
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর তিনটি টার্মিনাল লালদিয়া, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য ইজারা দিতে দেওয়া হবে না।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বন্দর রক্ষা ও করিডোরবিরোধী আন্দোলন’ ব্যানারে সমাবেশ করে সংগঠনটি।
ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি ডা. এম এ সাঈদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ। পরে একটি মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা. ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন খান, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএলের সভাপতি গৌতম শীল, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াত, বাংলাদেশ গৃহশ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ময়না আক্তার ও বাংলাদেশ কৃষি ইউনিয়নের নেতা কৃষিবিদ শ্যামল বিশ্বাস।
সমাবেশে আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, ‘ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ডিসেম্বর মাসে চুক্তি করবেন। বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি করতে দেওয়া হবে না। দেশের জনগণের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো অধিকার ড. ইউনূসের নেই।’
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আগেও ১৯৮ বছরের জন্য বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজপথ ও আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হয়েছিল। ড. ইউনূস বলেছেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে নাকি বর্বর থেকে সভ্য হয়েছি। বলতে চাই, আমরা সভ্যই ছিলাম। আপনি বর্বর হয়ে থাকলে সভ্য হয়ে উঠুন।’
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘শুধু বিদেশিদের সুবিধা করে দিতেই ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চান। এর সঙ্গে বিদেশি শক্তির ভূরাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের সেই এখতিয়ার নেই।’
গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর যে স্বপ্ন দেখেছি, তা বেহাত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে হাঁটছে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডা. এম এ সাঈদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করা একটি মুক্তির আন্দোলন। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন, তাদের বন্দর রক্ষা আন্দোলনে যুক্ত হতে আহ্বান জানাই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী যে কোনো কর্মকাণ্ড প্রতিহত করা হবে।’
প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহ আলম, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লুনা নূর, মানবেন্দ্র দেব, ফয়েজ উল্লাহ, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের অন্যতম নেতা অনন্ত ধামাই ও জাতীয় শ্রমিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক কনক বর্মণ প্রমুখ।