
ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রামে যুমনা টেলিভিশনের দুই সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ তুলেছেন রিপোর্টার জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের খুলশী থানা জোনের ডিসি (উত্তর) আমিরুল ইসলাম তাকে থানা কক্ষের ভেতর ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। একপর্যায়ে গায়েব করে ফেলার হুমকিও দেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর খুলশী থানায় মারধরে ঘটনার শিকার জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতের একটি ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর চট্টগ্রামে কর্মরত সব সাংবাদিকরা সাংবাদিককে হেনস্তা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে নগরীর খুলশী থানার সামনে অবস্থান নেন।
পুলিশের মারধর, হেনস্তা ও নির্যাতনের দুই সাংবাদিকের মধ্যে অপরজন হলেন যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান লিমন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে রিপোর্টার জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতকে বলছিলেন, শনিবার নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে নিউজ কভার করার সময় তার মানিব্যাগসহ অফিস আইডি হারিয়ে যায়। সে সুবাদে তিনি খুলশী থানায় এসেছিলেন হারানো জিডি করতে এবং জিইসি কনভেনশনে ঘটে যাওয়া ঘটনার আপডেট জানতে। থানার সামনে গ্রেপ্তার হওয়া পরিবারের লোকদের দেখতে পেয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এ সময় খুলশী থানার ডিসি (উত্তর) আমিরুল ইসলাম তার উপর চড়াও হন এবং তাকে থানার ভেতরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
জোবায়েদ ইবনে শাহাদাত জানান, শনিবার জিইসি কনভেনশনে নিউজ কাভারেজে গিয়ে মানিব্যাগ হারানো যায়। তাতে তার অফিসিয়াল কার্ডও ছিল। তাই আজ খুলশী থানায় হারানো জিডি করতে এসেছিলেন তিনি। সেখানে গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিসি আমিরুল ইসলাম তাকে দেখে তুই, তাই করে সম্বোধনের পর খারাপ আচরণ শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবহার খারাপ করছেন কেন? আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন কিনা বললে ডিসি আমিরুল আমার ওপর চড়াও হন এবং আমাকে থানার ভেতরে নিয়ে যেতে পুলিশ সদস্যদের অর্ডার করেন। পরে আমাকে ও আমার সহকর্মীকে রুমে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। পরে আমি ডিসি আমিরুলের কাছে প্রশ্ন রাখি যে, আপনি আমাকে এভাবে মারতে পারেন কি না? উত্তরে তখন ডিসি আমিরুল বলেন, তুই ফেসিস্ট, আমি তোকে মারিনি, শয়তানকে মেরেছি। বেশি কথা বললে একদম গায়েব করে ফেলব।
এ বিষয়ে জানতে ডিসি (উত্তর) আমিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
এদিকে ঘটনার পর খুলশী থানার সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন সাংবাদিক নেতা ও সাংবাদিকরা। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার বলেন, আজকে সাংবাদিক হেনস্তা ও নির্যাতনের ঘটনায় প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়াসহ সব সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সাথে সাথে সিএমপি ডিসি (উত্তর) আমিরুল ইসলামের প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিউজে) সভাপতি সবুর শুভ বলেন, ডিসি (উত্তর) আমিরুল ইসলাম কর্তৃক নির্যাতিত সাংবাদিক জোবায়েদ ইবনে শাহাদাতের লোমহর্ষক ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত নয়। আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। ঘটনার তদন্তে পুলিশ কমিশনারের পক্ষে পাঠানো প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির মহোদয়কে বলেছি, খুলশী থানার ভেতরে প্রতিটি কক্ষে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। যে কক্ষে আমাদের ভাইকে নির্যাতন করা হয়েছে সেই কক্ষের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের সামনে উপস্থাপন করুন।
তিনি আরও বলেন, আপনি ডিসি আমিরুল নির্দোষ হলে আজ আমাদের সামনে আপনি কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাও করেননি। আমি সব সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সিএমপি কমিশনার মহোদয়ের নিকট দাবি জানাই যে, অনতিবিলম্বে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের পাশাপাশি ডিসি আমিরুল ইসলামকে খুলশী জোন থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একইসাথে ন্যায়বিচার করতে হবে। তা না হয় আমরা সিএমপি কার্যালয় এবং আপনার বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
টিভি সাংবাদিক নেটওয়ার্কে আহ্বায়ক হোসেন জিয়া বলেন, আজকের ঘটনাটি পূর্বে একটি ঘটনার পরম্পরা। আগের ঘটনায় ডিসি ট্রাফিক অফিসে বলা হয়েছিল ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশের সুযোগ নেই। সেখানে তাকে হেনস্তা করা হয়েছে। আজকেও একই কথা এখানেও বলা হচ্ছে। রাষ্ট্রের আইন অনুসারে হাইকোর্ট বলেছে সাংবাদিকরা সব জায়গায় যাবে। সাংবাদিকরা কোন জায়গায় যেতে পরবে না ,কোন আইনে সেটি আছে আমাদেরকে আজকে উনারা পরিষ্কার করবেন। রাষ্ট্রপক্ষ কোনোভাবেই একজন সাংবাদিকের উপর আঘাত করতে পারে না। আমরা এ ঘটনার সুস্পষ্ট বিচার চাই এবং ডিসি আমিরুলকে প্রত্যাহার চাই।
এ বিষয়ে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) শ্রীমা চাকমা কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় তদন্তে কমিশনার মহোদয় অতিরিক্ত কমিশনার হুমায়ুন কবির স্যারকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন।