
পরীক্ষায় বন্ধুদের মতো চমৎকার রেজাল্ট করতে পারোনি তাই মনটা আজ মেঘলা আকাশের মতো অন্ধকার হয়ে গেছে, তাইনা? চারদিকে পরিচিত মানুষের সামনে যেতেও দ্বিধা হচ্ছে। দরজা বন্ধ করে একাকী হতাশার সাগরে হারিয়ে যাচ্ছো। আমি জানি এই মুহূর্তে পুরো পৃথিবীটা তোমার বিরুদ্ধে মনে হচ্ছে এবং নিজেকে ব্যর্থ ভাবছো। যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল পাবে না, তোমরা হতাশ হবেনা। এটি কেবল একটি অধ্যায়, সামনে আরও অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে। বিশ্বাস রাখো, কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাও, সফলতা তোমার হবেই। আমার এই লেখাটি তোমাদের জন্য যারা রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হলে প্রচণ্ড অস্থিরতায় ভুগো।
চলো তোমাকে ১টি বাস্তব গল্প শোনাই। আমার গ্রামের ছোটভাই আদনান। সে মোটামুটি ভালো স্টুডেন্ট এবং পরীক্ষাও ভালোই দিয়েছিলো। কিন্তু যেদিন রেজাল্ট দিয়েছিলো সেদিন আকাশটা তার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছিলো। তার জিপিএ খুবই খারাপ রেজাল্ট হিসেবেই আমরা বিবেচনা করে থাকি। রেজাল্টের পর তার বাবা মাও তাকে বুঝতে পারেনি বরং সবাই তাকে তাচ্ছিল্য করেছিলো।
তবে এর পরের গল্পটা অন্যদিকে মোড় নেয়। আদনান ছিলো দৃঢ়চেতা মনোবলের। অতঃপর সে কলেজ থেকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে। নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাতদিন এক করে পড়াশোনা করে। ফলশ্রুতিতে ছেলেটা ভর্তি পরীক্ষায় দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের স্বনামধন্য আরো ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের স্থান দখল করে নেয় যা সবাইকে অবাক করে দেয়। এবার বলো, ‘বি’ গ্রেড পাওয়ায় সবাই তাকে ব্যর্থ ভেবেছিলো সে ছেলেটা কি আসলেই ব্যর্থ? নিশ্চয়ই সে এখন সফলতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এবার চলো জনৈক পণ্ডিতের গল্প শোনাই। স্কুল জীবনে একজন পণ্ডিত ক্লাসে কখনোই পড়া পারতেন না। একদিন তার শিক্ষক তাকে চরম অপমান করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। তারপর তিনি নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুল থেকে বাড়ি বেশ দূরে ছিল তাই ক্লান্ত হয়ে পাথরের একটি ঘাটে খানিকটা বসে বিশ্রাম নেন। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন গ্রামের মহিলারা মাটির কলস দিয়ে পানি নেওয়ার সময় যেখানে কলস রাখেন সে স্থানটি ক্ষয় হয়ে গর্তে রূপ ধারণ করেছে যা তাকে ভীষণ ভাবায়। তখন তিনি ভাবতে লাগলেন মাটির কলসের ঘষায় যদি পাথর ক্ষয় হতে পারে তাহলে আমি চেষ্টা করলে আমার ব্রেন কেন ধারালো হবেনা?
তারপর তিনি নিরলস পরিশ্রম করে এক মাস পর ক্লাসে যান। তখন তার সেই শিক্ষক তাকে আবারো পড়া জিজ্ঞেস করে অবাক হন। তাকে বইয়ের যেখান থেকেই প্রশ্ন করা হয় তিনি সেখান থেকেই নির্বিঘ্নে জবাব দিতে থাকেন। তারপর সময়ের সাথে সাথে তিনি হয়ে ওঠেন সে সময়ের প্রথিতযশা পণ্ডিত।
মনেরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারাপ ফল করলে বা কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়লে সবাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় না। যারা এ পথে পা বাড়ায়, তারা রিস্ক গ্রুপ। অর্থাৎ, আগে থেকেই তাদের এ ধরনের প্রবণতা ছিল। তারা বেশি আবেগপ্রবণ এবং মানসিক অস্থিরতায় ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা ও পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তুমিও আজ হয়তো রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় মন খারাপ করছো কিংবা কান্না করছো। আমি তোমাকে বলছি, চোখের পানি মুছো আর নিজের সাথে প্রতিশ্রুতি দাও যে আগামী সময়গুলোর মধ্যে নিজেকে বদলে দিবে। যদি তুমি ভর্তি পরীক্ষায় তোমার সেরাটা দিতে পারো তাহলে নিজেকে প্রমাণ করতে ফেলে আসা পরীক্ষার রেজাল্ট সামান্যতম প্রভাব ফেলবে না। তাই এখন থেকেই এমন কিছু করো যাতে আজ যারা ভাবছে তুমি জীবনে কিছুই করতে পারবেনা তাদের ধারনা যাতে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। চ্যালেঞ্জ নাও, আত্মবিশ্বাস রাখো এবং পরিশ্রম করো। মনে রেখো দিনশেষে, সাফল্য আসবেই। অফুরন্ত শুভ কামনা তোমার জন্য।
মনে রাখবে, পরীক্ষার রেজাল্ট কখনোই তোমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে না। তোমরা একটু খারাপ রেজাল্ট করেছ মানে এই নয়, তোমাদের বুদ্ধিমত্তা লেভেল অন্য সবার চেয়ে নিচে। পরীক্ষা কখনোই একজন মানুষকে সঠিকভাবে মূল্যায়নের একমাত্র উপজীব্য হতে পারে না। পৃথিবীতে এই রকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে, যারা রেজাল্ট তো দূরের কথা কোনো স্কুল কলেজেরও ধার ধারেনি। তাই বলে এই নয়, পড়াশোনার গুরুত্বকে অস্বীকার করছি। কথাটা বলা এই কারণে যে, তোমরা যারা রেজাল্ট খারাপ করে মনে করছো জীবন এখানেই শেষ, তারা যে কত বড় ভুলের মধ্যে আছো; সেটা বুঝবে আজ থেকে ঠিক ৫/৬ বছর পরে। এই রেজাল্টের দুশ্চিন্তায় যারা আজকের দিনটিকে হেলায় নষ্ট করছো, তারা তখন এই দিনগুলোর জন্যই আবার আফসোস করবে।
নিয়তির উপর তোমরা বার বার দায় চাপাতে পারো, হাল ছেড়ে দিয়ে তার বোঝা আরও কিছুটা ভারীও করতে পারো; কিন্তু মনে রেখো, মানুষ বাঁচে স্বপ্নের মাঝে। স্বপ্নই জীবন; স্বপ্ন ছাড়া মানবসত্তার কোনো অস্তিত্ব নেই। স্বপ্নহীন মানুষ জীব নয়, জড়। আচ্ছা, স্বপ্ন অথবা বাস্তবতা, প্রত্যাশা কিংবা প্রাপ্তি; এদের মধ্যে কেউ কী কোনো দিন দূরত্ব নির্ণয় করতে পেরেছে? কিংবা গজ ফিতা দিয়ে কি মাপা যাবে? অবশ্যই না। তাহলে কী হবে, কী আশা করেছিলাম আর কী পেলাম এদের মধ্যে তফাত খুঁজে সময় নষ্ট করে? তারচেয়ে বরং ‘চলো স্বপ্ন দেখি’…।