
নিউরো রোগীদের চিকিৎসায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সেবার পরিধি বাড়ছে। এ হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই চালু হবে ৫০০ শয্যার নতুন ভবনটি। এটি চালু হলে নিউরো রোগীর চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যায় উন্নীত হবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন ১৫ তলা ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগস্টে এর উদ্বোধন করা হবে বলে প্রত্যাশা করছি। তবে এখনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। এতে হাসপাতালে সংযুক্ত হবে আরও ৫০০ শয্যা। বর্তমানে শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়। উদ্বোধনের পর আরও অনেক রোগীকে আমরা সেবা দিতে পারব। বর্তমানে হাসপাতালে আইসিইউ-এইচডিএইউ মিলিয়ে ২০টি শয্যা আছে। নতুন ভবনে আইসিইউ শয্যা বাড়ানো হবে। ১৫ তলা ভবনের নিচের তিন তলা বেসমেন্ট হিসেবে থাকবে। সেখানে পার্কিং এরিয়ার পাশাপাশি সার্ভিস সেকশনও থাকবে। ওপরের ১২ তলায় ওয়ার্ড, ওটি, পরীক্ষানিরীক্ষার সব ব্যবস্থা থাকবে।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৫০০ বেডের নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের পাশেই ১৫ তলা নতুন ভবন করা হয়েছে। নতুন ভবন চালুর প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়ে গেছে। সাজসজ্জার কিছু কাজ বাকি। হাসপাতালের জনবল নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালনায় ৮৫২টি পদ নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, ‘এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪-৫ হাজার রোগী সেবা নেয়। এর মধ্যে ১২৫ থেকে ১৫০ জনকে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু শয্যা না থাকায় মাত্র ২০-২৫ জনকে ভর্তি করা যায়। তাই হাসপাতালে আরও ৫০০ শয্যা যোগ হলে আরও বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘১ হাজার শয্যায় উন্নীত হলে এটা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় নিউরো হাসপাতাল। পরিসর বাড়ায় দুর্ঘটনায় মাথায় কিংবা শরীরে আঘাত পাওয়া রোগীদের সেবায় ১০০ শয্যার ট্রমা ডেডিকেটেড রাখা হচ্ছে। শয্যা না থাকায় স্ট্রোকের রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা মেকানিক্যাল থ্রমবেকটমি করা যাচ্ছে না, অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করতে হচ্ছে। এ রোগীরা এখানেই সেবা পাবেন।’ চলতি মাসেই এ ৫০০ শয্যা উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান এই চিকিৎসক।
২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৩০০ শয্যার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। রোগীদের চাপ বাড়তে থাকায় ওই ভবনেই আরও ২০০ শয্যা বাড়ানো হয়। তাতেও সংকুলান না হওয়ায় আরও ৫০০ বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০১৮ সালে একনেকে ৫০৬ কোটি টাকার ৫০০ শয্যার প্রকল্পটি পাস হয়। একই বছরের ২৯ অক্টোবর নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। নির্মাণের কাজ পায় জি কে ট্রেডার্স। নানান অভিযোগে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জি কে ট্রেডার্সের জি কে শামীম গ্রেপ্তার হন। তৎকালীন সরকার জি কে ট্রেডার্সের কাজ বন্ধ করে দেয়। তত দিনে তারা শুধু পাইলিংয়ের কাজ করেছে। এরপর ২১ মাস কাজ বন্ধ ছিল। পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হলে ২০২১ সালে কার্যাদেশ পেয়ে ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন ওই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে। ৫০৬ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় কনস্ট্রাকশন ও ইলেকট্রোমেকানিক্যালে এবং ২০৩ কোটি টাকা যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র কেনায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিউরোসায়েন্সেসে সবচেয়ে বেশি আসে স্ট্রোকের রোগী। তারপর বেশি দুর্ঘটনার রোগী (মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডে আঘাত)। এ ছাড়া পার্কিনসনস ডিমেনশিয়া, জিবিএস, মৃগী, হাইড্রোকেফালাসসহ নিউরোলজিক্যাল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতালে সেবা নেয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার নিউরোলজিক্যাল যে কোনো রোগের চিকিৎসা মেলে এ হাসপাতালে।