
তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দ্রুত শুরুর দাবিতে মশাল প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করেছে রংপুর বিভাগের হাজার হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে ১০৫ কিলোমিটার জুড়ে একযোগে মশাল প্রজ্জ্বলন করা হয়। লালমনিরহাট তিস্তা পয়েন্টে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, সাবেক উপমন্ত্রী ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রংপুর বিভাগের তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের লালমনিহাট জেলা সমন্বয়ক একেএম মমিনুল হক, আফজাল হোসেন, বাসার সুমন, সায়েদুল ইসলাম পাটোয়ারী সাজু, এবিএম ফারুক সিদ্দিকীসহ তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার মানুষ।
আসাদুল হাবীব দুলু বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা কাজ যদি নভেম্বরে শুরু করা না হয় তবে জাতীয় নির্বাচনের কারণে এ কাজ আরও পিছিয়ে যাবে। আমাদের নিজস্ব যে অর্থ রয়েছে। তা দিয়েই অন্তত তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করা উচিত। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের জন্য রাজধানী অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, দ্রুত তিস্তা মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। তিস্তা সমস্যা কোনো স্থানীয় ইস্যু নয়। এখন এটি একটি জাতীয় সমস্যা। এর আগে গত ৫ই অক্টোবর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় পদযাত্রা ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এরপর উপজেলা পর্যায়ে গণমিছিল ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরুর দাবিতে কুড়িগ্রামে নদী পাড়ে মশাল প্রজ্বলন করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি ও স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বুড়িরহাট এলাকায় তিস্তা নদীর পাড়ে এ কর্মসূচির আয়োজন করে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি। এতে তিস্তা পাড়ের সহস্রাধিক মানুষ মশাল জ্বালিয়ে নদী পাড়ের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
তিস্তা পাড়ের মানুষের দাবি, যুগের পর যুগ ধরে তিস্তার করাল গ্রাসে বার বার তাদের ঘর-বাড়ি ফসলী জমি বিলীন হলেও তিস্তার স্থায়ী ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিগত কোনো সরকারই। তাই তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই তিস্তা মহাপরিকল্পণার কাজ শুরুর দাবি তাদের। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাট এলাকার মজিবর রহমান জানান, এ পর্যন্ত তিস্তার ভাঙনে ৪ বার বসতবিটা হারিয়েছি, ফসলী জমি হারিয়েছি। বছরের পর বছরের ধরে শুনে আসছি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু হচ্ছে না। তাই এবার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল মিছিল নিয়ে নদীর পাড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
কর্মসূচিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সদস্য সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ, অধ্যাপক হাসিবুর রহমান হাসিব, রাজারহাট উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আনিছুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। তিস্তা নদীরক্ষা কমিটি কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, প্রতি বছর তিস্তার ভাঙনে শত শত পরিবার বসতভিটা ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বার বার প্রতিশ্রুতির পরেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না তিস্তা মহাপরিকল্পনা। এজন্য তালবাহানা না করে তিস্তা পাড়ের হাজার হাজার মানুষকে বাঁচাতে অর্ন্তবর্তী সরকারের সময় তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।