
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিকভাবে যে মামলাটি দিয়ে জামায়াত শিবিরের ওপর সবচেয়ে বড়ো ক্র্যাকডাউন চালানো হয় তা ছিল ফারুক হত্যা মামলা। ফারুক ছিলেন রাবির গণিত বিভাগের একজন ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী ফারুক হত্যার ঘটনা ঘটে বলে ধারনা করা হয়। পরদিন সকালে ফারুকের লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের একটি ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এই ঘটনাটি বহু মানুষের ছাত্র জীবন ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছিল। ঘটনাটি রাজশাহীতে হলেও আশপাশের সকল জেলায় দিনের পর দিন সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হয়। শিবির জামায়াত সন্দেহে মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহীর আশপাশের জেলাগুলো রীতিমতো পুরুষশূণ্য হয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, সারা বাংলাদেশই শিবিরের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউনের সূচনা হয়েছিল এই ফারুক হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এই ঘটনাকে জামায়াত শিবির নিশ্চিহ্ন করার নিকৃষ্ট উপায় হিসেবে ব্যবহার করে। ভার্সিটির সহিংসতার ঘটনার জেরে ঢাকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের অভিযুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে এই হত্যার ঘটনাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিষয়টি উম্মোচিত হয়ে যায়।
সে সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল শামসুল আলম গোলাপকে গ্রেফতার করে তার ওপর প্রচন্ড নির্যাতন চালানো হয়। তার মুখ দিয়ে প্রশাসন জামায়াত নেতাদের নাম বের করতে চেয়েছিল। কিন্তু গোলাপ ভাই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। চরম সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি মিডিয়ার সামনে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, “ওনারা জামায়াত করেন; বড়ো দলের কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ঢাকায় থাকেন; তারা আমার মতো ক্যাম্পাসের একজন ছাত্রনেতাকে কেন ফোন দিবেন?” গোলাপ ভাইয়ের সাহসিকতায় আওয়ামী লীগের নোংরা পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
তারপরও মামলার ইজহারে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করে জামায়াত শিবিরকে হয়রানি করার পথ উম্মুক্ত রাখা হয়। ২০১২ সালের ২৮ জুলাই পুলিশ ১,২৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র আদালতে দায়ের করে। মামলায় জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদেরও আসামি করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে চার্জশীট অনুযায়ী আল্লামা সাঈদী রহ. ১০৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
জামায়াত নেতাদের বেশিরভাগের ফাঁসি ততদিনে কার্যকর হয়ে যাওয়ায় সম্ভবত তারা অভিযোগ গঠনের হাত থেকে রেহাই পান। আজ রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালত এই মামলার রায় ঘোষণায় সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। এর মাধ্যমে নিরীহ মানুষগুলো অযাচিত অপরাধের দায় থেকে মুক্ত হলেন।
নির্মম বাস্তবতা হলো, বিরোধী নেতাদের শায়েস্তা করার মানসিকতা ছিল বলেই আওয়ামী লীগ ফারুক হত্যা মামলার নির্মোহ তদন্ত করেনি। আজ রাজনৈতিকভাবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খালাস পেলেন আর প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালেই রয়ে গেলেন। আমি জানি না, মানুষ এরপরও কেন আওয়ামী লীগ করে। কেননা আওয়ামী ইতিহাস হলো নেতার পরিবারকে সেইফ করে কর্মীদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার ইতিহাস। ফারুকও সেই নোংরা ইতিহাসের ভিকটিম হিসেবেই রয়ে গেলেন।