
মানুষের চাহিদা পূরণের প্রয়োজন থেকেই ব্যবসার জন্ম। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত জীবিকা নির্বাহের বৈধ ও সম্মানজনক উপায় হিসেবে ব্যবসা স্বীকৃত। তবে মুসলমানদের জন্য ব্যবসা শুধু জীবিকার পথ নয়—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৫)
পৃথিবীর ইতিহাসে ব্যবসার অসংখ্য ধরন থাকলেও মূলত মানুষের মধ্যে দুই রকম ব্যবসা দেখা যায়—একটি বস্তুগত, অন্যটি আধ্যাত্মিক। বস্তুগত ব্যবসা হয় দুনিয়াবি প্রয়োজন মেটাতে, আর আধ্যাত্মিক ব্যবসা হয় আত্মার পরিতৃপ্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। মানুষ সাধারণত লাভের আশায় পুঁজি, শ্রম ও বুদ্ধি বিনিয়োগ করে, যেখানে লাভ-ক্ষতি দুই সম্ভাবনাই থাকে। কিন্তু কোরআনে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলা হয়েছে, যেখানে কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা নেই—আছে শুধু লাভ আর লাভ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?”
(সুরা সাফফাত: আয়াত ১০)
এরপর আল্লাহ বলেন,
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে। এটি তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।”
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তাআলা এই ‘লাভজনক ব্যবসার’ তিনটি মূলধন নির্ধারণ করেছেন
1. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি দৃঢ় ঈমান।
অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকার ও কর্মে প্রকাশ—এই তিনটি মিলে ঈমানই এই ব্যবসার আসল মূলধন।
2. দ্বিনি কাজে সম্পদ ব্যয়।
বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে, সম্পদ ব্যয়ে সম্পদ কমে যাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর পথে ব্যয় আসলে এক চিরলাভজনক বিনিয়োগ। কোরআনে বলা হয়েছে,
“যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ তাদের যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে ব্যয় করে—তারা এমন বাণিজ্যের আশা করতে পারে, যা কখনো ধ্বংস হবে না।”
(সুরা ফাতির: আয়াত ২৯)
3. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
‘জিহাদ’ শব্দটি কেবল যুদ্ধ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবরকম প্রচেষ্টা। নিজের সম্পদ, সময় ও প্রিয় বস্তু দ্বিনের জন্য উৎসর্গ করাও জিহাদের অংশ।
এই আধ্যাত্মিক ব্যবসার ক্রেতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কোরআনে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন,
“আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে।”
(সুরা তাওবা: আয়াত ১১১)
আর এই বাণিজ্যের চূড়ান্ত লাভ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,
“তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন, তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত। এটাই মহাসাফল্য।”
(সুরা সাফফাত: আয়াত ১২)
অতএব, দুনিয়ার ব্যবসা লাভ-ক্ষতির ঝুঁকিতে ভরা হলেও খোদার সঙ্গে এই আধ্যাত্মিক ব্যবসায় কোনো ক্ষতি নেই। এখানে রয়েছে অনন্ত শান্তি, চিরস্থায়ী লাভ এবং জান্নাতের নিশ্চয়তা।
একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় ও নিরাপদ বাণিজ্য আর কিছুই হতে পারে না।