Image description
 

রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিংমলের শম্পা জুয়েলার্সের ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় সরাসরি অংশ নেন তিনজন। তাদের মধ্যে দুজন রশি বেয়ে ভবনের ভেতরে ঢোকেন। অপরজন ভবনের নিচে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করেন। চুরি শেষে তিনজনই দ্রুত সটকে পড়েন। পরবর্তী সময়ে চুরি করা স্বর্ণালংকার চোরচক্রের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। 

 

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনার মূল অভিযুক্তদের শনাক্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেন। চক্রের এক সদস্যের বাড়ির খড়ের গাদা থেকে দেড়শ ভরির বেশি স্বার্ণালংকার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া অন্যদের কাছ থেকেও সোনা ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশিক্ষিত দুর্ধর্ষ চোরচক্রের দুজন বোরকা পরে রশি বেয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর দোকানের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে স্বর্ণালংকার নেন। চুরি শেষে ভবনের নিচে মোটরসাইকেলে অপেক্ষমাণ ব্যক্তির সঙ্গে দ্রুত সটকে পড়েন। 

চোরচক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।’ 

 

 

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বার্তায় জানান, রাজধানীর ফরচুন শপিংমলে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ বিষয়ে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।

এত বিপুলসংখ্যক স্বর্ণালংকার চুরির কয়েকদিনের মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটনকে ডিবির বড় ধরনের সফলতা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

 

 

 

জানা যায়, রাজধানীর মালিবাগের ফরচুন শপিংমলের দ্বিতীয় তলায় শম্পা জুয়েলার্স নামের একটি দোকান থেকে প্রায় ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির অভিযোগ করা হয়েছে। শম্পা জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত কুমার বিশ্বাস জানান, প্রতিদিনের মতো ৮ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যান তিনি। পরদিন সকালে মার্কেটের দারোয়ানের মাধ্যমে খবর পেয়ে এসে দেখেন দোকানে কিছু নেই।

তার দাবি, দোকানে ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল, এর মধ্যে ৪০০ ভরি দোকানের নিজস্ব স্বর্ণালংকার। আর ১০০ ভরি বন্ধকি স্বর্ণালংকার। বর্তমানে দেশের বাজারে প্রতি ভরি সোনার দাম দুই লাখ টাকার বেশি। এ হিসাবে চুরি হওয়া সোনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ ঘটনায় শম্পা জুয়েলার্সের মালিক অচিন্ত কুমার বিশ্বাস অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ৮ অক্টোবর রাত ৯টার পর থেকে ৯ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৬টার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তিনি দোকানে ছুটে আসেন। এসে দেখতে পান ৫০০ ভরি স্বর্ণালংকার ছাড়াও ৪০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এদিকে মামলাটি বুধবার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রমনা মডেল থানার ওসি গোলাম ফারুক। 

সূত্র বলছে, ৮ অক্টোবর রাত ৩টা ১০ মিনিটের দিকে শপিংমলের পেছনের তৃতীয় তলার জানালার গ্রিল ভেঙে ভেতরে ঢোকে চোররা। পরে তারা দ্বিতীয় তলার শম্পা জুয়েলার্সের শাটার ভাঙে। দোকানের ভেতরে ঢুকে শোকেসে রাখা স্বর্ণালংকার তারা চুরি করে নিয়ে যায়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চোরচক্রটি স্বর্ণালংকার কয়েক ভাগে ভাগ করে নেয়। কিন্তু ডিবির তৎপরতায় সেগুলো বিক্রি করার সুযোগ পায়নি। অভিযান পরিচালনাকালে গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এক চোরের বাড়ির উঠানের পাশের বড় খড়ের গাদা সরিয়ে মাটির নিচ থেকে একটি লাল রঙের শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছোট ছোট পুঁটলিতে স্বর্ণালংকার মোড়ানো ছিল। এক স্থান থেকেই চুরি হওয়া বড় অংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আরও কয়কটি স্থান থেকেও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। তবে মোট কত ভরি উদ্ধার হয়েছে, এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।