Image description
 

পুলিশের সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমাতে চালু করা হয় অনলাইন জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ব্যবস্থা। থানায় না গিয়ে ঘরে বসে বা যে কোনো স্থান থেকে জিডি করা যায় অনলাইনে। এতে সেবাপ্রত্যাশীদের সময় যেমন সাশ্রয় হয়, থানায় যাওয়ার ঝক্কিঝামেলাও পোহাতে হয় না। তবে এই স্বস্তি উধাও হয়ে যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ছবি, অনলাইন পোর্টাল বা অ্যাপসে প্রবেশ ও তথ্যপ্রদান সংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে এনআইডির ছবির সঙ্গে বর্তমান (লাইভ) ছবির মিল খুঁজতে গিয়ে। ছবির মিল (ম্যাচ) না হওয়ায় জিডি করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বিপুলসংখ্যক সেবাপ্রত্যাশীকে। বাধ্য হয়ে তাঁদের থানায় গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে অনলাইনে জিডি করতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইন জিডি প্ল্যাটফর্ম (gd.police.gov.bd) বা অনলাইন জিডি অ্যাপসে প্রবেশে সমস্যা, সঠিক তথ্য দিতে না পারা এবং সেবাপ্রত্যাশীর কারিগরি জ্ঞানের অভাবে অনলাইনে জিডি করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয। তখন ভুক্তভোগী সেবা পান না। এর ফলে ঝুলে থাকে থানা পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপ। যে কোনো ধরনের হারানো সংক্রান্ত জিডি অনলাইনে করা গেলেও গুরুত্বপূর্ণ জিডি বা অভিযোগের ক্ষেত্রে সেবাপ্রত্যাশীকে শেষ পর্যন্ত থানায় যেতে হয়। এসব কারণে এখনও অনলাইনে জিডি ব্যবস্থা কাক্সিক্ষত সাড়া ফেলেনি সেবাপ্রত্যাশীদের কাছে। ভুক্তোভোগীরা বলেছেন, অনলাইন জিডি প্রক্রিয়া পুলিশের একটা সফল উদ্যোগ। কিন্তু জিডি এন্ট্রি করতে গিয়ে কঠিন প্রক্রিয়া তাদের বিড়ম্বনায় ফেলছে। এটা আরও সহজ করা দরকার।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘অনলাইন জিডি চালুর পর আমরা ভেবেছিলাম অনেক জিডি হবে। আমরা এত ট্যাকল করতে পারব কি না। কিন্তু সেই অনুযায়ী বাড়েনি। আবার হঠাৎ করে কোনো মাসে কমে গেছে। কী কারণে কমল এ ব্যাপারে আমাদের যৌক্তিক ব্যাখ্যা নেই। কিন্তু আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে সীমিত আকারে অনলাইন জিডি চালু করা হলেও তখন হারানো এবং উদ্ধার ছাড়া আর কোনো বিষয়ে জিডি করা যেত না। বাকি অপশনগুলো তখন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখন আমরা কিন্তু সব অপশন খুলে দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক আগে তোলা এনআইডির ছবির রেজুলেশন ভালো না। ফলে অনেক সময় লাইভ ছবির সঙ্গে এনআইডির ছবি ম্যাচ করছে না। তবে ৯৫ শতাংশ মিললেই আমরা রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছি।’

থানায় না গিয়ে অনলাইনে জিডি পদ্ধতি চালু করা হয় ২০২২ সালের ২১ জুন। এরপর থেকে (gd.police.gov.bd) পোর্টাল ঢুকে যে কোনো স্থান থেকেই সংশ্লিষ্ট থানায় অনলাইনে জিডি করা যায়। কিন্তু নানা কারণে অনলাইনে জিডি করার ব্যবস্থাটা অনেক ক্ষেত্রেই বিগত সরকারের আমলে গতি হারায়। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৫ এপ্রিল প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলট ভিত্তিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সব থানা এবং চাঁদপুর জেলা পুলিশের সব থানায় অনলাইন জিডি সেবা চালু করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে সারা দেশে সব থানায় অনলাইনে জিডি করার সুবিধা চালু করা হয়। সর্বশেষ রেলওয়ের থানাগুলোয় চালু করা হয়।

অনলাইন জিডি সেবা পেতে গুগল প্লে স্টোর থেকে ঙহষরহব এউ অ্যাপটি ডাউনলোড করে অথবা (gd.police.gov.bd) পোর্টালে ঢুকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই সেবা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, সচল মোবাইল নম্বর ইনপুট দিতে হয়। এ ছাড়া লাইভ ছবি তুলতে হয়। এই লাইভ ছবির সঙ্গে এনআইডির ছবি মিললেই কেবল জিডির জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যায়। কারও জিডি করতে সমস্যা হলে পুলিশের হটলাইনের সহায়তা নেওয়া যায়।

পুলিশ সূত্র বলেছে, সংশ্লিষ্ট থানা থেকে সেবাপ্রত্যাশীর অভিযোগের ধরন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সেবাপ্রত্যাশীকে অবগত করা হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি জিডির যোগ্য হয়, তাহলে সেটি জিডি নম্বর এবং তদন্ত অফিসারের বিবরণীসহ ডিজিটাল জিডির কপি পাঠানো হবে। অভিযোগের বিষয়টি যদি মামলার যোগ্য (আমলযোগ্য অপরাধ) হয়, সেক্ষেত্রে অভিযোগের প্রিন্ট কপি অথবা অভিযোগের কোড নম্বরসহ সেবাপ্রত্যাশীকে থানায় উপস্থিত হতে হবে।

পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এনআইডি অপশন না থাকলে যে কেউ অন্যের নামে ভুয়া জিডি করতে পারে ফাঁসানোর জন্য, যাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে এ জন্য এই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যিনি জিডি করবেন তাঁর পরিচয় নিশ্চিত করতেই এনআইডি রাখা হয়েছে। এনআইডির সঙ্গে ছবি এবং তথ্যের সঙ্গে ম্যাচিং হলেই কেবল জিডির জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। জিডি করতে যে কোনো অভিযোগ অনলাইনে করার পর সংশ্লিষ্ট অভিযোগটি থানার অফিসার ইনচার্জের ড্যাশ বোর্ডে চলে আসবে। তাঁর যাচাই-বাছাইয়ের পর সাবমিট দিলেই জিডি হয়ে যাবে। তবে মামলার বিষয় হলে তখন অফিসার জিডি করতে পারবেন না। অফিসার অভিযোগটি প্রক্রিয়াধীন রাখবেন এবং সেবাপ্রত্যাশীর কাছে একটি ম্যাসেজ পাঠাবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ মাসে সারা দেশের থানাগুলোয় মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৪টি অনলাইন জিডি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে থানায় না গিয়ে ঘরে বসে মাত্র ৪২ হাজার ৮৭৮টি অনলাইন জিডি রেকর্ড হয়েছে। আর থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তার আইডি ব্যবহার করে অনলাইনে জিডি করা হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৮৬টি। এর মধ্যে থানায় না গিয়ে এপ্রিল মাসে ৪৭০টি, মে মাসে ১ হাজার ৯৭৯টি, জুন মাসে ৩ হাজার ১৯০টি, জুলাই মাসে ১০ হাজার ৬৫টি, আগস্ট মাসে ১০ হাজার ৬০৫টি এবং সেপ্টেম্বর মাসে ১৬ হাজার ৫৬৯টি অনলাইন জিডি রেকর্ড করা হয়েছে।