
দীর্ঘ দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে গঠিত হতে যাওয়া আন্তর্জাতিক টাস্ক ফোর্সে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছে তুরস্কের সেনাবাহিনী।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এই আভাস পাওয়া গেছে। জানিয়েছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজায় শান্তি বজায় রাখার জন্য আন্তর্জাতিক টাস্ক ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তুরস্কের সেনাবাহিনী এই মিশনে অংশ নেবে এবং এটিকে তারা ফিলিস্তিনের আহত ভূমিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার ধর্মীয় ও মানবিক দায়িত্ব হিসেবে দেখছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য তুর্কি বাহিনী মিশরের শার্ম এল শেইখে একটি দল পাঠিয়েছে। এর আগের দিনই প্রেসিডেন্ট এরদোগান গাজায় সেনা পাঠানোর বিষয়ে সবুজ সংকেত দেন। অন্যদিকে, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড গাজায় সিভিল মিলিটারি কোঅর্ডিনেশন সেন্টার সিএমসিসি গঠন করছে।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কেন্দ্রের মূল দায়িত্ব হবে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা, নিরাপত্তা সহায়তা দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। ওয়াশিংটন দখলকৃত অঞ্চলে প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা পাঠাবে। তাদের ভূমিকা সীমিত থাকবে। তারা এই অঞ্চলের উগ্রপন্থীদের শান্ত রাখার কাজে নিয়োজিত থাকবেন, তবে গাজার সীমানায় কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরপরই ইসরাইলি সেনারা গাজার ইয়োলো জোন থেকে সরে গেছে। এই চুক্তির ফলে দ্রুতই বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। ধোঁয়া, ধ্বংস আর দগ্ধ মাটির গন্ধে ঢাকা গাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের চোখে আজ একটিমাত্র প্রশ্নÑ এবার কি সত্যিই শেষ হলো রক্তপাত? দুই বছর ধরে যারা আগুন, ধ্বংস এবং মৃত্যু দেখেছে, তাদের জন্য এই যুদ্ধবিরতি এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ এনে দিয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দগমোশ নামে একটি নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে, যা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। ইসরাইল কর্তৃক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজা সিটিতে হামাস ও দগমোশ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত গোষ্ঠীটির ৩২ জনসহ মোট ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ৭ জন মানুষকে সড়কে গুলি করে হত্যা করছে। সেখানে উপস্থিত কিছু বেসামরিক ফিলিস্তিনি এই নিহতদের ইসরাইলি বাহিনীর সহযোগী বলে অভিহিত করে হামাসকে সমর্থন জানায়। নিহত এই ব্যক্তিরা দগমোশ গোষ্ঠীর সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির পর হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেড অস্থায়ী পুলিশের ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও গাজার আইনশৃংখলা রক্ষার জন্য কিছু সময়ের জন্য হামাসকে অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এএফপি,আনাদোলু।