
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে দেশজুড়ে ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে যে হত্যাকাণ্ড হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হিসেবে এর সব দায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তি উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১ এ মঙ্গলবার শুরুতেই মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) থেকে দেওয়া ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর।
এরপর জুলাই আন্দোলনের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি শেখ হাসিনার সঙ্গে হাসানুল হক ইনু, মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের টেলিফোনে কথোপকথনসহ কয়েকটি অডিও ফোনালাপ শোনানো হয়। একই সঙ্গে এ মামলায় পাঁচটি অভিযোগের সপক্ষে বিভিন্ন সাক্ষীর দেওয়া বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন ও পরদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
এরপর তাজুল ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থান চলাকালে শেখ ফজলে নূর তাপস, হাসানুল হক ইনু, অধ্যাপক মাকসুদ কামালের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। অন্যসব তথ্য-উপাত্ত বাদ দিলেও এই সরাসরি নির্দেশই শেখ হাসিনার অপরাধ প্রমাণে যথেষ্ট।
অডিওর বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এসব কথোপকথনে কয়েকটি বিষয় উঠে এসেছে। এর মধ্যে তাপসের সঙ্গে কথোপকথনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ এবং ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে আন্দোলকারীদের অবস্থান নির্ণয়ের বিষয় উল্লেখযোগ্য।
ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথন বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই কথোপকথনে কারফিউয়ের পর যেন আন্দোলনকারীরা মাঠে নামতে না পারে, সে জন্য আওয়ামী লীগ ও অন্য দলগুলোকে মাঠে নামানো, আন্দোলনকারীদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা, জামায়াত-শিবিরকে দমনে ইনুকে দেওয়া নির্দেশনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। এখানে তাঁর ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’র বিষয়টি স্পষ্ট।
যুক্তিতর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বিভিন্ন নির্দেশনা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, প্রতিটি থানার সামনে এলএমজি পোস্ট স্থাপনের নির্দেশনা ছিল। এই নির্দেশনা ছিল আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে। আন্দোলনে নিহতদের শরীর থেকে উদ্ধারকৃত বুলেট ও পিলেট থেকে বিশ্লেষণ করে মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পরবর্তী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে কুষ্টিয়ায় ছয় হত্যার অভিযোগে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর আগামী ২৩ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।