Image description
অগ্নিকাণ্ডে বন্ধ ফ্লাইট ওঠানামা , বাইরে অপেক্ষায় বিদেশগামী যাত্রী-স্বজনরা

হযরত শাহজালাল (রহ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার কারণে সাময়িকভাবে বিমান ওঠানামা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে পূর্বনির্ধারিত সিডিউলের বিদেশগামী যাত্রীরা বিমানবন্দরের মূল ফটক ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। তারা ভেতরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরাও টার্মিনালে উপস্থিত হয়েছেন, প্রিয়জনদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষায় রয়েছেন।

শাহজালাল বিমানবন্দরে কর্মরত একজন প্রকৌশলী জানান, অগ্নিকা-ের সময় আমি বিমানবন্দরেই ছিলাম। ভেতরে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছে। সবগুলো গেইট বন্ধ থাকায় ভেতর থেকে কেউ বাইরে যেতে পারছেন না। আবার বাহির থেকে কেউ ভেতরেও প্রবেশ করতে পারছেন না। ইতোমধ্যে কার্গো ভিলেজ থেকে সবগুলো দেশি-বিদেশি বিমানকে দূরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অগ্নিকা-ের ঘটনায় সেগুলোকে টার্মিনালে ভিড়তে দেয়া হয়নি। তিনি আরও জানান, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের মধ্যে বিমানের ৭৮৭ মডেলের তিনটি ফ্লাইট সন্ধ্যার পর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। আন্তর্জাতিক আরও ৬/৭টি ফ্লাইটের ঢাকা থেকে উড়াল দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু অগ্নিকা-ের কারণে সে সব ফ্লাইটের সব যাত্রী ভেতরে আটকা পড়েছে। এমনও হয়েছে যে, বোর্ডিং পাস হওয়ার পরেও সামান্য সময়ের ব্যবধানে তিনটি ফ্লাইট ছেড়ে যেতে পারেনি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটা ফ্লাইটকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট বিমান বন্দরে অবতরণ করতে বলা হয়েছে। আরও কয়েকটি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশ্যে আসার কথা। সেগুলোকেও হয়তো একইভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণের জন্য বলা হবে। তবে সবগুলো ফ্লাইট যে চট্টগ্রাম ও সিলেটে অবতরণ করতে পারবে তা বলা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ফ্লাইটগুলোকে জরুরিভিত্তিতে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে পাঠানো হতে পারে।

গতকাল শনিবার রাতে বিমানবন্দরের প্রবেশপথে অপেক্ষমাণ কয়েকজন যাত্রী জানান, আগুনের কারণেই গাড়িগুলো টার্মিনাল ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে যাত্রী ও স্বজনদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের মূল প্রবেশপথের সামনেই মানুষজনের ভিড় জমেছে।

অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শাহজালালে আসা যাত্রীদের স্বজনরাও অপেক্ষা করছেন বিমানবন্দরের গেটের বাইরে। তাদের অনেকেই ঢাকায় পৌঁছে প্রিয়জনদের নিরাপদে দেখতে চাইছেন। কেউ কেউ উৎকণ্ঠার মধ্যেও বিমানবন্দরের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে অবস্থান করছেন।

জালাল আহমেদ নামের এক যাত্রী বলেন, রাতের ফ্লাইট ছিল দুবাইয়ের, কিন্তু এখন বাইরে বসে আছি। কখন ভেতরে ঢুকতে পারব জানি না। এমন অবস্থায় অনেক কষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের জরুরি কাজে যেতে হবে তাদের জন্য খুব ঝামেলা। সামিয়া হোসেন নামের আরেক বিদেশগামী যাত্রীর স্বজন বলেন, আমার ভাইয়ের ফ্লাইট ছিল মালয়েশিয়া যাওয়ার, এখন গেটেই আটকে আছি। ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

বিড়ম্বনার কথা জানিয়ে শারমিন আক্তার নামের ফিরতি যাত্রীর আত্মীয় বলেন, আমার আত্মীয় ভারত থেকে ফিরছেন, কিন্তু এখানে নামতে পারেননি। আমরা গেটের সামনে বিকেল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। অন্যদিকে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এলে ধীরে ধীরে ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক করা হবে। এখন আপাতত ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রাখা হয়েছে। একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আশা করছি রাত ৯টার পর থেকেই যাত্রীদের প্রবেশ এবং বের হওয়ার গেইট খুলে দেয়া হবে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি এও জানান যে, একটি গেটের যাত্রীদের বোর্ডিং পাসের জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের ফ্লাইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে হয়তো যাত্রীদের খানিকটা হেঁটে গিয়ে ফ্লাইটে উঠতে হবে।

অন্যদিকে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, এরইমধ্যে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দরে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করেছে। এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও ট্যাক্সিওয়েতে আটকে আছে।
এদিকে এসব ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে দুবাই ও শারজাগামী দুইটি ফ্লাইটের যাত্রী চেক-ইন আপাতত বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক হাজার যাত্রী।

অন্যদিকে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ঢাকাগামী কয়েকটি ফ্লাইট বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ জানায়, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও কলকাতায় একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করেছে। এদিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও ট্যাক্সিওয়েতে আটকে আছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কার্গো ভিলেজ এলাকার আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল পুনরায় শুরু হবে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় এয়ারফিল্ড বন্ধ রয়েছে। এতে ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের জনসংযোগ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৮টি ডোমেস্টিক ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল জানান, সন্ধে ৬টা পর্যন্ত ৮টি ফ্লাইট ডাইভার্ট হয়ে চট্টগ্রামে এসেছে। এর মধ্যে ৪টি অভ্যন্তরীণ এবং ৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। এসব ফ্লাইটের মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ২টি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২টি ফ্লাইট রয়েছে। এ ছাড়া বাকি ফ্লাইটগুলো এয়ার অ্যাস্ট্রা এবং এয়ার অ্যারাবিয়ার।

এ ছাড়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুন লাগার ঘটনায় সিলেটে অবতরণ করেছে ২ ফ্লাইট। এছাড়া মালদ্বীপের আরেকটি ফ্লাইট সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এরইমধ্যে ৬টা ৬ মিনিটে সিঙ্গাপুর থেকে ১৫৩ যাত্রী নিয়ে অবতরণ করেছে বাংলা এস্ট্রা-৩১০ উড়োজাহাজটি। এটিও ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকায় সব ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রাখায় সিলেটে ফ্লাইটগুলো অবতরণ করছে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, এ বিমানবন্দরে ঢাকার ৫টি ফ্লাইট ডাইভার্ট করা হয়েছে। তবে অন্যগুলোর অবতরণের সময় এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। এর আগে বিকেল ৩টা ৩১ মিনিটে রিয়াদ-ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৭৭ ফ্লাইট (বিজি-৩৪০) ৩৯৬জন যাত্রী নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি ফ্লাইট অবতরণ করেছে। সর্বশেষ সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটের দিকে সিঙ্গাপুর থেকে এয়ার এস্ট্রার ফ্লাইট এসে অবতরণ করেছে। মালদ্বীপ থেকে আসা ফ্লাইটটিও অবতরণ করবে সিলেটে। তবে ওই ফ্লাইটের যাত্রী সংখ্যা জানা যায়নি। তিনি বলেন, রিয়াদগামী ফ্লাইটের ১২ জন যাত্রী সিলেট থেকে নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে বেরিয়ে গেছেন। তবে অন্যদের আপাতত অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফ্লাইট অপারেশন অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু ঢাকায় কোনো বিমান নামবে না, তাই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।