
বাংলাদেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের ( ৭৬ শতাংশ ) সঙ্গে জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী সহিংস আচরণ করেছেন । পরিবারেই শারীরিক , যৌন , মানসিক , অর্থনৈতিক সহিংসতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারী । তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কম । উদ্বেগজনক বিষয় হলো , ভুক্তভোগী তিনজনের মধ্যে দুজন ( ৬২ শতাংশ ) সহিংসতার ঘটনা কখনো প্রকাশ করেননি । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘ নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪ ' - এ এই চিত্র উঠে এসেছে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ( বিবিএস ) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ( ইউএনএফপিএ ) যৌথভাবে ওই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে । সোমবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এটি প্রকাশ করা হয় । ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের উপপরিচালক মীনাক্ষী বিশ্বাস ।
নারীর প্রতি সহিংসতা » বাংলাদেশে ৫৪ শতাংশ নারী জীবদ্দশায় স্বামীর শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার । » সামগ্রিকভাবে সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে । » বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন ।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী , বাংলাদেশে ৫৪ শতাংশ অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি নারী জীবদ্দশায় স্বামীর শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন । যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন । বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন । জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে , শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত । আর পুরুষ আত্মীয় , বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন ।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী , ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নন , এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন । শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন । তবে স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালের ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে ।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয় , ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার - ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন । এগুলো যৌন ব্ল্যাকমেল , ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত ।
চিকিৎসা গ্রহণ এবং আইনি পদক্ষেপ কম বিবিএসের জরিপ বলছে , সহিংসতার শিকার নারীদের চিকিৎসাসেবা এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম । ভুক্তভোগী ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন । স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা স্থানীয় নেতার কাছে সহায়তা চেয়েছেন । প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের কম নারী ( ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ) জানেন না , কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত ।
অন্যদিকে জীবনসঙ্গী নয়, এমন পুরুষের মাধ্যমে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন । সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা । জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয় , কম বয়স , যৌতুক প্রথা , স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীদের ওপর স্বামীর রহমান । প্রধান অতিথি ছিলেন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় । অন্যদিকে , স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায় । এ ছাড়া জীবনসঙ্গী নয় , এমন সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীর কম বয়স , সীমিত শিক্ষা এবং প্রতিবন্ধিতা প্রধান ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ( সচিব ) কাইয়ুম আরা বেগম । বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারী । অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ( ইউএনএফপিএ ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং ।