Image description
 
 
 
ইসলামী আইনে মানুষের কোন কাজের বিধান প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণত ৫টি হুকুম রয়েছে। ফরজ/ওয়াজিব; মুস্তাহাব/সুন্নাহ; হারাম/মাকরুহ তাহরীমি; মাকরুহ; এবং মুবাহ।
প্রতিটি হুকুমের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ স্তরের দলিল-প্রমাণ থাকা আবশ্যক।
 
ফরজ/ওয়াজিবের ক্ষেত্রে কাজটি করার জন্য যেমনি অকাট্য দলিল থাকা প্রয়োজন তেমনি হারাম/মাকরুহ তাহরীমের ক্ষেত্রে কাজটির নিষেধাজ্ঞার উপর অকাট্য দলিল থাকা আবশ্যক।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অমুসলিমদের শুভেচ্ছা জানানোর নিষেধাজ্ঞার উপর কি কোন দলিল আছে যা দ্বারা হারাম কিংবা মাকরুহ তাহরীমি প্রমাণিত হবে।
উত্তর হচ্ছে, নেই।
 
উপরন্তু সূরা আল-মুমতাহিনার ৮ ও ৯ নাম্বার আয়াতের আলোকে সাধারণ অমুসলিমদের সাথে সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্পূর্ণ বৈধ, যার মধ্যে তাদের শুভেচ্ছা জানানো, তাদেরকে আপ্যায়ন করানো, ইত্যাদিও অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
রাসূল সা. বলেন: আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য কতক কাজ হালাল করেছেন, তোমরা তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো। কতক কাজ হারাম করেছেন, তোমরা তা থেকে বিরত থাকো। আর আল্লাহ তা’আলা ভুলক্রমে নয়; বরং ইচ্ছে করে কতক বিষয়ের বিধান প্রদান করা থেকে বিরত থেকেছেন। তোমরা সেগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকো। তাই মুসলিম ফোকাহাগণ বলেছেন, এগুলো হচ্ছে গ্রে এরিয়া যার সবগুলো মুবাহ।
 
সুতরাং অমুসলিমদের শুভেচ্ছা জানানোর ব্যাপারে যেহেতু কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই এটি অবশ্যই মুবাহ এর অন্তর্ভূক্ত হবে।
এখন বর্তমান সমস্যার দ্বিতীয় অংশ- আমীরে জামাতের জন্য এটি করা ঠিক হয়েছে কি-না, যেখানে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ রয়েছেন।
 
উসুলে ফিক্হ এর স্কলারগণের মতে মুবাহ যদিও সাধারণত একটি বৈধ কাজ, কিন্তু স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে এটি অপরাপর হুকুমগুলোতে পরিণত হতে পারে। মুবাহ কাজ কখনো ওয়াজিব, কখনো হারাম, কিংবা কখনো মুস্তাহাব ও মাকরুহও হতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামাতে ইসলামী একটি বড় স্টেকহোল্ডার এবং ইসলামী রাজনীতির অগ্রপথিক। ভাল-খারাপ যাই হউক না কেন, জামাত যে কাজ করে তা অনেক ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান বা কাজ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে হিন্দুদেরকে বুঝানো হয় জামাত হচ্ছে তাদের শত্রæ, এরা ক্ষমতায় আসলে তাদের জান-মাল বরবাদ হয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
 
তাই যদিও তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো একটি সাধারণ মুবাহ কাজ, যা সাধারণ কেউ না করলে কিছু আসে যায় না; কিন্তু আমীরে জামাত কিংবা জামাতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ না করলে এটার ফলাফল ইসলামের জন্য এবং ইসলামী রাজনীতির জন্য নেতিবাচক হতে পারে। এ বিবেচনায় আমীরে জামাত কিংবা জামাতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এর জন্য তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানো শুধু মুবাহ নয়; বরং ওয়াজিবও হতে পারে।
 
এছাড়াও এক্ষেত্রে সিয়াসাহ শরীআহ তথা ইসলামী রাজনীতির আরো অনেক দিক আছে যেগুলো আর এখানে আলোচনা করছি না।
 
ইসলাম ও ঈমানের বিষয়গুলো এত ঠুনকো নয় যে, অমুসলিমদের শুভেচ্ছা জানালে ঈমান কমজোর হয়ে যাবে। বরং এমনটি করলে ইসলামের মহত্ত, বড়ত্ত, উদারতা, নমনীয়তা, সৌন্দর্য ইত্যাদি ফুটে উঠবে।
গ্রিটিংস কিংবা শুভেচ্ছা জানানো একটি সাধারণ সৌজন্যবোধ, সুন্দর সামাজিকতা এবং ক্ষেত্র বিশেষে অফিস-আদালতের ডেকোরাম হতে পারে। গ্রিটিংস করা মানে তো এটা না যে তাদের উৎসবে তারা যা করে মুসলিমরাও তা মানে এবং পালন করে। সুতরাং এ ধরনের গ্রিটিংস মাকরুহ কিংবা হারাম হবে না।