Image description

রাজধানী ঢাকার শ্যামপুর থানায় ৫ই আগস্টের পর চুরি, ছিনতাই ও জমি দখল নিয়ে বিরোধের অভিযোগ বেড়েছে। এ ছাড়া নারী নির্যাতন, যৌতুক সংক্রান্ত অভিযোগ  বেশি আসছে। পুলিশ সূত্রগুলো বলছে, এই এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে না। পুলিশ অপরাধীদের ঠিকানা জানতে চাইলে অনেক বাসিন্দা অপরাধীদের ঠিকানা দিতে পুলিশকে সহযোগিতা করছেন না। এতে অপরাধীদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। এই থানাটি ছোট হওয়ায় এখানে অভিযোগ কম তবে যেই অভিযোগ আসছে তার মধ্যে চুরি, ছিনতাই, জমি দখল নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা বেশি। নিয়মিত চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এসব এলাকার বাসিন্দারা সন্ধ্যার পর এবং ভোর বেলায় বের হতে ভয় পাচ্ছেন। পোস্তগোলা ব্রিজ ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ হওয়ায় এই এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ বেশি। প্রায়ই দেখা যায় ছিনতাইকারীরা বাস যাত্রীদের মোবাইল ফোন টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সরজমিন শ্যামপুর থানায় গিয়েও এসব অভিযোগের সত্যতা দেখা গেছে। ৫ই আগস্টের পর ক্ষমতার পালাবদল হওয়ার কারণে জমি দখল সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনাও বেড়েছে।  

সরজমিন দেখা যায়, দুপুর ১২টায় পোস্তগোলা ব্রিজ সংলগ্ন শ্যামপুর মডেল থানাটি প্রায় সাধারণ মানুষ শূন্য। অভিযোগ নিয়ে মানুষের আসা-যাওয়া নেই। একটি টুলের উপর বসে আছেন পুলিশ সদস্য মজিবুর, পাশে গারদ খানায় রয়েছে তিন আসামি শনিবার রাতে মাদক, ছিনতাই এবং জি আর মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের। তবে অভিযোগকারীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। হাফেজনগর এলাকার বাসিন্দা বিলকিস বেগম, তার মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছেন শ্যামপুর মডেল থানায়। টাকার জন্য প্রায়ই তার মেয়ের স্বামী মেয়েকে নির্যাতন করে। তিনি বলেন, এইখানে পুলিশ অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের অভিযোগগুলো শুনেছে এবং তাদের অভিযোগ গ্রহণ করেছে।

ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পর এই থানায় ফিরে এসেছে কর্মব্যস্ততা। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা পুলিশের ওপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা ফেরাতে পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এই এলাকায় তেমন কোনো বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়নি। তবে ৫ই আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে শ্যামপুর থানায় ব্যপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ফলে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় শ্যামপুর থানা। থানাটির সংস্কার কার্যক্রমের পর শ্যামপুর থানার পুলিশের কর্মকর্তারা নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- চুরি ছিনতাই রোধ করা। পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে দেশের ২১টি জেলার মানুষ যাতায়াত করে। এ কারণে এই এলাকা দিয়ে সব সময় মানুষের ব্যস্ততা থাকে। যারা রাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় নামে অথবা ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য রাস্তায় বের হন তাদের টার্গেট করে ছিনতাইকারীরা অলিতে গলিতে ওৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে সেই সকল যাত্রীদের থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে। অনেক ক্ষেত্রে চুরি ছিনতাই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ নিয়ে যান না এই কারণে শুধু মামলার পরিসংখ্যান দিয়ে অপরাধের পুরো চিত্র উঠে আসে না।

লেগুনা চালক রহমান বলেন, ৫ই আগস্টের আগে পুলিশ রাস্তায় তাদের কাছ থেকে চাঁদা নিতো। কিন্তু ৫ই আগস্টের পর পুলিশ আর রাস্তায় তাদের কাছ থেকে টাকা নেয় না।
আবির হোসেন গত রোববার সন্ধ্যায় লেগুনা দিয়ে পোস্তগোলা থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে চলন্ত লেগুনা থেকে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শ্যামপুর থানায় এসেছেন জিডি করতে।

শ্যামপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান বলেন, ৫ই আগস্টের পর শ্যামপুর থানায় ৪৫টা মামলা হয়েছে। তবে এর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে চুরি, ছিনতাই এবং জায়গা জমি নিয়ে ঝামেলা। এ ছাড়া নারী নির্যাতন ও যৌতুক সংক্রান্ত অভিযোগও আসছে। তিনি বলেন, গত মাসে প্রায় ৮০ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করেছি। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিনতাইকারী। রোববার তিনজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে দু’জন ছিনতাই, মাদক এবং একজন জিআর মামলার আসামি। মামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সাধারণত অভিযোগগুলো মীমাংসা করার জন্য চেষ্টা করে থাকি, তদন্ত সাপেক্ষে আলামত বিশ্লেষণ করে যে সকল অভিযোগ মামলা করার যোগ্য আমরা সেগুলো মামলা হিসেবে রুজু করি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই থানায় কাজ করতে গিয়ে আমাদের অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। যেহেতু ৫ই আগস্টের সময় একটা পুলিশের সঙ্গে সাধারণ জনগণের বিতর্কিত বিষয় আছে। আমরা পুলিশের ওপর আস্থা ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সবাই যেহেতু থানায় নতুন এসেছি, তাই সব এলাকা ঠিকমতো চিনি না। কোনো আসামি ধরতে গেলে কারও কাছ থেকে কোনো আসামির ঠিকানা জানতে চাইলে এলাকার অনেক বাসিন্দা সহযোগিতা করেন না, চিনেও জায়গাগুলো চিনে না বলেন। এলাকাবাসীর অসহযোগিতার কারণে আসামি গ্রেপ্তার করতে আমাদের বেগ পোহাতে হয়। আমরা যদি কোনো মামলা করতে যাই, তাহলে অনেকে সাক্ষী হতে চান না। জিডি সম্পর্কে তিনি বলেন, এই থানায় জিডিগুলো সব অনলাইন এবং অফলাইনে হয়।