
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের সংগঠিত করে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নারী কর্মীরা। আগামী ১৪ অক্টোবর খুলনা বিভাগ থেকে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’এর নারী সদস্যরা এই কর্মসূচি শুরু করবেন। মূল লক্ষ্য- বর্তমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, নৈতিক অবক্ষয় থেকে বের হয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে নারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সেলিমা রহমান শীর্ষনিউজকে বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর খুলনা থেকে কাজ শুরু করবে সংগঠনটি। তিনি জানান, আগামীতে সরকার গঠন করলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএনপি কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে তা নারী ভোটারদের সামনে তুলে ধরা হবে। তৃণমূল পর্যায়ের নারীদেরকে নিয়ে আমরা ধানের শীষের পক্ষে জনমত তৈরি করব। নারী ভোটারদের সচেতন করব। নারীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে কথা বলব। আগামীতে নারীদের কিভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা হবে সে পরিকল্পনাও জানানো হবে।
সেলিমা রহমান আরও জানান, বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ইতোমধ্যে দেশব্যাপী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে গেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ এলাকায় কাজ করছেন। শুধু বিএনপির কর্মী নয়, সারাদেশের সব শ্রেনী পেশার মানুষের মধ্যে ধানের শীষের পক্ষে উম্মাদনা দেখা যাচ্ছে। আমরা প্রত্যাশা করছি, জনগণের রায় নিয়েই বিএনপি আগামীতে সরকার গঠন করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর সুখী, সমৃদ্ধশালী ও স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নারী ও ছাত্রী সংস্থার কর্মীরা। মূলত কিছুটা ভিন্ন কৌশলে এদের বিপরীতেই মাঠে নামানো হচ্ছে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামকে। আপাতত বিএনপির মহিলা দল সরাসরি মাঠে নামছে না। ফোরামের মাধ্যমেই তৃণমূলের নারী ভোটারদের সংগঠিত করবে দলটি।
এ ব্যাপারে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, জামায়াতে ইসলামী বেশ আগেভাগেই দেশব্যাপী তাদের নারী বিভাগের কর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জামায়াত সমর্থিত ছাত্রী সংস্থার মেয়েরা। লক্ষ্য, নারী ভোটারদের কাছে টানা। এজন্য দেওয়া হচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে নারী ভোটারদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন তারা। বিএনপি নেতারা আরও জানিয়েছেন, নারী ভোটারদের কাছে টানতে জামায়াতের এই কৌশলের মোকাবিলায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপি এখন পর্যন্ত সম্মিলিত কোনো কর্মসূচি শুরু করেনি। এমন পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম কতটুকু সফলতা পাবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, ফোরামের ব্যাপ্তি সারাদেশে তেমন নেই। ফোরামের সফলতা দেখে মহিলা দলকে সারাদেশে মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে ফোরাম সূত্রে জানা গেছে- কর্মসূচিতে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদে বিএনপি সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের একত্র করে নির্বাচনকেন্দ্রিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনায় বিএনপির ৩১ দফা, নারীর অধিকার, সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে নারী ভোটারদের সচেতন করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা থাকবে।
জানা গেছে, আগামী ১৪ অক্টোবর খুলনা অঞ্চলের জেলাগুলোতে কর্মসূচির মাধ্যমে ফোরামের যাত্রা শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগে কর্মসূচি পালন করা হবে।
১৪ অক্টোবর খুলনা জেলা ও মহানগরের পাশাপাশি বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরার বিএনপি সমর্থিত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় হবে। পরদিন ১৫ অক্টোবর বৃহত্তর যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইলের সাবেক এবং বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা সভা হবে।
১৬ অক্টোবর কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় হবে। এসব কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট জেলার বিএনপি সভাপতি বা আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিবদের যুক্ত করা হবে। কর্মসূচির নেতৃত্বে থাকবেন ফোরামের আহ্বায়ক সেলিমা রহমান ও সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী।
সূত্রমতে, সম্প্রতি এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভাচুর্য়ালি নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের শীর্ষ দুই নেতা বেগম সেলিমা রহমান ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের সংগঠিত করার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর থেকেই দেশজুড়ে গণসংযোগের উদ্যোগ নেয় নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম। পাশাপাশি সারা দেশে নির্বাচিত সাবেক ও বর্তমান নারী জনপ্রতিনিধির নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের মাধ্যমে সেই তালিকা সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেত্রীর কাছে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের আগস্টে আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’। সংগঠনটির বর্তমান আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং সদস্য সচিব ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী।
শীর্ষনিউজ