
রাজধানী ঢাকার গাড়িচালকদের ৭৫ শতাংশের চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে। ৮০ শতাংশ চালকের প্রথমবার চশমা লেগেছে। ৭৫ শতাংশ চালক জানেনই না তাঁদের দৃষ্টিশক্তি দুর্বল। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে ৮০ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে চালকদের ৭৯ শতাংশের চোখে ত্রুটি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সেবা সংস্থা ভিশন স্প্রিং বাংলাদেশ পরিচালিত বাসচালকদের চোখের হেলথ ক্যাম্প শেষে সম্প্রতি এই ফলাফল পাওয়া গেছে। সংস্থাটি এরই মধ্যে ৯১৫ জন গাড়িচালকের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করেছে। তাতে গাড়িচালকদের দৃষ্টিশক্তির এই তথ্যচিত্র উঠে এসেছে।
ভিশন স্প্রিং বাংলাদেশের সিনিয়র ম্যানেজার (প্রোগ্রাম) উম্মে সাউদা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সহযোগিতায় পাঁচ দিনের হেলথ ক্যাম্প করেছি।
তাতে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ চালক জানেনই না তাঁদের চোখে সমস্যা আছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক বিষয়।’
ভিশন স্প্রিংয়ের হেলথ ক্যাম্প প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯১৫ জন গাড়িচালকের ৬৮৪ জনের বা ৭৫ শতাংশের চোখে চশমা প্রয়োজন। তাঁদের ৩২৬ জন (৪৮%) প্রেসক্রিপশন গ্লাস এবং ৩৫৮ জন (৫২%) রিডিং গ্লাস পেয়েছেন।
অন্যদিকে ২১ জন চালকের চোখে ছানি ধরা পড়েছে, যাঁদের অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের চালকদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতার হার ৮০ ও মহাখালী টার্মিনালের চালকদের মধ্যে তা ৭৯ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হলে চালক রাস্তার দূরের বস্তু স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন না। এতে সামনে হঠাৎ কোনো মানুষ, প্রাণী বা যানবাহন এলে তা সময়মতো বুঝতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া আলো কমে গেলে বা রাতে গাড়ি চালানোর সময় ঝাপসা আলোয় বিভ্রান্তি দেখা দেয়, ফলে চালক ভুলভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ হারান।
অনেক ক্ষেত্রে ছোট অক্ষরে লেখা সাইনবোর্ড, রাস্তার মোড়ের বাঁক বা ট্রাফিক লাইটের সংকেতও ঠিকমতো দেখা যায় না, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার একটি বড় অংশই ঘটে চালকের চোখের জ্যোতি কম থাকায়।
ভিশন স্প্রিং জানায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহযোগিতায় দেশে ৫০ হাজার গাড়িচালকের চোখ পরীক্ষা করা হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ করা হবে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে চশমা বিতরণ ও ছানি পড়া চালকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, গাড়িচালকদের চোখের ত্রুটি সারাতে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। তা চলছে এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।
ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ-ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চোখের এমন অবস্থায় চিকিৎসা ছাড়া গাড়ি চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তালিকা পেলে আমরা তাঁদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্যোগ নেব। আমরা শুধু চোখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব না। পরিবহন শ্রমিকদের সার্বিক সুরক্ষায় ধাপে ধাপে আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’