
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে হাইকোর্টের বিধি-বিধানের কোনো তোয়াক্কা না করেই ভোলার আদালতে নাজির হয়েছিলেন আব্দুল কাদির জিলানী। চার বছরের বিধান থাকলেও মাত্র দেড় বছরেই পদোন্নতি পেয়েছেন দুইবার। যা আদালত অঙ্গনে নজিরবিহীন। সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আশীর্বাদ পুষ্টে জিলানী হয়ে উঠেন আঙুল ফুলে কলা গাছ। ব্যাপক দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে দুই হাতে কামিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। তার এই অতিমাত্রা লোভ থেকে রক্ষা পায়নি বিচার প্রার্থীদের (বিশ্রামাগার) ন্যায়কুঞ্জও। সেখান থেকেও ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নাজির জিলানীর বিরুদ্ধে। তার দুর্নীতির রাজত্বের রাজ্যে এখনও দিশেহারা ভোলার আদালত প্রাঙ্গণ।
জানা যায়, আব্দুল কাদির জিলানী ২০২৩ সালের জুন মাসের কুমিল্লা জেলা জজ আদালত থেকে স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে ভোলায় যোগদান করেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে। ১৬ গ্রেডে চাকুরি করেও হাইকোর্টের নিয়মকে তোয়াক্কা না করেননি। ৪ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়াই আগস্ট মাসে জালিয়াতির মাধ্যমে উচ্চমান সহকারী পদে যোগদান করেন। একই তারিখে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ আবারও অনিয়মের মাধ্যমে আদালতের কর্মচারীদের সর্বোচ্চ পদ নাজির পদে যোগদান করেন। যা গ্রেড-১৪ এর অন্তর্ভুক্ত।
অপরদিকে হাইকোর্টের নির্দেশ ও অভিজ্ঞতা এবং জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে নাজির হওয়ার দাপটে কামিয়ে নেন কয়েক কোটি টাকা। তৎকালীন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এএইচএম মাহমুদুর রহমানের আশীর্বাদ পুষ্ট এই নাজিরের দাপট এখনও বিদ্যমান। আমার দেশে প্রকাশিত ফ্যাসিস্ট বিচারকদের তালিকায় এই সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের নামও রয়েছে। ২০২২ সালে বরিশালে এই জেলা ও দায়রা জজের অধীনেই বেঞ্চ সহকারি হিসেবে কাজ করতেন নাজির জিলানী। এখানেই থেমে নেই নাজির আব্দুল কাদের জিলানী। ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০ জন বিচার প্রার্থীর বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জ ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভাড়ার টাকা। শুধুমাত্র বিচার প্রার্থীরা এখানে এসে বিশ্রাম নিবে এই উদ্দেশ্যেই ২৮ নভেম্বর ২০২৪ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের বিভাগের বিচারপতি আশরাফুল কামাল এ ন্যায়কুঞ্জ উদ্বোধন করেন।
ন্যায়কুঞ্জ (বিশ্রামাগার) ভাড়া নেয়া বা দেয়ার বিধান না থাকলেও নিয়মিত ভাড়া পরিশোধের কথা স্বীকার করলেন ন্যায়কুঞ্জের ক্যান্টিন ব্যবসায়ী বাপ্পী। তবে এ ব্যাপারে নাজির জিলানীকে আমার দেশ-এর পক্ষ জিঞ্জাসা করা হলে তিনি সরাসরি মিট করার অপার দিয়ে বলেন, আমার ব্যাপারে যেসকল অভিযোগ রয়েছে। তা আমি এখন জবাব দেবো না। আপনার সাথে সামনাসামনি দেখা করব। স্যার আমাকে অভিযোগগুলোর বিষয় বলেছেন।
এ সকল বিষয়ে ভোলার জেলা ও দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফারুক উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, এসকল নিয়োগ তো আমার আগের জেলা ও দায়রা জজ দিয়ে গেছেন। ন্যায়কুঞ্জের বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আমি সেই বিষয়টি দেখবো।