
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালু হচ্ছে এমন খবর ফেসবুকে শেয়ার করে স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন মোহাম্মদ আমীন (৫০) নামে এক প্রবাসী। তবে শনিবার (১৮ অক্টোবর) তার লাশ বহনের মধ্য দিয়েই সেই স্পিডবোটের যাত্রা শুরু হয়।
এর আগে, গত ৮ অক্টোবর ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় মোহাম্মদ আমীনসহ সন্দ্বীপের সাত প্রবাসী প্রাণ হারান। শনিবার রাত সোয়া আটটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাশগুলো পৌঁছায়। রাত ৯টা ২০ মিনিটে নিহত প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে। রাতেই তাদের লাশ সন্দ্বীপে পৌঁছায়।
নিহতরা হলেন আমিন মাঝি (৫০), মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন রনি (২৬)। রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে জানাজা শেষে তাদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।
প্রবাসী মোহাম্মদ আমীন সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী কব্বরের ছেলে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মাত্র এক দিন আগে সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালুর বিষয়ে ফেসবুকে ওই পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। ঘরে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁর। এর মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়েছিল। আলী কব্বর জানান, কিছুদিন পর দেশে এসে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করার কথা ছিল আমীনের।
দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মো. সাহাবুদ্দিনের পরিবারে মা–বাবা, স্ত্রী ও চার মাস বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে বিদেশ যাওয়া নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই গল্প করতেন তিনি। মাঝেমধ্যে ফেসবুকেও পরিবারকে নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা লিখতেন। মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে তিনি লেখেন, ‘মধ্যবিত্ত মানে হাজারটা স্বপ্ন, কিন্তু দিন শেষে ভাগ্যের খাতাটা শূন্য।’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায় দুর্ঘটনায় নিহত হওয়া সাত প্রবাসীর মধ্যে ছয়জনই অসচ্ছল। ভাঙা টিনের বাড়িই তাঁদের সম্বল। এর মধ্যে পাঁচজনেরই চার থেকে ছয় মাস বয়সী সন্তান রয়েছে।
দাফন শেষে প্রবাসী সাহাবুদ্দিনের পিতা মো. সিদ্দিক বলেন, ‘আমার জীবন তো ফুরাই যাইব, কিন্তু আমার সাহাবুদ্দিনের চার মাস বয়সী মেয়েটার কী হইব। ছেলে হারানোর শোকের মধ্যে ছোট্ট এই নাতিনটার ভবিষ্যতের কথা ভাইবতে গেলেই কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।’