Image description
 

ইসরাফিল মোল্লা। নগদহাট বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ফেলনা গ্রামের বাসিন্দা। ব্যবসার কাজে প্রায় চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করেন। তিনি সে দেশের বিমানবন্দর, হোটেল, হাসপাতাল ও পর্যটন এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সেবায় মুগ্ধ। এর আগে ভারত ভ্রমণ করে আশানুরূপ সেবা পাননি। ইসরাফিল মোল্লার মতো ভ্রমণপ্রিয় অনেক বাঙালির অভিজ্ঞতা একই রকম। তাঁর দাবি, এশিয়ার বৃহৎ বিচিত্র দেশ হিসেবে চীন জনপ্রিয়। চীনের সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং খাবারের বৈচিত্র্য আকর্ষণ আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলো বাংলাদেশিদের পছন্দের শীর্ষে। ফলে চীন ভ্রমণে বাংলাদেশিদের আগ্রহ বাড়ছে।

 
 

জানা গেছে, চীনের প্রতিটি অঞ্চল পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। সেখানে পরিবেশগত সৌন্দর্য, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক সম্প্রীতি, মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা, সাজসজ্জা ও পোশাক, আচার-শিষ্টাচার অত্যন্ত সুন্দর। চাইনিজরা খুবই স্বাস্থ্যসচেতন। তাদের শারীরিক সৌন্দর্য সবাইকে অবাক করে দেয়। সে দেশের কে ১৮ বছর বয়সী আর কার বয়স ৬৮ তা দেখে বোঝার উপায় নেই। এর কারণ হলো তারা সবাই শারীরিকভাবে এতটাই ফিট যে ১৮ বছর বয়সীকে টেক্কা দেয় ৬৮ বছরের মানুষেরা। শারীরিকভাবেও তারা যেমন ফিট, ঠিক তেমনই তাদের ত্বক দেখলেও যে কেউ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাইনিজদের জীবনধারণ পদ্ধতিই তাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে। তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই সুস্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি। তারা ভাতের সঙ্গে লবণ খান না, পদ্মপাতার চা পান করা ও যোগ ব্যায়ামকে প্রাধান্য দেয়।

 

ভ্রমণপ্রিয় অনেক বাংলাদেশি তরুণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে পৃথিবীর প্রায় দেশ এখন চীনের ওপর নির্ভর করে। বলা চলে, বাংলাদেশের অধিকাংশ জিনিসের বাজার চীন নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বাংলাদেশে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে আরও বিনিয়োগ করবে। এক কথায়, ব্যবসায় চীন বাংলাদেশের নিত্যদিনের সঙ্গী। এছাড়া চীনের সংস্কৃতি এবং তা উদযাপনের ধরন তাদের প্রতি আকর্ষিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। সেখানে রয়েছে বেইজিংয়ের নিষিদ্ধ শহর, প্রাচীন প্রাসাদ, দ্যা সামার প্যালেস, লি নদী, গুইলিন ক্রুজিং, সুঝো, জিয়াংসুর ক্লাসিক্যাল গার্ডেন, বিখ্যাত দ্যা গ্রেট ওয়াল, হলুদ সাগর, যা এশিয়ার ৬৭০০ কিলোমিটার পথ পর্যন্ত বিস্তৃত। আরও রয়েছে অগণিত প্রাচীন উপাসনালয়, যা ধর্ম পরিচালনার জন্য তৈরি হয়েছিল। সব দিক থেকে তারা উন্নয়নমুখী।

 

টুরিস্ট মো. বাবু বলেন, চীনের বেইজিংয়ে বেড়াতে গিয়ে আমি আমার নিয়ম মতো সকাল ৬টার সময় জগিংয়ের জন্য বের হলাম। ধারণা ছিল রাস্তা ফাঁকা পাবো, দৌড়ানো এবং ছবি তোলা দুটোই আরামে হবে। কিন্তু বের হয়ে দেখি রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা মোটামুটি কম নয়। ৭টার মধ্যে পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে গেল রাস্তা। রাস্তায় জগিং করছেন আমার মতো বিদেশিরাই, চাইনিজরা নয়। তারা ছুটছেন কাজে। তাদের সকাল হয় ৫টার আগে। বর্তমানে চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। এটা সম্ভব হয়েছে এই সুশৃঙ্খল মানবসম্পদের উন্নয়নেরই মাধ্যমে। আর সেটা চীনে বেড়াতে গেলে সহজেই বোঝা যায়।

 

চীনের হাংজৌ ডিয়ানজি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মহসিন কবির বলেন, সুপ্রশস্ত আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, উন্নত ল্যাবরেটরি এবং সমৃদ্ধ লাইব্রেরি সব মিলিয়ে এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাংজৌ ডিয়ানজি ইউনিভার্সিটি। এখানে ক্যান্টিনে মুসলিমদের জন্য আলাদা হালাল খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবহারিক ও নানা প্রকার উদ্ভাবন নিয়ে সেখানে শিক্ষার্থীরা কাজ করেন।

 

চীনে চিকিৎসা নেয়া চৌদ্দগ্রামের ব্যবসায়ী আবদুল মমিন বলেন, কুনমিংয়ে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য অনেক উচ্চমানের হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে ইউনান ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল, কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের সাথে অনুমোদিত হাসপাতাল, ইউনান কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, ইউনান ক্যানসার হাসপাতাল এবং কুনমিং থংরেন হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য। এই হাসপাতালগুলো বাংলাদেশি রোগীদের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক মেডিকেল বিভাগ চালু করেছে এবং বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। যেমন অ্যাপয়েন্টমেন্ট, অনুবাদক, বিমানবন্দর থেকে পরিবহন এবং ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে মানানসই আবাসন। তাদের আন্তরিক সেবায় যে কেউ মুগ্ধ হবেন।

 

নগদহাট বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসরাফিল মোল্লা বলেন, ‘চীন ভ্রমণে বাংলাদেশিদের আগ্রহের মূল কারণ হলো, সেখানে হোটেল-রেস্তোরাঁয় ট্রান্সলেটর রয়েছেন। ফলে সহজেই ভাষা অনুবাদ করে সেবা গ্রহণ করা যায়। তারা প্রযুক্তির আপডেট ভার্সন ব্যবহার করে ভ্রমণকারীদের হয়রানিমুক্ত সেবা দিচ্ছেন’।

 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এএফএম রাসেল পাটোয়ারী বলেন, চীন একটি সৌন্দর্যময় দেশ। সেখানে কৃষি ও বনায়ন, মৎস্য চাষ, খনিজসম্পদ আহরণ, পশুপালন, শিল্প উৎপাদন, নির্মাণ, ইউটিলিটি, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন ও যোগাযোগ, ব্যাংকিং ও বিমা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা, পর্যটন, গবেষণা ও উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা সব ক্ষেত্রেই চীনের মানুষ আন্তরিকভাবে কাজ করে। কাজকে প্রাধান্য দিয়েই তারা অর্থনীতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। তাছাড়া চীনের প্রতিটি অঞ্চলেই ভ্রমণ করার মতো জায়গা রয়েছে। ভিসা পেতে সহজ ও আগে থেকেই কম দামে টিকিট পাওয়া যায়। দেশটির বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত সকলের নজর কাড়ে। খরচও তুলনামূলক অন্যান্য দেশের চেয়ে কম।

 

চীন-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ছাত্রনেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে চীনের ভূমিকা অপরিসীম। অথচ ভারত শুধু তাদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছে। সম্প্রতি চীন বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করেছে। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সাথে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে বলে দাবি করেন তিনি।