
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় নতুন মোড় এসেছে। খুনের পর রক্তাক্ত হাতে বাসায় ফিরে আসা সন্দেহভাজন মাহির রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষাসহ মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত জোবায়েদ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সভাপতি। গত এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নূর বক্স লেনের রৌশান ভিলা এলাকায় ছাত্রী বর্ষাকে পড়াতেন।
বর্ষার সঙ্গে দীর্ঘ নয় বছরের প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন মাহির রহমান। সম্প্রতি সম্পর্কের অবসান ঘটান বর্ষা, যা নিয়েই শুরু হয় টানাপোড়েন।
ঘটনার দিন রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে বর্ষার টিউশনির পথে জোবায়েদের সঙ্গে দেখা হয় মাহিরের। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এ সময় দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পরেই জোবায়েদ ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রক্তে ভেজা হাত নিয়ে বাড়ি ফেরেন মাহির।
তার মা রেখা রহমান বলেন, “ওর হাত কাটা দেখে আমি জানতে চাইলে সে বলে এক ছেলের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় ছুরিতে হাত লেগেছে। পরে বুঝতে পারি ঘটনাটা গুরুতর।”
তিনি জানান, প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেলেকে কেরানীগঞ্জের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান, পরে সোমবার সকালে চকবাজার থানায় নিজ হাতে ছেলেকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।
“আমার ছেলে ভুল করেছে, তাই আমি নিজেই পুলিশে দিয়েছি। অন্যের সন্তান হারিয়েছে, আমি তার মায়ের কষ্ট বুঝি।”
নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত অভিযোগ করেন, সোমবার তারা বংশাল থানায় মামলা করতে গেলে ওসি রফিকুল ইসলাম আসামির সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন।
সৈকত বলেন, “আমরা বর্ষা, তার বাবা-মা, মাহির ও নাফিস মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দিতে চাইলেও ওসি বলেন, এতোজনের নাম দিলে মামলা দুর্বল হবে।”
তবে এ বিষয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, “তারা যাদের নামে মামলা দিতে চান, দিতে পারেন। আমি শুধু পরামর্শ দিয়েছি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন।”
হত্যার পরপরই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন। তারা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
লালবাগ জোনের ডিসি আহসান উদ্দিন সামি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ছাত্রী বর্ষা ছাড়াও আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই যুবক। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।”
তিনি আরও জানান, আগামীকাল সকালেই ঘটনাটি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফিং করা হবে।
ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জোবায়েদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।