
আওয়ামী লীগ আমলের টানা ১৬ বছর অত্যাচার-নির্যাতনের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলা। দলটির মন্ত্রী-এমপি ও স্থানীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি এলাকা পরিণত হয়েছিল বিরোধী মত দমনের উর্বর ক্ষেত্র।
শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দানবীয় আচরণের শিকার হন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ আইনের আশ্রয় নিতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে আরেক দফা অমানবিক আচরণের মুখোমুখি হতে হতো।
পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অনেককে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গুম কিংবা হাতে বা পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়।
বিএনপি ও জামায়াতের সাধারণ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ পাহারায় উত্তর চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পাননি অরাজনৈতিক ইসলামি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও। বুলডোজার দিয়ে এক মাস ধরে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় মুনিরীয়া যুব তবলীগের ৩২টি খানকা শরিফ। সমাবেশে যাওয়ার অপরাধে ছাত্রদল নেত্রীকে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর পুলিশে দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ঢাকার সমাবেশের জেরে হাটহাজারী মাদরাসার (হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা) শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হয় ভয়াবহ দমনপীড়ন। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এককাট্টা হয়ে হামলা চালায় হাটহাজারী মাদরাসায়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছয়জন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে গেলে দ্বিতীয় দফায় ক্র্যাকডাউন চলে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ওপর। সে দফায়ও নিহত হন চারজন। হত্যাকাণ্ডের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় নিরীহ মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুলের ওপর হামলা
২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বারইয়ারহাট পৌরসভার খান সিটি সেন্টারের সামনে তার গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে খালেদা জিয়াকে রক্ষা করেন। দুই দফায় হামলায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি আহত হন অন্তত ২০ নেতাকর্মী। সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক এমপি মাহবুব উর রহমানের নির্দেশে ওই হামলা পরিচালিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৭ সালের ১৮ জুন রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহর রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী বাজারে পৌঁছলে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ইটের আঘাতে মির্জা ফখরুলের শরীরের বিভিন্ন অংশ ফেটে রক্তাক্ত হয়। তৎকালীন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইছাখালী বাজারে উপস্থিত থেকে সরাসরি হামলায় নেতৃত্ব দেন।
বিএনপি-জামায়াতের ১৮ নেতাকর্মীকে হত্যা করে ওসি ইফতেখার
২০১২ সালের ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ সময় দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অচল করে দেন দুই দলের নেতাকর্মীরা। উপায়ান্তর না পেয়ে যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমানোর নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব দেওয়া হয় সে সময়ের গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে। দায়িত্ব নিয়েই তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হোসেনকে বদলি করে আনেন সীতাকুণ্ডে। সেই থেকে পুলিশি নির্যাতনের কেন্দ্রে পরিণত হয় সীতাকুণ্ড মডেল থানা। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ১৮ জনকে কথিত ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে খুন করে ওসি ইফতেখার। এর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ৯ জন করে নেতাকর্মী রয়েছেন।
এছাড়া বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটকের পর তুলে দিতেন আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে। রাতভর নির্যাতন চালিয়ে সকালে লাশ ফেলে দেওয়া হতো কৃষিজমি কিংবা পাহাড়ের খাঁজে।
ভুক্তোভোগী পরিবারগুলো মামলা তো দূরের কথা, জিডিও করতে পারত না থানায়। এসব হত্যা সরাসরি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক এমপি দিদারুল আলম, চট্টগ্রাম-৪ আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা এসএম আল মামুন, আওয়ামী লীগের উপজেলা সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়ার নির্দেশে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশি নির্যাতনের পাশাপাশি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল সীতাকুণ্ড। জামায়াতের অঙ্গসংগঠন সীতাকুণ্ড উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মিছবাহুল আলম রাসেল জানান, ২০১৩ সালের ২৮ রমজান ইফতারের আগ মুহূর্তে বড় দারোগারহাট এলাকার জামায়াতকর্মী আবদুল্লাহ আল রালেস বাবুকে কুপিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী সাইদুল ইসলাম ও তার বাহিনী। ইফতারের সময় পানি চাইলেও দেওয়া হয়নি তাকে। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেদিন সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড বাজারে মিছিল বের করলে ওসি ইফতেখার হোসেন গুলি চালিয়ে হত্যা করে আবু বক্কর সিদ্দিক পারভেজ নামে এক জামায়াতকর্মীকে। পরদিন একসঙ্গে দুই কর্মীর জানাজার আয়োজন করলে সেখানেও হামলা চালায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সীতাকুণ্ডের জামায়াত নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন তার স্ত্রী-সন্তানসহ ঢাকা থেকে ফেরার পথে ওসি ইফতেখার তাকে তুলে নিয়ে যায়। দুদিন নিখোঁজ থাকার পর ১৯ নভেম্বর পন্থিছিলার কসাইখানা এলাকায় ধানক্ষেতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি শিবিরের সাথী মোশাররফ হোসেনকে তার বোনের বাড়ি থেকে তুলে এনে আওয়ামী সন্ত্রাসী ইসলাম বাহিনীর হাতে সোপর্দ করে ওসি ইফতেখার। সারা রাত তাকে অমানুষিক নির্যাতনের পর সকালে পুলিশে দেওয়া হয়। পরে পৌরসভার পন্থিছিলা এলাকার ধানক্ষেতে নিয়ে তাকে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যা করে ওসি ইফতেখার। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেতে বাড়িতে আসেন মুরাদপুর ইউনিয়নের জামায়াতকর্মী ওসমান গণি। ওসি ইফতেখারের ডানহাত হিসেবে পরিচিত এসআই ইকবাল হোসেন তাকে ধরতে অভিযান চালায়। ওসমান দৌড়ে গিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন। সেখানে গুলি করে এসআই ইকবাল। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে পানি থেকে তুলে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর পা রেখে বুকে গুলি করে প্রকাশ্যে হত্যা করে এসআই ইকবাল।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যুবদল নেতা আরিফকে হত্যা করে নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয় ওসি ইফতেখার। একই বছর মুরাদপুর ইউনিয়নের যুবদল নেতা জামশেদ হোসেনকে অপহরণ করে হত্যা করে লাশ সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা শরীফুল ইসলাম রাসেলকে শুকলালহাট বাজারে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যুবদল নেতা নিজাম উদ্দিন সজীবকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যায় ওসি ইফতেখার। পরদিন তার লাশ পাওয়া যায়। নিহতের শরীরে নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্নের পাশাপাশি থ্রি নট থ্রি রাইফেলের গুলি পাওয়া যায়। ছাত্রদলের কর্মী জয়নাল আবেদীনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা ১০ মাদরাসা শিক্ষার্থীকে
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি হাটহাজারীতে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হন আলেম-ওলামারা। পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যৌথ হামলায় নিহত হন অন্তত ১০ জন মাদরাসাছাত্র ও আলেম। হাটহাজারীর আলেম-ওলামাদের সঙ্গে পলাতক আওয়ামী সরকারের বিরোধ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছরের ৫ মে শাহবাগিদের বিচারের দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে হেফাজতে ইসলাম। এর নেতৃত্ব দেয় হাটহাজারী মাদরাসা। ৫ মে রাতে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে ৬ মে ভোর থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেন হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এ সময় গুলি করে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও আলেমদের হত্যা করে পুলিশ। এর নেতৃত্ব দেয় হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি নিজাম উদ্দিন ও হাটহাজারী থানার তৎকালীন ওসি লিয়াকত আলী। ওই ঘটনায় নিহত হন অন্তত ছয়জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন কয়েকশ মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। পরে ওই ঘটনায় উল্টো মামলা দায়ের করে কয়েকশ আলেম-ওলামাকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করে পুলিশ।
২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় আগমনের প্রতিবাদে মিছিল বের করেন হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা। মিছিলটি মাদরাসার সামনে মূল সড়কে উঠতেই বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে শুরু করে পুলিশ। ওই সময় নিহত হন আরো চারজন। নিহতদের মধ্যে রবিউল, মেহরাজ ও জামিল হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার ছাত্র এবং আবদুল্লাহ এলাকায় দর্জির কাজ করতেন।
চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় হাটহাজারী থানার তৎকালীন ওসি রফিকুল ইসলাম, সেকন্ড অফিসার রাজিব শর্মা ও এসআই মুকিব হাসান। জুলাই বিপ্লবে হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ওসি রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হলেও রাজিব শর্মা ও মুকিব হাসান এখনো অধরা।
বিএনপি নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ
২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত ফেনী থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী রোডমার্চ সফল করতে ২৯ সেপ্টেম্বর মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়িতে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়। সভা শেষে নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী আজমপুর বাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় জাহেদ হাসান রুমন (১৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়। নিহত রুমনকে প্রথমে নিজেদের কর্মী দাবি করে দ্বিতীয় দফায় নুরুল আমিন চেয়ারম্যানসহ ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
২০১৭ সালের ২২ রমজান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুডস হিলের বাসায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ২০২১ সালে সালাউদ্দিন কাদেরের রাঙ্গুনিয়ার বাড়িতেও হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। ওই দিনও রমজান মাস চলছিল। পারিবারিক একটি ইফতার কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতনে চিরপঙ্গু বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী
২০২২ সালের ১১ এপ্রিল রমজান মাসে বারৈয়ারহাট বাজার থেকে ইফতার কিনে বাড়ি ফিরছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ জিপশন। এ সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে ঘিরে ধরে। মারতে মারতে নিয়ে যায় পাশের একটি গুদামে। সেখানে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত ও পায়ের হাড় গুঁড়া করে দেওয়া হয়। নির্মম নির্যাতনে জ্ঞান হারালে দুর্বৃত্তরা তাকে মৃত ভেবে বাজারের ভেতরে ফেলে যায়। টানা এক বছর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বেঁচে গেলেও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান তিনি। পঙ্গু অবস্থায় অন্তত আটবার জেলও খেটেছেন জিপশন।
২০১৪ সালের ৩০ জুলাই রাতে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে বৈঠক করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় মিরসরাই উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল করিমের বাড়িতে। নুরুল করিমের পায়ের রগ কেটে দেওয়া ছাড়াও সারা শরীরে কুপিয়ে আহত করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় সন্ত্রাসীরা। গুরুতর আহতাবস্থায় স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে পরিচয় গোপন করে ছদ্মনাম দিয়ে প্রথমে ফেনীর কসমোপলিটন হাসপাতাল ও পরে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে প্রাণে বাঁচলেও চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন তিনি। শরীরে নির্যাতনের ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন।
২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর সন্দ্বীপের তৎকালীন বিএনপিদলীয় এমপি মোস্তফা কামাল পাশার বাড়িতে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট চালায় তারা। এ সময় বাড়িতে অবস্থান করা এমপি পাশার ছেলে ইকবাল পাশা জাবেদকে গুলি করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায়।
২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচরি প্রচারে অংশ নেওয়ার অপরাধে যুবদল নেতা বেলাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পিটিয়ে আহত করার পর কুপিয়ে তার এক হাত এবং এক পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
২০১৮ সালের ১৮ জুলাই ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মোরশেদ হাজারীর ওপর হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মৃত ভেবে বাজারের মাঝখানে ফেলে রেখে যায় তারা। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে প্রাণে বাঁচলেও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। গুরুতর আহতাবস্থায় একাধিকবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যোগদান শেষে বাড়ি ফেরার পথে মিরসরাইয়ের শাহজীবাজার এলাকা থেকে নাদিয়া নুসরাত নামে এক ছাত্রদলকর্মীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এ সময় একটি ঘরে আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়। কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করা হয়। ওই ভিডিও ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গভীর রাতে তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। পরে বিস্ফোরণ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সন্দ্বীপে এক বিএনপিকর্মীর নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে নাদিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে দেয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুর্বৃত্তরা। আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে বিচার হয়নি আলোচিত হত্যা ও ধর্ষণ মামলাটির।
গুম হওয়া বিএনপির চার নেতা আজও ফেরেননি
আওয়ামী লীগের দানবীয় শাসনের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয়ী হন ফটিকছড়ি উপজেলার ১৩নং লেলাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল আলম সিরাজ। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগের নেতারা। ২০১২ সালের ৬ মার্চ বিএনপির ডাকা ঢাকা চলো কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় যান সিরাজ। কর্মসূচি শেষে চট্টগ্রাম ফেরার পথে ঢাকা থেকেই তাকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের র্যাব সদস্যরা। আজও তিনি ফিরে আসেননি।
রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আবু জাফর নগরীর খুলশীর বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। ২০১০ সালের ২৭ মার্চ পরিবারের সবার সামনে থেকে সাদা পোশাকের লোক র্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা জিডিও করেন থানায়। কিন্তু এখনো আবু জাফরের সন্ধান মেলেনি।
সীতাকুণ্ডের বিএনপিকর্মী মোটরগাড়ি গ্যারেজের মালিক শামীম সরদার ও তার স্ত্রীসহ গ্যারেজের মোট ৯ কর্মচারীকে দুটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় ঢাকা থেকে আসা ডিবি পুলিশের একটি দল। ঢাকার মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তাদের ৯ দিন আটকে রাখা হয়। এদের মধ্যে ছয়জনকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় আর শামীমের স্ত্রী শম্পা বেগম ও তার গৃহকর্মীকে ৯ দিন পর গাড়িতে করে সীতাকুণ্ডে দিয়ে যায় ডিবির সদস্যরা। শামীম তখনো ডিবি হেফাজতে ছিলেন। শামীমকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে তার স্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক দফায় ১০ লাখ টাকাও নেয় ডিবি সদস্যরা। কিন্তু আজও তার সন্ধান পায়নি পরিবার।
ফটিকছড়ির বিএনপিকর্মী বলী মনসুরকে ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ উপজেলার ভোলারচর এলাকার তার চাচার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাকে হাটহাজারী থানায় দুদিন আটকে রাখা হয়। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান মেলেনি।
দেশের ভেতরে আরেক দেশ ছিল রাউজান
বাংলাদেশের মধ্যে রাউজান নামে আরেকটি দেশের পত্তন করেছিলেন চট্টগ্রামের ‘ফেরাউন’খ্যাত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। উপজেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের অফিস নামে ১৬টি টর্চার সেলের সঙ্গে তিনটি আয়নাঘরও ছিল তার। পান থেকে চুন খসলে এসব টর্চার সেলে ধরে এনে নির্যাতন শেষে বাজারের মাঝে নিয়ে চুল-দাড়ি ও ভ্রু কামিয়ে আয়নাঘরে বন্দি করে রাখা হতো দিনের পর দিন। ফজলে করিম ও তার পান্ডাদের ভয়ে ১৬ বছর ধরে এলাকাছাড়া ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ।
বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কথিত যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে হাসিনা সরকার। হত্যার পর তার লাশ কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, কোথায় দাফন হবেÑসবকিছুই ঠিক করে দেয় প্রশাসন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী জানান, ২০১৫ সালের ২১ নভেম্বর কারাগারে শেষ দেখা করার সময় মৃত্যুর পর রাঙ্গুনিয়ায় দাফন করার নসিহত করে যান সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়ে দেয়Ñলাশ রাউজানের পৈতৃক বাড়িতে দাফনের নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পরদিন সকালে র্যাব-পুলিশের পাহাড়ায় লাশ বাড়িতে নেওয়া হলে মসজিদের পাশের মাঠে জানাজা পড়ানোর প্রস্তুতি নেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে বাদ সাধে ফজলে করিমের ক্যাডাররা। বলে, এমপির নির্দেশে বাড়ির উঠানেই জানাজা পড়াতে হবে। তখন বেশ কয়েকবার ফজলে করিমকে ফোন করেন হুম্মাম। কিন্তু রিসিভ করেননি তিনি। পুলিশের সহায়তায় এমপির ক্যাডাররা দিনভর সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।
রাউজান বন বিভাগের পাশে ফজলে করিমের বাগানবাড়ির শেষদিকে খালপাড়ে গড়ে তোলা হয় টর্চার সেল ও আয়নাঘর। মাটির ওপর চারটি ঘর আর মাটির নিচে দুটি ঘরের অবস্থান। যাদের বেশি দিন আটকে রাখার প্রয়োজন পড়ত, তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো মাটির নিচের অন্ধকার কুঠুরিতে। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মী, ব্যক্তিগত শত্রু কিংবা চাঁদার দাবিতে সাধারণ মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে যান স্থানীয় বাসিন্দা সিএনজিচালক মোহাম্মদ রাশেদ। পরদিন গহিরা বাজার থেকে পৌর কাউন্সিলর জসিমের নেতৃত্ব ১০-১২ জনের একদল সন্ত্রাসী তাকে ধরে আনে ফজলে করিমের বাগানবাড়িতে। সেখানে নিয়ে একদফা পেটানো হয় তাকে। এ সময় রাশেদকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিওকলে দেখছিলেন ফজলে করিম এমপি। ২০-২৫ মিনিট ধরে পেটানোর পর আয়নাঘরে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে রডের সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে আরেক দফা পেটানোর পর আটকে রাখা হয় রাশেদকে। দিনভর আয়নাঘরে বন্দি রেখে মুন্সিরঘাট বাজারে নিয়ে রতনের সেলুনের দোকানের সামনে রাস্তার ওপর চুল, দাড়ি ও ভ্রু কামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় ফজলে করিমের ক্যাডাররা।
বহু বছর ধরে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগের শক্ত অবস্থান ছিল রাউজানে। রাউজান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩২টি খানকা শরিফ প্রতিষ্ঠা করেছিল সংগঠনটি। জনপ্রিয়তা কাল হয়ে ওঠে সংগঠনটির জন্য। ২০১৮ সালের শেষ দিকে কোনো কারণ ছাড়াই ফজলে করিম তাদের কার্যক্রমে বাধা দিতে শুরু করেন। ২০১৯ সালের শুরু থেকে হঠাৎ তাদের ওপর হামলা করে ফজলে করিমের ক্যাডাররা। একে একে সবগুলো খানকা শরিফ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এলাকাছাড়া করা হয় সংগঠনটির অন্তত এক হাজার সদস্যকে।
মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে মৃত্যু হয় আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী ও আবদুল্লাহ আল নোমানের
শাপলা চত্বরে গণহত্যা চালিয়ে উল্টো দেশের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা দায়ের করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে ১১০টি মামলায় আসামি করা হয় অরাজনৈতিক ইসলামি ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারের পর কারাগারে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চালানো হয় প্রবীণ এই আলেমের ওপর। নির্যাতনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে হাটহাজারীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে চারজনের মৃত্যু হলেও উল্টো মামলা দায়ের করা হয় আলেমদের বিরুদ্ধে। ওই দফায়ও এক ডজন মামলায় আসামি করা হয় বাবুনগরীকে। মোট ১২২টি মিথ্যা মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।
১৩টি মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয় সাবেক এই মন্ত্রীকে। অসুস্থ অবস্থায়ও বারবার কারাভোগ করতে হয় তাকে। অবশেষে মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
জঙ্গি নাটকে সাজা
২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লটমণি পাহাড়ে কথিত জঙ্গি প্রশিক্ষণ আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজায় র্যাব। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় হাটহাজারী থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেত্রী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাকে। পরে হামজা ব্রিগেড নামে নামসর্বস্ব একটি জঙ্গি সংগঠনকে আর্থিক সহায়তার অভিযোগও আনা হয় শাকিলার বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তারের পর দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন।
মিরসরাই পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রেদোয়ানের পারিবারিক একটি ভবন রেদোয়ান মঞ্জিলের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় পুলিশের কথিত সোর্স। কদিন পর ওই বাড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ হচ্ছে দাবি করে নাটক মঞ্চস্থ করে পুলিশ। ওই মামলায় ফাঁসানো হয় রেদোয়ানকে। আদালতে সাক্ষ্য দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
একই ভাবে মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকার উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজহার চৌধুরীর মালিকানাধীন চৌধুরী ম্যানশন ভবনটি ভাড়া নেয় পুলিশের সোর্সরা। তিন-চারদিন পর এক রাতে বাইরে থেকে লোক ধরে এনে জঙ্গিনাটক সাজানো হয়। বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যা করা হয় দুজনকে। ওই মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় মাজহার চৌধুরীকে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন স্টাফ রিপোর্টার এম কে মনির, মিরসরাই প্রতিনিধি নুরুল আলম, হাটহাজারী প্রতিনিধি খোরশেদ আলম শিমুল এবং ফটিকছড়ি প্রতিনিধি একলাস ঝিনুক)