
জুলাইযোদ্ধাদের আইনগত দায়মুক্তি দিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৫ দলের স্বাক্ষর করা জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করা হচ্ছে। যদিও দলগুলো আগে থেকে মুদ্রিত অঙ্গীকারনামায় সই করেছে। ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সংশোধনের সিদ্ধান্ত কার্যকরে অঙ্গীকারনামা পুনঃমুদ্রণ করা হবে। সাত দফা অঙ্গীকারে সনদকে জনগণের অভিপ্রায়ে প্রণীত বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে দলগুলো।
দায়মুক্তি এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সংসদ এলাকায় আন্দোলনে নামেন জুলাইযোদ্ধারা। শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আগে দুপুর ১২টার দিকে তারা সংসদ ভবনের গেট ভেঙে দক্ষিণ প্লাজার অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে যান।
তখন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাদের বলেছেন, সনদের অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফা সংশোধন করে জুলাইযোদ্ধাদের আইনি সুরক্ষা দেওয়া হবে। জুলাই আহতদের রাষ্ট্রীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি, আহতদের যথোপযুক্ত সহায়তা, আইনগত দায়মুক্তি, মৌলিক অধিকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়গুলো পঞ্চম দফার অঙ্গীকারে যুক্ত করা হয়েছে।
যোগাযোগ করলে রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনকে জানায়, এ পরিবর্তনে তাদের আপত্তি নেই। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করতে গিয়ে নিহত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুর বিচার না করার দাবি করছেন জুলাইযোদ্ধারা।
শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে এই দাবিকে সমর্থন করেন। তিনি লেখেন, সনদের নম্বর দফা সংশোধিত হওয়া উচিত। কারণ, গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বাহিনী এবং তাদের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হানাদার বাহিনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়ে, নির্বিচার গণহত্যা চালায়। তবে জনগণের প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনীর কিছু লোকও প্রাণ হারায় (তারা গাদ্দার, বিশ্বাস ঘাতক)। জনতার আদালতে তাদের বিচার হয়ে গেছে। তাদের বিচার গণঅভ্যুত্থানের যুদ্ধের ময়দানে সম্পন্ন হয়ে গেছে।
অঙ্গীকারনামার পঞ্চম দফায় বলা হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানপূর্ব ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এবং গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যার বিচার করা হবে। শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, শহীদ পরিবার এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
যা আছে অন্য অঙ্গীকারে
প্রথম দফা বলা হয়েছে, জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে প্রণীত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত জুলাই সনদকে রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল হিসেবে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো।
দ্বিতীয় অঙ্গীকারে বলা জয়েছে, রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে জনগণের অভিপ্রায়ই সর্বোচ্চ আইন। জনগণের অভিপ্রায়ের সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি হিসেবে জুলাই সনদকে গ্রহণ করেছে দলগুলোকে। সনদকে পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে তপশিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করবে।
পরের অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, স্বাক্ষরকারী দলগুলো সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আদালতে তুলবে না। বরং সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। চতুর্থ অঙ্গীকার হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যকে সাংবিধানিক তথা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
ষষ্ঠ অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, সনদে যেসব সংস্কারের সিদ্ধান্ত রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে সংবিধান এবং আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন করা হবে।
সপ্তম অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, সনদের যেসব সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো, কালক্ষেপণ না করেই দ্রুততম সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাস্তবায়ন করবে।