভোটার ব্যালট পেপারে সিল প্রয়োগ অথবা ইভিএমের মাধ্যমে বাটন চেপে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হলো, সংবিধান এবং সংবিধানের প্রস্তাবনাকে বলা হয় সংবিধানের প্রাণ। সংবিধানের প্রস্তাবনা ও সংবিধানের একাধিক স্থানে গণতন্ত্র এবং নির্বাচনের ওপর সমধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচন বিষয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে। এ দু’টি বিষয়ে সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। উভয় বিষয়ে সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে- আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক এককাংশের স্থানীয় শাসনের ভার দেয়া হবে।

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে সংসদ ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়। আমাদের দেশে এ যাবৎকাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে আটটি সংসদের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীন এবং চারটি সংসদের নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় সরকারের অধীন আটটি নির্বাচনের প্রতিটিতে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়। অন্য দিকে, নির্দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের কোনোটিতে নির্বাচনের অব্যবহিত আগে যে সরকার ক্ষমতাসীন ছিল সেটি বিজয়ী হতে পারেনি। দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না- এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর এ দাবি বাস্তবায়নে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদ ভেঙে গেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান প্রবর্তিত হয়। এরূপ নির্দলীয় সরকারের অধীন সপ্তম ও অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ দু’টি নির্বাচনের প্রথমোক্তটিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট এবং শেষোক্তটিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিজয়ী হয়। নবম সংসদ নির্বাচনটি সেনা-সমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয় যদিও, এ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানসম্মত পন্থায় গঠিত হয়নি। এ কথা অনস্বীকার্য, এ দেশে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অনেকটা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্তে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের জনমতের উপেক্ষা ও অবজ্ঞায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা রহিত করে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীন সংসদ বহাল থাকাবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করা হয়। এ বিধান প্রবর্তন-পরবর্তী দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দশম সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটের জন্য উন্মুক্ত ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনটি দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বর্জন করায় এটি অনেকটা একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ সংসদ নির্বাচনে যে ১৫৬টি আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়; তাতে অধিকাংশ আসনে অত্যন্ত নগণ্যসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায়। যদিও এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত ভোটের হার বিষয়ে জনমনের অসন্তোষ ও অবিশ্বাস তীব্রতর।

আমাদের সংবিধানে সংসদের গঠন বিষয়ে ৬৫(২) অনুচ্ছেদে যে বিধানের উল্লেখ রয়েছে, দশম সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ভোটের জন্য উন্মুক্ত আসনের অর্ধেকের চেয়ে বেশিসংখ্যক আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় দশম সংসদটি সংবিধানসম্মত উপায়ে গঠিত হয়েছে কি না, এ প্রশ্নটির উদয় হয়। তা ছাড়া ভোটার উপস্থিতির অতি নিম্নহার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।

 

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনটিতে আনুষ্ঠানিক ভোট গ্রহণ শুরুর প্রাক্কালে বিগত দিনের মধ্যরাতে অধিকাংশ আসনের ভোটের একটি বড় অংশের ব্যালট কেটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করা হয়। আনুষ্ঠানিক ভোট-পর্বকালে দেখা যায়, অত্যন্ত নগণ্যসংখ্যক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচনটিতে যেসব আসনে বিগত দিনের মধ্যরাতে ব্যালট কেটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করা হয়; সেসব আসনে আনুষ্ঠানিক ভোট-পর্বকালে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতির হার একেবারে নগণ্য। দশম সংসদ নির্বাচনের মতো এ সংসদ নির্বাচনও সাংবিধানিকভাবে বৈধ আখ্যা দেয়ার বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্নের উদ্রেক হয়। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দেন দলীয় ও বিরোধীদলীয় প্রার্থী কে হবেন। কাকে নির্বাচনে বিজয়ী করা হবে। বস্তুত তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এমন তিনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও প্রহসনমূলক নির্বাচনের আয়োজন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি- দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না, এটি প্রতিষ্ঠিত করেছে।

দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান-পরবর্তী এ দেশের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, ভোটের ফল নির্ধারণে জনমত ও জনসমর্থনের চেয়ে ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের আকাক্সক্ষা মুখ্য।

জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণে ভোটার উপস্থিতির নগণ্য হার নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের অনুষ্ঠান ব্যয়বহুল ব্যাপার। নির্বাচনের এ ব্যয় জনগণ প্রদত্ত কর থেকে নির্বাহ করা হয়। যেকোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন না ঘটলে নির্বাচনব্যবস্থার ওপর জন-আস্থায় ভাটা পড়ে।

ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদানের বিধানে মধ্যরাতে ব্যালট কেটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করার প্রবৃত্তি নিরোধকল্পে আমাদের নির্বাচন কমিশন ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। বিগত সরকারের আমলে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শতভাগ ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। আনুষ্ঠানিক ভোট অনুষ্ঠানের আগে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল- এ ব্যবস্থা মধ্যরাতে ব্যালট কেটে সিল মেরে ভোটের বাক্স পূর্ণ করার প্রবণতা রোধ করে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানকালে ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করে জনমতের প্রতিফলনে প্রার্থী নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে। কিন্তু এ দু’টি নির্বাচনে দেখা গেল, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন প্রায় শতভাগ কেন্দ্রে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দলের পোলিং এজেন্ট ভোটকক্ষে অনুপস্থিতি। প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- ভয়ভীতি প্রদর্শনপূর্বক তাদের পোলিং এজেন্টদের ভোটকক্ষে উপস্থিত হতে নিবৃত্ত করা হয়। এ দু’টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাপক উপস্থিত। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠানকালে ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের ভেতর কারা অবস্থান করতে পারবে এবং ভোটকেন্দ্রের কত দূরে ভোটক্যাম্প স্থাপনপূর্বক ভোটারদের ভোটার স্লিপ প্রদানে সহায়তা করা যাবে, সেটি আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত। এ দু’টি নির্বাচনে দেখা গেছে, কোথাও আইন ও বিধির তোয়াক্কা ছিল না। বিপুল ব্যয়ে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করে ফল যদি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের অনুরূপ হয়, সে ক্ষেত্রে ইভিএমের মাধ্যমের ভোট গ্রহণের যৌক্তিকতা কোথায়?

 

যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের সমর্থনের অনুপস্থিতিতে বিতর্কিত নির্বাচনী ব্যবস্থা ও কলুষিত নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় এবং স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না। এ ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন সুশাসনের অন্তরায় এবং দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলাহীনতার সহায়ক। দীর্ঘ দিন এ ধরনের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও নির্বাচন চলতে থাকলে একটি দেশ ও জাতির বিবেক, নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যাপক হানি ঘটে, যা প্রকারান্তরে সত্য ও ন্যায়ের পথ অবদমিত করে।

 

আগত ভবিষ্যতে আমরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা ও জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার অধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে পারলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রাম-পরবর্তী সংবিধান রচিত হয়েছিল এবং সর্বশেষ গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয় তা পূরণ হবে। অন্যথায় অপরাজনীতির ঘূর্ণিপাকে আমরা অমানিশার এমন অতল গহ্বরে নিপতিত হবো, যা থেকে উত্তরণ কঠিন হয়ে দেখা দেবে।

 

লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি-বিশ্লেষক