Image description
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন

‘কার্যক্রম নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের মাঠে না থাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকেই বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দল দুটির রাজনৈতিক ও নির্বাচনমুখী তৎপরতায়ও এটা লক্ষ করা গেছে। জামায়াত দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটে থেকে রাজনীতি ও নির্বাচন করলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে দল দুটি এখন কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায়। রাষ্ট্র সংস্কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি রাজনীতির মাঠেও তাদের মধ্যে রয়েছে দূরত্ব। নতুন এই রাজনৈতিক সমীকরণ মাথায় রেখে প্রতিটি আসনে ‘যোগ্য’ প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। আর বিদ্যমান অবস্থায় দুটি দলই এখন তৎপর ‘নির্বাচনী জোট’ গঠনে।

এদিকে জামায়াত এরই মধ্যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে মাঠে নামায় তপশিলের আগেই এবার দুই-তৃতীয়াংশ আসনে একক প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ (সবুজ সংকেত) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য কিছু প্রার্থীকেও ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে চায় বিএনপি। উদ্দেশ্য, নির্বাচনী প্রচারে যেন তারাও পিছিয়ে না পড়ে। অবশ্য তপশিলের পর সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালবেলাকে বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। তা ছাড়া বিএনপি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। ফলে আলাদা করে নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না। নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আর মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে প্রক্রিয়া চলছে। তবে কাউকে এখনো চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি নতুন পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন নির্বাচন করবে। নির্বাচনে যাওয়ার পরে আমরা দেখতে পাব—কারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। যারাই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হবে, তাদের গুরুত্ব সহকারে দেখব।

ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা ছাড়াও বামপন্থিসহ আরও কিছু দল নিয়ে একটি বড় নির্বাচনী জোট গঠন করতে চায় বিএনপি। নয়া রাজনৈতিক সমীকরণে এ প্রক্রিয়ায় জামায়াতের বাইরে ইসলামী দল এবং আলেমদেরও পাশে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ ধর্মীয় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পীরদের সঙ্গেও তারা সাক্ষাৎ করেছেন। এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সঙ্গেও এরই মধ্যে বিএনপির পর্দার আড়ালে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে।

এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার বর্তমান মতপার্থক্য ও দূরত্বের ব্যাপারটি মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত। অবশ্য রাজনৈতিক বাদানুবাদ বাদ দিয়ে রাজনীতি ও নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীর বিষয়টিকে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। জামায়াত প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ইলেকশন হলে তো প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কী আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেই নির্বাচন করেছে। সুতরাং উদ্বেগের কিছু নেই তো।

জানা গেছে, দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি জামায়াতের নির্বাচনী কৌশল সম্পর্কেও খোঁজখবর রাখছে বিএনপি। জামায়াতের ভোটারকেন্দ্রিক প্রচার, নারী ভোটারকেন্দ্রিক পরিকল্পনা বিষয়ে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে দলটি। এ ছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও এ সম্পর্কে কেন্দ্রকে অবহিত করছেন। তবে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বিএনপি। দলটি মনে করছে, তারা মাঠে স্বচ্ছ ইমেজসম্পন্ন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে সক্ষম হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী মাঠে তাদের অবস্থান সুসংহত হবে।

জানা গেছে, বিএনপি এবার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ তথা নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশাকে মাথায় রেখেই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করতে চায়। দলটি মনে করছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা-প্রত্যাশায় পরিবর্তন এসেছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটি মনে করছে, আগামী নির্বাচনে বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা অন্যতম ফ্যাক্টর হবে। বিএনপি এই তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে টানতে চায়। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিতর্কিত কাউকে প্রার্থী করবে না বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছ ইমেজের পাশাপাশি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাগত দক্ষতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এবার সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে যারা এলাকায় সুপরিচিত এবং যাদের বিরুদ্ধে কোনো চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, এমন অনেকের ভাগ্য খুলতে পারে। জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার শতাধিক আসনে নতুন প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, যে প্রার্থী আসনভিত্তিক সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, এলাকায় জনপ্রিয়, স্বচ্ছ ইমেজসম্পন্ন এবং বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা ছিল—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করব। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলের প্রার্থী কেমন, বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে বিবেচনার দিক থেকে হয়তো সেটা একটা বিষয় হতে পারে।