
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে টানা নবম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘আমরণ অনশন ও শিক্ষক সমাবেশ’ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এদিন সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত শিক্ষক এসে যোগ দেন শহীদ মিনার চত্বরে। দুপুরের পর এলাকাজুড়ে শিক্ষকদের ঢল নামে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনকে ‘প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি—
(১) মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা।
(২) পূর্ণ উৎসব ভাতা প্রদান।
(৩) শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি বলেন, ‘আমাদের আজ সকাল দশটা থেকে আমরণ অনশন ও শিক্ষক সমাবেশ চলছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বিএনপি মহাসচিবের প্রতিনিধি হয়ে আমাদের সঙ্গে একাত্মবোধ প্রকাশ করেছেন ও বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফও উপস্থিত ছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নামাজ পড়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবর জিয়ারত করে শপথ নিয়েছি- দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরব না। সরকার ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া বাড়িয়েছে- এটা শিক্ষকদের সঙ্গে অবিচার। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত মাঠ ছাড়ব না।’
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সহ-সভাপতি এবিএম জাকারিয়া এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান একাত্মতা প্রকাশ করেন।
গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের প্রাণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে পারেননি। এত যৌক্তিক দাবি আজও বিবেচনা করেননি। আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শিক্ষকদের এই দাবির সঙ্গে একাত্মবোধ করছি। শিক্ষকরা যে দাবি তুলেছেন- ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ও ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা- এটা খুবই সামান্য বিষয়। ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটে এই দাবি পূরণে ১ হাজার কোটি টাকাও লাগবে না। এ সামান্য টাকার জন্য শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে, লাঠিপেটা খেতে হচ্ছে- এটা জাতির জন্য লজ্জাকর।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত উদ্যোগ না নেয়, তাহলে লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা ব্যাহত হবে- এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।’
নীলফামারী মডেল কলেজের কেমিস্ট্রির শিক্ষক মো. মনোয়ার হোসেন পাপ্পু বলেন, ‘আমরা আট দিন ধরে এখানে অবস্থান করছি। কারও পকেটে পয়সা নেই। যা টাকা নিয়ে এসেছিলাম সব শেষ। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ না খেয়ে আছেন; কিন্তু যতক্ষণ না দাবি আদায় হবে, ততক্ষণ আমরা রাজপথেই থাকব।’
বাংলা বিভাগের প্রভাষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদেরও তো পরিবার আছে। বাসায় সন্তানরা কী খাচ্ছে জানি না; কিন্তু এই অনশন থেকে সরে গেলে সম্মান হারাব। আমরা মরব, কিন্তু দাবির আগে ক্লাশে ফিরব না।’
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল কাজলা আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। আজ এখানে এসেছি কারণ শিক্ষক হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাই। শিক্ষকের জায়গা রাজপথে নয়, শ্রেণিকক্ষে; কিন্তু আমাদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে রাস্তায়।’
টাঙ্গাইলের সখীপুরের উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এসএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন দিন ধরে এখানে আছি। প্রচণ্ড রোদে অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকের পকেটে টাকা নেই, খেতে পারছেন না। একটু আগে দেখলাম একজন শিক্ষককে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে প্রশ্ন—শিক্ষকদের জীবন এত সস্তা কেন?’
শিক্ষক আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় শিক্ষক ফোরাম ছাড়াও বিএনপি ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহযোগী সংগঠন)।
অধ্যক্ষ আজীজি বলেন, ‘আমরা চাই, ছাত্রছাত্রীরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। সরকার এখনই আমাদের দাবি মেনে নিক, আমরা ক্লাশে ফিরব। নইলে এ আন্দোলন দীর্ঘায়িত হবে।’
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।
এদিকে চলমান আন্দোলনের কারণে দেশের প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন— ‘আমরা ক্লাশে ফিরব, কিন্তু মর্যাদা নিয়েই ফিরব।’