
Mirza Galib ( মির্জা গালিব)
জুলাইয়ের বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম, ইনফরমেশনের সহজলভ্যতা, সোশ্যাল মিডিয়া, গ্লোবালাইজেশান - এইগুলো এই সময়ের বৈশিষ্ট্য। প্রথমে তরুণদের হাত ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হইলো, এরপর সারা দেশের অনেকগুলো ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির ল্যান্ডস্লাইড বিজয় পাইল। এই যে তরুণদের ম্যান্ডেট - এই ম্যান্ডেট নিয়ে শিবির কি করবে, কি করা উচিত?
এক, শিবিরকে প্রথমে মনে রাখতে হবে, এইটা নতুন সময়, নতুন প্রজন্ম। অতীতে শিবির নিজেই কিছু কিছু জায়গায় যে ক্যাম্পাস দখল করে রাজনীতি করছে, সিট পলিটিক্স করছে, শিক্ষক নিয়োগে কিছুটা হস্তক্ষেপ করছে - এইটা পুরাপুরি বাদ দেবার সময় আসছে। ক্যাম্পাসে সকল মতের ছাত্র-ছাত্রীরা থাকবে, সবার অধিকার সমান হবে। ক্যাম্পাস হবে আনন্দের জায়গা। মন ভরে পড়াশোনা করার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করার, বিতর্ক করার জায়গা। হলের সিট বরাদ্দ শিক্ষকরা আর ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সদস্যরা মিলে একটা সুষ্ঠু নিয়মের অধীনে করবেন। এইখানে কোন লাঠিয়ালগিরি বা জমিদারগিরি থাকবে না। শিক্ষক নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, দলীয় প্রভাবে না।
দুই, ক্যাম্পাসে যে কোন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকতে হবে। কোন ছাত্র আরেকজন ছাত্রের গায়ে হাত তুলতে পারবে না। পারবে না মানে পারবে না। ফুলস্টপ। কোন গেস্টরুম কালচার থাকবে না। জোর করে মিছিলে বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়ে যাওয়া থাকবে না। আল্লাহর বান্দারা স্বাধীন মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে আসে, তাদের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করতে হবে সম্মানের সাথে।
তিন, ছাত্রদের জাতীয় রাজনীতির দলীয় এজেন্ডায় জড়ানো যাবে না। ছাত্ররা শুধু বড় বড় জাতীয় এজেন্ডায় প্রয়োজন পড়লে কথা বলবে, এক্টিভিজম করবে। দলীয় রাজনীতি করবে রাজনৈতিক দল এবং তাদের দলীয় অ্যাক্টিভিস্টরা। ভারতীয় আধিপত্যবাদ, ইসলামোফোবিয়া, সংবিধানের মূলনীতি, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র - এই রকম সিলেকটিভ কিছু ইস্যুতে দলীয় বিভাজনের বাইরে আদর্শিক ও জাতীয় অবস্থান থাকবে ছাত্রসমাজের।
চার, ছাত্রদের মূল এজেন্ডা হবে শিক্ষা এবং ক্যাম্পাসভিত্তিক, ছাত্রসমাজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবি একটা প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। শিক্ষকদের বেতনস্কেল উন্নত করা, ছাত্রদের জন্য অন-ক্যাম্পাস কাজের সুযোগ বাড়ানো, স্কলারশিপ বাড়ানো, এবং আন্ডারগ্রাজুয়েট গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রায়োরিটি হতে পারে। শিক্ষকদের জন্য পেডাগজি ট্রেনিং একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার ইনস্টিটিউটকে লিডিং এ রেখে পেডাগজি ট্রেনিংকে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। গ্লোবাল মার্কেটে উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারিভাবে শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা করা উচিত। এইটা করতে পারলে আমরা অনেক ছাত্রছাত্রীকে গ্লোবাল মার্কেটে নিয়ে যেতে পারব। শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% বরাদ্দের দাবির পাশাপাশি এইটাও ছাত্র সমাজের একটা বড় দাবি হইতে পারে।
কোন জাতির জীবনে পরিবর্তনের ডিফাইনিং মোমেন্ট সব সময় আসে না। ছাত্রশিবিরের সামনে সময় আসছে জাতির স্বার্থে একটা এক্সাম্পল সেট করার। আনন্দে আত্মহারা না হয়ে, বিজয়ের অহংকার না দেখিয়ে পরিবর্তনের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য প্ল্যান নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। ক্যাম্পাসগুলোতে যদি রাজনৈতিক কালচারের পরিবর্তন হয়, জাতীয় রাজনীতির কালচারও বদলে যেতে বাধ্য হবে।
আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে হাটছি ইনশাআল্লাহ। আগামী নির্বাচনে কে জিতবে এইটা ছাত্রশিবিরের চিন্তার জায়গা না, আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে - এইটা হোক ছাত্রশিবিরের কনসার্নের জায়গা।