
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কালিবাড়ি বাজারে গত ১২ সেপ্টেম্বর ১২ বছর বয়সী এক মুসলিম শিশুকন্যাকে এক হিন্দু বৃদ্ধ কর্তৃক ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। প্রথমে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করে ভুক্তভোগীরা ব্যর্থ হলে ১৭ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত খবর ফেসবুকে পোস্ট করেন স্থানীয় একজন ব্যক্তি। এরপর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে তোলাপাড় হয়েছে গত দুই সপ্তাহ ধরে; যার মধ্যে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে নানান প্রচার/প্রচারণাও অন্তর্ভূক্ত ছিল। এরমধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তের মালিকানাধীন টেইলার্সের সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে স্থানীয় কিছু লোকজন। ২০ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে ঢিল ছুঁড়েন এক যুবক, যাকে স্থানীয়রা মাদকাসক্ত হিসেবে জানেন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ২১ সেপ্টেম্বর দ্য ডিসেন্ট এর একজন প্রতিনিধি ঘটনাস্থল এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঠিকানা বিয়ানিবাজারের কালিবাড়ি বাজার, লাউতা এবং পাতন গ্রামে যান।
ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দ্য ডিসেন্ট এর প্রতিনিধি সেখানে দিনব্যাপী অবস্থান করে অন্তত ৩০ জন ব্যক্তির সাথে কথা বলেছেন; যাদের মধ্যে ভিকটিম, তার পরিবার, অভিযুক্তের পরিবার, ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানের মালিক-কর্মচারী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রয়েছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিটির নাম নবদ্বীপ শুক্ল বৈদ্য। পুলিশ জানিয়েছে, নথিপত্র অনুযায়ী তার বয়স ৭৫ বছর। তিনি কালিবাড়ি বাজারের একজন দর্জি ও স্থানীয় লাউতা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি 'বাবু টেইলার্স' নামে একটি দোকানের মালিক।
ভুক্তভোগির বর্ণনানুযায়ী, গত ১২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বেলা দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে কালিবাড়ি বাজারে 'বাবু টেইলার্স'-এ ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা হলেও ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিয়ানীবাজারের মোল্লাপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি বাজার এলাকার পাতন গ্রামে বসবাস করছেন।
মেয়েটির পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের ঘটনাটি প্রথমে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠলে স্থানীয় যুবকরা ফুঁসে উঠলে সেটি সম্ভব হয়নি। এরপর ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে নিয়ে আসেন স্থানীয় যুবকরাই।
কালিবাড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত নবদ্বীপের ‘বাবু টেইলার্স’ বন্ধ রয়েছে। শাটারে তালা ঝুঁলছে। সামনের সাইনবোর্ড ভাঙ্গা। বাজারের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহী নন। তবু চেষ্টা করে ৫ জনের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়।
তাদের কাছ থেকে জানা গেল, ঘটনার দিন (১২ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার থাকায় অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। এজন্য তারা কেউ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। সবাই পরে অন্যদের কাছ থেকে শুনেছেন।
ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান জনি বলেন, ‘ঘটনার দিন শুক্রবার ১২টা পর্যন্ত আমার দোকান খোলা ছিল। বাবু টেইলার্স আর আমার দোকান সামনা-সামনি। তখন পর্যন্ত বাবু টেইলার্সও খোলা ছিল। ওরকম কিছু তখন বুঝিনি। বিকালে এসে শুনি বাবু টেইলার্সের বৃদ্ধলোক একটা শিশুকন্যাকে যৌন নির্যাতন করেছেন। বিভিন্নজন নানা কথা বলছে। আমরা চাই- সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা কী তা বের হয়ে আসুক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘটনার প্রথম প্রতিবাদকারী ও সাক্ষী ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী জামিল হোসেন এবং স্থানীয় যুবক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
জানতে চাইলে জামিল হোসেন বলেন, ‘পুলিশ তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে গেছে। আর কারো সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করে গেছে। এজন্য তিনি কিছু বলতে পারবেন না।’
লাউতা গ্রামের যুবক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘শুক্রবারে কালিবাড়ি বাজার মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে আসি। খুৎবা চলছিল, আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম বাবু টেইলার্সের দোকান খোলা এবং সামনে একটি লেডিস ছাতা এবং কম বয়সী মেয়েদের এক জোড়া জুতা রাখা। টেইলার্স দোকানটিতে সামনে-পেছনে দুটি রুম। সামনের রুমে কোনো মানুষ ছিল না। পিছনে আরেকটি রুম আছে। সেখানে কেউ থেকে থাকলে আমি দেখিনি। নামাজ শেষে ফেরার পথে একইভাবে জুতা ও ছাতা রাখা ছিল। তখন দোকানের সামনে বাবু (নবদ্বীপ) দাঁড়ানো ছিলেন।’
জাহিদ আরও বলেন, ‘আমি স্বাভাবিকভাবেই চলে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বাজারের দোকানদার জামিল হোসেন আমাকে বললেন ‘ভাই, একটু থাকবেন; দরকার আছে।’ আমি বললাম ‘কী দরকার?’ তখন তিনি বললেন, ‘সকাল থেকে একটি ছোট বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে তিনি (নবদ্বীপ) দোকানে কী করছেন আমরা সেটা জানতে চাই। প্রায় দেড়-দু' ঘন্টা উনি বাচ্চাটিকে নিয়ে ওখানে কী করেছেন?’
জাহিদ বলেন, ‘আমি জামিলকে বললাম, বাজারের ব্যবসায়ীদের বিষয়টি অবগত করো।’ এরপর ব্যবসায়ী বিপ্লব ভাইকে বিষয়টি জানানো হয়। কথাবার্তা শেষে বিপ্লব, সন্দীপ পাল সহ চারজনকে বিষয়টি দেখে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব নেন। পরবর্তীতে বাবু টেইলার্সের (নবদ্বীপ) বাড়িতে গিয়ে তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। আমাদেরকে পরবর্তীতে জানাবেন বলে কথা দেন। কিন্তু পরদিন শনিবার পর্যন্ত কিছু না জানানোয় আমরা আবারও তাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করি। তখন তারা বলেন, এরকম (ধর্ষণের মতো) কিছু ঘটেনি। পরে এলাকার যুব সমাজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর শুনেছি এলাকার কয়েকজন লোক ভিকটিমের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ভিকটিম তাদেরকে ঘটনার (ধর্ষণের) সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বিচার না করে ধামাচাপা দেওয়া ওই চারজনের এবং অভিযুক্তের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই আমরা লাউতা-মোল্লাপুরের যুব সমাজ।’
স্থানীয় আরও কয়েকজন যুবকের সাথে কথা হয়। তারা জানান, ঘটনা জানাজানির পর থেকে মধ্যস্থতার দায়িত্ব নেয়া বিপ্লবের দোকান পায়ই বন্ধ পাওয়া যায়। আরেক সন্দ্বীপ দোকানে থাকেন না। সন্দ্বীপের দোকানে গেলে কথা হয় কর্মচারী মিথুন দেবনাথের সঙ্গে।
তিনি জানান, ‘সন্দ্বীপ সিলেটে (শহরে) গেছেন। এর আগে যারাই এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার কিছু এখানে নেই। ঘটনা যদি সত্যি হয়, তাহলে তার (নবদ্বীপের) শাস্তি হোক। না হলে সমাধান হোক।’
সন্দীপ বা তার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে মিথুন বলেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অভিযুক্তের দোকানে ভাঙচুর করা হয়েছে আর ২০ তারিখ অভিযুক্তের বাড়িতে নাকি আক্রমণ হয়েছে, শুনেছি, তবে আমরা দেখিনি।’
বিয়ানীবাজারের মোল্লাপুর ইউনিয়নের পাতন গ্রামে পরিবারের সঙ্গে থাকে ভিকটিম শিশুটি। গ্রামের অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। কেউ এ বিষয়ে প্রকাশ্যে (নাম-পরিচয়ে) কথা বলতে রাজি নন। তারা বলেন, ‘শিশু বাচ্চা কখনো মিথ্যা কথা বলবে না। অনেকদিন ধরে তারা এখানে বসবাস করছে। এর আগে তো এমন কিছু বলেনি। ঘটনাটি আমাদের এলাকার জন্য খুবই লজ্জার। নিরীহ-অসহায়, দরিদ্র এই পরিবারটি যেনো সঠিক বিচার পায়, সেটি দাবি।’
ভিকটিমের ঘর | ছবি: দ্য ডিসেন্ট
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিকটিমের প্রতিবেশি যুবক (২৬) বলেন, ‘ভিকটিমের মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি এবং মেডিকেল রিপোর্ট সবমিলিয়ে মনে হচ্ছে ঘটনা সত্য। আর এই শিশুর কি উনার সঙ্গে কোনো বিরোধ আছে? বাচ্চাটি মিথ্যা বলবে কেন? আমার পরিবারের নিষেধ এ বিষয়ে কথা না বলতে। নইলে আমি মিডিয়ায় সব বলতাম। এমনে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন, সব করছি।’
ভিকটিম (১২) শিশুটি ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানায়, ‘জর্দা আনতে বাজার গেছিলাম। হিন্দু এক বেটা (নবদ্বীপ) আমারে ডেকে নেয় আর বলে 'তোর বোনের কাপড় নিয়ে যা'। আমি যাইতে না চাইলে সে বলে 'সেলাই করে ফেলছি নিয়ে যাও'। তখন আমি গেলে দোকানের দরজা লাগাইয়া আমার হাত ও মুখ বান্ধিয়া খারাপি করছে।'
ভিকটিমের মা-বাবা দু’জনই সহজ-সরল মানুষ। মা বলেন, ‘বাড়িতে বড় মেয়ের জন্য ইষ্টিকুটুম এসেছিলেন। জর্দা ছিল না, তাই ওই মেয়েকে পাঠাই। ঘন্টা-দেড়েক সময় অতিবাহিত হলেও মেয়ে না আসায় আমি তাঁর খোঁজে বের হই। অর্ধেক পথে গিয়ে তাকে পাই। এতো দেরি কারণ জিজ্ঞেস করলে মেয়ে ওই ঘটনা জানায়। আমার অসহায় মেয়ের সঙ্গে যে এমন খারাপ কাজ করল, নির্যাতন করল তার সঠিক বিচার চাই।’
মেয়ের বাবা বলেন, ‘বাড়িতে বড় মেয়ের বিয়ের আয়োজন থাকায় ওইদিন কিছু বলিনি। কারণ, জানাজানি হলে যদি মেয়ের বিয়ে ভেঙে যায়। বিয়ের পরদিনই থানায় গিয়ে মামলা করেছি। পুলিশ একদিন এসেছিল আর আসেনি। পুলিশ যদি সঠিক বিচার না করে যেখানে গেলে সঠিক বিচার মিলবে আমরা সেখানে যাবো।’
স্থানীয় ফুটবলার আবু সাইদ বলেন, ‘আমরা স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। ভিকটিমের জবানবন্দি শুনেছি। আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।’
অভিযুক্ত নবদ্বীপ বৈদ্য বিয়ানীবাজারের লাউতা ইউনিয়নের লাউতা গ্রামের প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। নবদ্বীপের প্রতিবেশী ও লাউতা গ্রামের অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে বৃদ্ধ আসির উদ্দিন বলেন, ‘ও মানুষ তো আমরা জানি ভাল মানুষ। এখন কোন সময় কার কী হয়, বলা মুশকিল। ঘটনা শুনছি। সত্য-মিথ্যা যাচাই করে সঠিক বিচার হওয়া উচিত। এলাকার জন্য লজ্জাজনক। তবে এজন্য তাদের উপর কোনো আলাদা প্রভাব পড়বে কেন? তারাতো আমাদের মতোই আছে, থাকবে। যে অপরাধ করবে তার শাস্তি হবে।’
একইভাবে রেদওয়ান আহমদ রাজ বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। এরকম কোন অভিযোগ উনার বিরুদ্ধে শুনিনি। অবশ্য মানুষ তো চিনা যায় না, কে কখন কী করে বলাও যায় না। বুড়া বয়সে যদি মাথায় শয়তানি চলে আসে তাহলে তো কিচ্ছু করার নাই। আমরা প্রত্যাশা করি এটা মিথ্যা হোক, আমাদের এলাকায় এ ধরণের ঘটনার সূচনা না হোক। সঠিক নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।’
আরেক স্থানীয় যুবক উমায়েদ আহমদ সাফওয়ানের দাবি, ‘যদি তিনি এরকম কিছু করে থাকেন তাহলে তাঁর সঠিক বিচার চাই। আর যদি না করে থাকেন তাহলে এই যে তাঁর মান-সম্মানহানি হচ্ছে তারও বিচার চাই।’
ঘটনার পর থেকে নবদ্বীপ বৈদ্য আত্মগোপনে। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের দেখা মিলে। বড় ছেলে কৃষাণ শুক্ল বৈদ্য জানান, ‘৭৫ বছর বয়সেও বাবা আমাদের আগলে ধরে বেঁচে আছেন। এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। গতকাল (২০ সেপ্টেম্বর) আমাদের ঘরে অ্যাটাক হয়েছে। মা হাঁটতেই পারছে না। তারেক নামের একটা ছেলে এসেছে প্রথমে ইট দিয়ে ঢিল ছুঁড়ে। মূলত সে গাঁজা-মদ খায়। প্রশাসনও তাঁর বিচার করতে পারে না। আমরা তো এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা শুনছি, পরস্পরিক আলাপ হচ্ছে; হিন্দুদের আর ছাড় দেওয়া যাবে না। আমরা তো ইস্কন না কিন্তু তারা বলাবলি করছে, আমরা ইস্কন। তবে হুজুর-মাওলানারা, আমাদের ক্লাসমেটরা আমাদের ভালোবাসে। এলাকাবাসী আমাদের সাপোর্ট করছেন, পাশে আছেন। তারাও ন্যায়টা চায়, আমরাও চাই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’
কৃষাণ আরও বলেন, 'ঘটনার পর ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে বাবাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। বাবার চিন্তায় মা'রও খাওয়া-ধাওয়া বন্ধ।'
এ ঘটনা পর তাদের দৈনন্দিন চলাফেরায় কী ধরণের প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে কৃষাণ বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় আমরা ধর্ম প্রচার করি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গীতা পাঠ করি। এ ঘটনার পর থেকে মানুষ শুধু নেগেটিভ চিন্তা করছে। বলছে, বাবা এরকম তাহলে সন্তান...। আবার কেউ বলছে 'না, সন্তানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আসলে আমরা মেনে নিতাম। বাবার দ্বারা এমনটা হতে পারে না।' আমরা তো কল্পনাও করতে পারি না। বাচ্চাটা উনার নাতনির মতো। ষড়যন্ত্র করে বাবাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চক্রান্তকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করছি।’
লাউতা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও নবদ্বীপের প্রতিবেশি কবির উদ্দিন বলেন, ‘নবদ্বীপরা প্রায় ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। তার বা তাদের পরিবারের কারো বিষয়ে এরকম কিছু কখনো শুনিনি। তবে মানুষের কখন কী হয়-তা তো বলা যায় না। ঘটনার দিন আমি এলাকায় ছিলাম না। বুধবারে এসে শুনেছি। তবে কেউ কেউ যেমন ঘটনাটি সত্য বলছেন, আবার কেউ কেউ মিথ্যাও বলছেন। এরপর বাড়িতে গিয়ে নবদ্বীপকে পাইনি। আমাদের দাবি, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা উদঘাটন হোক এবং সঠিক বিচারও হোক।’
নবদ্বীপের পরিবার-পরিজনের বিষয়ে কবির মেম্বার বলেন, ‘তারা নিরাপদ আছেন। তবে ২০ সেপ্টেম্বর একটা ড্রাগ এডিক্টেড লোক তাদের বাড়িতে এসে সামান্য ঝামেলা করেছে। পরে আমরা গিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। আর কোনো সমস্যা হয়নি। ওই দিনই স্থানীয় আলেমরা লাইভ করে বলেছেন, তাদের বাড়ি, দোকানে কেউ যেনো কোনো রকম কিছু না করে। আইন তাঁর নিজস্ব গতিতে চলবে। আমাদের এলাকা শান্ত আছে।’
এ ঘটনার পর শারিরিক জটিলতা দেখা দিলে ১৬ সেপ্টেম্বর ভিকটিমকে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রেরণ করা হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর ওসিসিতে চিকিৎসা নেন ভিকটিম। ওসমানী হাসপাতালের ওসিসির দেওয়া ছাড়পত্রে উল্লেখ করা হয়- ‘যৌন নিপীড়ন’-এ ভুগছিলেন ভিকটিম।
চিকিৎসা শেষে ১৯ তারিখ বিয়ানীবাজার থানায় ভিকটিমের বাবা (৫১) বাদি হয়ে নবদ্বীপকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দুই সপ্তাহের বেশি অতিবাহিত হলেও অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার থানার ওসি (তদন্ত) মো. ছবেদ আলী বলেন, ‘১২ সেপ্টেম্বর বেলা দেড় ঘটিকার সময় একটা ধর্ষণ সংক্রান্ত ঘটনা; ১২ বছরের মুসলিম মেয়ে আর ৭৫ বছর বয়সের হিন্দু পুরুষ। কিন্তু আমরা এটা জানতে পারি ১৯ সেপ্টেম্বর। জানার পর এটা ভিকটিমের বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলা রেকর্ড করি। ভিকটিমের আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রাথমিক তদন্ত চলছে, তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরে বলার সুযোগ নাই।’
মামলাটি তদন্ত করছেন বিয়ানীবাজার থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, ‘আমরা আসামিকে গ্রেফতারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতাসহ সবধরণের তৎপরতা চালাচ্ছি। আশা করি শিগগিরিই ধরতে পারবো। ২২ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযুক্ত হিন্দু হওয়ায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা প্রতিনিয়ত নজর রাখছি। কেউ যাতে ধর্মীয় কোনো সহিংসতা না ছড়ায় সেদিকে নজর রয়েছে। অভিযুক্তের পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। বাদ বাকি তদন্তে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’