
যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার পর পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন যোগাযোগের সম্ভাবনার দুয়ারে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ কিলোমিটার রেলপথ। সিঙ্গেল লাইন হওয়ার কারণে এক ট্রেনের জন্য বসে থাকতে হয় অন্য ট্রেনকে। এ ক্রসিংয়ের চক্করে সময়ের ট্রেন পৌঁছায় অসময়ে। এলোমেলো হয়ে যায় শিডিউল।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী থেকে যমুনা সেতুর দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে নাটোরের আবদুলপুর জংশন থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন। ঈশ্বরদী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এবং রাজশাহী থেকে আবদুলপুর পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার-এ ১১৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন। আর সিঙ্গেল লাইনের কারণে পাসিংয়ের জন্য স্টেশনে ট্রেনকে লম্বা সময় দাঁড়াতে হয়; যা দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেলসেতু চালু হওয়ায় পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মনে যে আশার সঞ্চার হয়েছিল তাতে যেন কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল) ফরিদ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজশাহী থেকে আবদুলপুর পর্যন্ত মিটারগেজ ও ব্রডগেজ একই লাইন হওয়ায় যমুনা রেলসেতুর সুফল পাচ্ছে না রাজশাহীগামী ট্রেন। জয়দেবপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত না হলেও ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন হলে সেতুর সুফল মিলবে। জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন করার জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে।’
জানা গেছে, যমুনা রেলসেতু ঘিরে উত্তরের মানুষের স্বপ্ন বেড়ে গেছে। পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে এ অঞ্চলে বাড়বে শিল্পে বিনিয়োগ। একই সঙ্গে রাজশাহী থেকে কনটেইনার ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। তা ছাড়া কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যাশা এ অঞ্চলের মানুষের বেশ পুরোনো। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এ পথে পশ্চিমাঞ্চলের ৬৬টি ট্রেন ক্রসিংয়ের কারণে স্বাভাবিক গতি হারায়। এতে নষ্ট হয় সময়। দ্রুত ডাবল লাইন তৈরি করা না গেলে বাণিজ্যিক সুবিধা খুব বেশি মিলবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ রেলপথে চলাচল করেন সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসিম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। নাসিম বলেন, ‘যমুনা রেলসেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এ অঞ্চলের রেলপথ ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত নতুন সেতুর সুফল আমরা পাব না। কারণ রাজশাহী থেকে ঢাকা যাতায়াতে ১০-১২টি স্টেশনে পাসিংয়ের কারণে থামতে হয়। এতে প্রতি স্টেশনে প্রায় ১৫ মিনিট নষ্ট হয়। এ রেলপথ ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগবেই।’
রাজশাহীর ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, ‘জুট মিলের যে পণ্যগুলো আমরা রপ্তানি করি, সেগুলো রাজশাহী থেকে একেবারে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়। স্টেশন থেকে আবার পরে বন্দরে নিয়ে যেতে হবে, সে ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ ডাবল হয়ে যাবে। তাই ডাবল লাইন না হলে পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলসেতু আমাদের জন্য খুব একটা লাভজনক হবে না।’
সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘যমুনায় আলাদা রেলসেতু হলো। কিন্তু যত দিন রাজশাহী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত পুরো রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত না হবে, তত দিন সেতুর সুফল মিলবে না।’