Image description
 
রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় সাময়িকভাবে উড়োজাহাজের ওঠানামা স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার বিকেলেছবি: দীপু মালাকার

প্রায় প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। যাত্রীরা টার্মিনাল দিয়ে চলাচল করেন। সেখানেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

কিন্তু পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন। পণ্যের চালান বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই তা বিমানে তুলে বিদেশে পাঠানো হয় না। কিংবা বিদেশ থেকে পণ্যের চালান বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তা খালাস হয় না। শুল্ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। এটিকেই কার্গো ভিলেজ বলা হয়।

আজ দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে (আমদানি কমপ্লেক্স) ভয়াবহ আগুন লাগে। এ পর্যন্ত ২০টি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। বিপুল পরিমাণ মালামাল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

কার্গো ভিলেজ কী

পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয় তিনভাবে। এগুলো হলো স্থলপথ, সমুদ্রপথ ও আকাশপথ।

আকাশপথের আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিমানবন্দর থেকে। বিমানবন্দর দিয়ে সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ওজনের মেশিনপত্র, তৈরি পোশাক, শাকসবজিসহ পচনশীল পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি বাংলাদেশে রপ্তানি ও আমদানি হয়। ডিএইচএলসহ বিশ্বখ্যাত কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও এ দেশে আকাশপথে পণ্য ও দলিলপত্র (ডকুমেন্ট) আসে।

শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেখানে আমদানি-রপ্তানির পণ্য রাখা হয়, সেই জায়গা বা গুদামটিকে কার্গো ভিলেজ বলা হয়। অনেক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স থাকে। যেমন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স আছে। আজ দুপুরে আমদানি কমপ্লেক্সে আগুন লেগেছে।

কার্গো ভিলেজে কী কী থাকে

কার্গো ভিলেজে আমদানি-রপ্তানির পণ্য জাহাজীকরণ বা খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। শুল্কায়ন শেষে সেখান থেকে চালান বুঝে নেন আমদানিকারক বা আমদানিকারকের প্রতিনিধিরা। শুল্কায়ন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে কত দিন পণ্য কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্সে থাকবে।

সাধারণত পচনশীল পণ্য বা শাকসবজি, ফলমূল হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পণ্য জাহাজীকরণ হয় কিংবা খালাস হয়।

আবার অনেক তৈরি পোশাক মালিকেরা লিড টাইমের মধ্যে বিদেশি ক্রেতার কাছে পণ্যের চালান পৌঁছাতে দ্রুত বিমানযোগে পণ্য পাঠান। তখন হয়তো দু-তিন দিনের মধ্যেই পণ্যের চালান বিদেশে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে যায়।

আবার কার্গো বিমানে (পণ্যবাহী বিমান) স্পেস (জায়গা) সংকটের জন্য রপ্তানিমুখী পণ্যের চালানকে কয়েক দিন কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্সে অপেক্ষা করতে হয়। সে জন্য কার্গো ভিলেজে জায়গার ভাড়া দিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত পণ্য রাখেন দেশের রপ্তানিকারকেরা।

আবার আমদানিকারকেরা শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মালামাল খালাস করতে কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হতে পারেন। তখন পণ্যের চালান আমদানি কার্গো ভিলেজে থাকে।

মোট কথা, যেকোনো পণ্যের চালান আমদানি ও রপ্তানির যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স থেকে। সেখানে শুল্ক বিভাগ, বিমান সংস্থা, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ও থাকে। থাকে নানা ধরনের দলিলপত্র।

আগুনের কারণে কী ক্ষতি হতে পারে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ (আমদানি কমপ্লেক্স) ভয়াবহ আগুন লাগায় আমদানি করা শত শত টন পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি হবে—এটা ধরেই নেওয়া যায়। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন আমদানিকারকেরা। বিমা দাবি করে এসব পণ্যের ক্ষতিপূরণ আদায় করাও বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আমদানির কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বোঝা যাবে, ক্ষয়ক্ষতি কত হয়েছে, কবে নাগাদ আবার কার্গো ভিলেজ চালু করা যাবে।

আকাশপথে পণ্য পরিবহনকারী আরএমকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান ইবনে আমিন সোহাইল প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় আমদানিকারকদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বোঝা যাবে কোন কোন আমদানিকারকের পণ্য পুড়েছে। সেই অনুযায়ী বিমা দাবিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেছেন। কার্গো ভিলেজে আমদানি কমপ্লেক্সে তাঁদের স্যাম্পল বা নমুনা পণ্যও আছে।

তবে বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের আগুন লাগল এবং তা নিয়ন্ত্রণে আনার সময় অনেক বেশি লাগল। তাহলে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ বন্দোবস্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুরক্ষা শ্রেণিতে অবনতি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।