Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে নির্বাচনি কর্মযজ্ঞে ঢুকতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আগামী ২০ অক্টোবর বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে এ সভা হবে। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসি কী ধরনের সহায়তা চায়, সে সম্পর্কে জানানো হবে।

এর আগে গত মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান, ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, র‌্যাব, বিজিবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তার সিনিয়র সচিব, পুলিশপ্রধান এবং আনসার ও ভিডিপিপ্রধানকে এ সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইতোমধ্যে সভার কার্যপত্রও প্রস্তুত করা হয়েছে। ইসির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভা উপলক্ষে প্রস্তুত করা কার্যপত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা কত ছিল এবং আগামী নির্বাচনে কেমন প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, এর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। ইতোমধ্যে কমিশন নির্বাচনে যে ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেখান থেকে সরে এসেছে। একই ভাবে কার্যপত্রে নির্বাচনে প্রার্থী, কর্মী-সমর্থক, নির্বাচনি কর্মকর্তা এবং ভোটারদের গতিবিধি নজরদারির জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) ব্যবহারের বিষয়ে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন, তা থেকেও সরে এসেছে। নির্বাচনি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রাক-প্রস্তুতিমূলক নির্বাচনি এ সভার কার্যপত্রে কম-বেশি নির্বাচনের জন্য সহায়ক ১০টি এজেন্ডা রাখা হয়েছে। তফসিল ঘোষণাপূর্ব ও পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা, সার্বিক আইনশৃঙ্খলার কাঠামো, নির্বাচনপরবর্তী কার্যক্রম, বিগত নির্বাচনের মূল্যায়ন যেমনÑআইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সিস্টেম লিংক এবং ভোটকেন্দ্রে উদ্ভূত সমস্যা প্রিসাইডিং অফিসার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় স্থাপন করে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার প্রস্তাব রয়েছে কার্যপত্রে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন এবং মেট্রেপলিটনের মধ্যে সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে যথাক্রমে ১৫ ও ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিল। এছাড়া বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য) সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ ও ১৭ জন করে দায়িত্ব পালন করেছিল। আগামী নির্বাচনে এ সংখ্যা বহাল রাখার পক্ষে কমিশন। কারণ, কেন্দ্র বৃদ্ধি না পাওয়ায় ইসির এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে প্রাক-প্রস্তুতি আইনশৃঙ্খলা সভায়।

তফসিল ঘোষণার আগে অবৈধ অস্ত্র রোধ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে কার্যপত্রে। একই ভাবে বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে প্রাক-প্রস্তুতি সভায় গুরুত্বারোপ করা হবে। মূলত এই মতবিনিময় সভায় কমিশন কী চায় সে বিষয়টি স্পষ্ট করবেন কমিশনের নীতিনির্ধারকরা।

গত ১৫ বছর দেশে ভোটারবিহীন নির্বাচন ও বিরোধী দল দমনে পুলিশকে ব্যবহার করেছিল তৎকালীন হাসিনা সরকার। ওই সময়ের পুলিশের অনেক সদস্য সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আত্মগোপনে চলে যান। যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ভাব অনেকটা গাছাড়া। এ নিয়ে সরকার ঘরে-বাইরে চাপে রয়েছে। এই ভঙ্গুর অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া বর্তমান ইসি ও অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব বিবেচনায় তফসিল ঘোষণার পর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগাম বার্তা হিসেবে এই প্রাক-প্রস্তুতিমূলক আইনশৃঙ্খলা সভায় বসতে যাচ্ছে কমিশন।