
অনিশ্চয়তা নিয়েই জুলাই জাতীয় সনদ সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ বিকালে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় এই সনদে সই করবে। তবে জুলাই সনদ প্রণয়নে যুক্ত সব দল সই করছে না। কয়েকটি দল সনদে সই করবে না এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না বলেও জানিয়েছে। অন্যদিকে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন আদেশের রূপরেখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া সইয়ের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা ইসলামী দলগুলো সইয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তারা জানিয়েছে সনদের চূড়ান্ত কপি দেখে সইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। শেষ মুহূর্তে এই দলগুলো অবস্থান পাল্টাতে পারে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন নেতারা। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অবশ্য সনদে সইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠানে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে-সব দলের মতামত বিবেচনায় নিয়েই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য তৈরি হয়েছে এবং কেউ চাইলে পরেও সই করতে পারবে।
প্রায় ৯ মাস ধরে চলা কার্যক্রমের মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়েছে জুলাই সনদ। শুক্রবার বিকাল চারটায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারের উপদেষ্টা ও বিদেশি মিশনের প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যাচ্ছে না এনসিপি!
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেয়ার ধরন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ‘থাকবে না’ বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, যে অনুষ্ঠানটা হতে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর। যে আইনি ভিত্তির কথা আমরা বলছি, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর কিন্তু একটি আনুষ্ঠানিকতা। জুলাই সনদ ইতিমধ্যেই প্রণীত হয়েছে। সেই সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া আগাবে।
তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রেরও একটা আইনি ভিত্তি দেয়ার কথা বলেছিলাম। সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের টেক্সট বা শব্দচয়নেও একটা প্রতারণা করা হয়েছে। সেটা আমাদেরকে দেখানো হয়নি। আগে যেটা দেখানো হয়েছে ঘোষণাপত্র পাঠের সময় সেটা অনেক পরিবর্তিত ছিল এবং অনেক কমপ্রোমাইজ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আমরা আরেকটা ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না যেটার কোনো মিনিং নাই। আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হবো না।
তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের দাবি ছিল ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ এবং নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা। কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্য এই অভ্যুত্থান হয়নি। সেই সূত্র ধরেই আমরা নতুন বাংলাদেশ ও সংস্কারের কথা বলেছি।
এনসিপি’র আহ্বায়ক বলেন, জুলাই সনদ তৈরির প্রসঙ্গ যখন আসলো তখন আমরা বলেছিলাম এটার একটা আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কতোগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে আসাই বড় কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলে সেটা বাস্তবায়ন করবে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। অতীতে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরেও দেখেছি এই ঘটনাগুলো ঘটেনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের এই দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পরই তবেই তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর আয়োজনটা জনগণের সঙ্গে একটা ছলচাতুরীর মতো হবে। আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে চাই না। একটা বিষয় অস্পষ্ট রেখে সবাই এক জায়গায় এসে একটা বিশাল সেলিব্রেশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর করার আয়োজনের কোনো অর্থ নেই।
এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে সাংবিধানিকভাবেই ফ্যাসিবাদী কাঠামোর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা বঞ্চিত ছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে একজন ব্যক্তির করায়ত্ত করার উপযোগী করে সংবিধানকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়াও এই সংবিধানে অনুপস্থিত থেকে গেছে।
আখতার বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকে নাই। বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ চব্বিশের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবহিদিতার সংবিধান প্রণয়নের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাষ্ট্রের গঠনগত জায়গায় যে ফ্যাসিবাদী উপাদান রয়েছে সেগুলোকে পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান করা প্রয়োজন ছিল। একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা।
এনসিপি সরকারের সংস্কারের কর্মযজ্ঞে ‘যথাযথভাবে অংশ নিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর মধ্যে মতোবিরোধ থাকলেও এখন ৩০টিরও অধিক দল ও জোট জুলাই সনদ প্রণয়নের দিকে অগ্রসর হয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে তাদের মূল দাবিগুলো হলো- ১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ‘টেক্সট’ এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। ২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। যেহেতু তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে আদালতের মতামত নেয়া হলেও তার ক্ষমতার বৈধতার মূলে রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। ৩. জুলাই সনদের যে ৮৪টি বিষয় রয়েছে সেগুলো একত্রে গণভোটে যাবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে। ৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের উপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতা বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে- বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।
স্বাক্ষর করবে না চার বাম দল: বিদ্যমান সংবিধানের চার মূল নীতিকে বাদ দিয়ে জুলাই সনদ হলে সেই সনদে স্বাক্ষর করবে না চার বাম দল। দলগুলোর নেতারা বলেছেন, আদালতে প্রশ্ন করা যাবে না এমন বিষয়ে অঙ্গীকার করতে হয় এমন সনদে স্বাক্ষর করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। গতকাল পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বাংলাদেশ জাসদ যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলগুলোর নেতারা। সংবাদ সম্মেলনের শিরোনাম ছিল- ‘কেন আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারছি না’। এতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ৭টি কারণ তুলে ধরা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণগুলো সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, কেবল সেসব বিষয়েই স্বাক্ষর নেয়া যেতে পারে। ভিন্নমতগুলো অতিরিক্ত হিসেবে সনদে সংযুক্ত থাকতে পারে। সনদে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি। এ বিষয়ে সংশোধনী দিলেও ঐকমত্য কমিশন সেগুলো সন্নিবেশিত করেনি। নোট অব ডিসেন্টগুলো কীভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে- তাও বোধগম্য নয়। জুলাই সনদ নিয়ে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবে না- এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। স্বাধীনতার ঘোষণা ডিক্লারেশন অব ইনডিপেন্ডেন্সে এবং প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি। সেটা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার কথা পূর্বে পাঠানো খসড়া সনদে উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত সনদে ১০৬ অনুচ্ছেদের কথা বাদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সংবিধানে বিদ্যমান চার মূল নীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বিকৃত করা হলে সেই সনদে তারা স্বাক্ষর করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন। এ সময় সিপিবি’র সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অন্যদলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই সনদ পরেও সই করা যাবে: আগামী ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে সরকারকে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুক্রবার সকল রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর করবে। তবে কেউ চাইলে কমিশনের মেয়াদের মধ্যে পরবর্তী যেকোনো দিনেও স্বাক্ষর করতে পারবে। আশা করি সরকার সঠিক ও সুচারুরূপে এটি বাস্তবায়ন হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের এলডি হলে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কর্মসূচি উপলক্ষে ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার একটি পর্যায়ে শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এ নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিয়েছি। গত এক বছর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহযোগিতা পেয়েছি। তাদের ধন্যবাদ জানাই।
আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন মানুষ যেভাবে গণতন্ত্রের সংগ্রামের পর আমরা জাতীয় সনদকে এগিয়ে নিতে পেরেছি। ৮৪টি বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। পরস্পরের মত ভিন্নতা সত্ত্বেও একটি পর্যায়ে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা ও যোগাযোগ আরও হবে। সনদ বাস্তবায়নে যেন কোনো ধরনের ব্যত্যয় না ঘটে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি জুলাই আন্দোলনে সব পক্ষেরই ত্যাগ আছে।
সনদ এখানেই শেষ নয় উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও যোগাযোগ করবো।
তিনি বলেন, নতুন যাত্রায় সবাই অংশগ্রহণ করুন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সব করতে চাই। আমরা মনে করি যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের বিশেষ দায় রয়েছে।
কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আগামীকাল অঙ্গীকারনামায় প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো, কমিশনের সদস্য ও সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টাও স্বাক্ষর করবেন। সবাই মিলে জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের পর পরবর্তী ধাপে যেন অব্যাহত থাকে আমরা সে চেষ্টা করবো।
আইনি ভিত্তি না দিলে সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে এনসিপি’র বক্তব্যের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তাদের বক্তব্য আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ তারা জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা কমিশনের বৈঠকেও অংশগ্রহণ করেছেন। তাই তাদের বিষয়টিও আমরা দেখছি। আশাকরি তারা স্বাক্ষর করতে আসবেন।
বড় রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর না করলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন রাজনৈতিকভাবে সবাই নিজস্ব মতামত দেবেন। তারপরও দেশের স্বার্থে সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাকরি। আমরা মনে করি সবার মতামত থাকলে আইনি ভিত্তি দেয়া সম্ভব।
বিএনপি, জামায়াত ও বাম দলগুলোগুলোর আপত্তির বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, তারা কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। আমরা সনদে ব্যাখ্যা দিয়েছি। ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও তারা আসবেন বলে বিশ্বাস করি।
সব দল সাইন না করলে ভবিষ্যৎ কী হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে উপনীত হয়েছি, যেখানে প্রতিটি দলের মতামত দেয়ার সুযোগ ছিল। আর গণভোটের বিষয়টিরও আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। এ বিষয়ে আগামী সংসদকেও কিছু গাঠনিক ক্ষমতা থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘদিনের কার্যক্রম বিরল ঘটনা। জুলাই সনদ স্বাক্ষরই আমাদের সবচেয়ে বড় আয়োজন। সেখানে এ বিষয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হবে।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি জুলাই সনদ মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আনবে। তা নিয়ে কাজ করবো। আশাকরি এর মধ্যদিয়ে একটি উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। স্বাক্ষর অনুষ্ঠান যেন আমাদের স্মৃতিতে ভাস্বর হয় সে প্রত্যাশা করি।
ব্রিফিংয়ে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
ফের বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ: তৃতীয় দফায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে গত ১২ই ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে গত ১৫ই আগস্ট এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু কমিশনের কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এর আগে দুই দফায় এর মেয়াদ এক মাস করে বাড়ানো হয়। এখন তৃতীয় দফায় কমিশনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়িয়েছে সরকার।
জুলাই সনদের আলোচনার বাইরে নিবন্ধিত ৩০ দল: জুলাই জাতীয় সনদের আলোচনায় তিনটি ধাপে ৩৩ টি রাজনৈতিক দল ও সমমনা জোট অংশ নিয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ২১টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। ফলে জুলাই সনদের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের যোগাযোগ, সংলাপ বা মতামত গ্রহণের বাইরেই রয়ে গেছে নিবন্ধিত অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল।