Image description

টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগার খবর পেয়ে সোমবার ফায়ার সার্ভিসের টঙ্গী স্টেশন থেকে ১৫ জন দমকলকর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান স্টেশন অফিসার শাহীন আলম। নিয়ম অনুযায়ী, আগুনের ধরন সম্পর্কে ধারণা পেতে গুদামের মালিককে জিজ্ঞেস করেন ভেতরে কী আছে। অতি দাহ্য বা বিস্ফোরক কোনো দ্রব্য আছে কি না।

'তারা বলেন, না তেমন দাহ্য কিছু নেই। লবণ ও হাইড্রো আছে,' দ্য ডেইলি স্টারকে জানান শাহীন আলম।

তিনি আরও জানান, এই তথ্যের ভিত্তিতে দমকলকর্মীরা আগুনের কাছে যায়। আগুনের ধরনের ওপর ভিত্তি করেই ব্যবস্থা নেয় ফায়ার সার্ভিস।

তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। শাহীনসহ ৪ ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হন। দুজনের শরীর শতভাগ পুড়ে যায়। তাদের একজন, শামীম আহমেদ গতকাল জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সোমবার ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, কেমিক্যাল গোডাউনে সোডিয়াম জাতীয় দ্রব্য ছিল।

'বিস্ফোরক দ্রব্য আছে জানতে পারলে আরও শক্তিশালী দল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতাম। আমাদের প্রস্তুতি ভিন্ন হতো এবং আমরা আগুনের কাছে যেতাম না। এরকম দুর্ঘটনা ঘটতো না,' বলেন স্টেশন অফিসার শাহীন।

নিহত শামীমের শ্যালক আল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, মৃত্যুশয্যায় পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন শামীম। তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে করতে তিনি 'ভুল তথ্যের কারণে এই দশা হলো আমার' বলে বারবার আহাজারি করেছেন।

শামীমের বরাত দিয়ে আল আমিন আরও বলেন, 'নিহত এই দমকলকর্মী পানির পাইপ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তারপর আগুনে পানি দেওয়ার পরপরই বিস্ফোরণ হয়।'

শামীমের ভাই খোকন মিয়া জানান, ২০০৪ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন শামীম। ছয় ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার ছোট। তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গীতেই থাকতেন।

টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওহেদুজ্জামান জানান, টঙ্গীর অগ্নিকাণ্ড ও দমকলকর্মীদের হতাহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

গুদামে বৈধভাবে মালামাল রাখা হতো কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ আসার পর তদন্ত করে দেখা হবে।

তিনি আরও বলেন, 'সোলাইমান নামের এক ব্যক্তি এই দোকানের মালিক বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এটা কেমিক্যালের গোডাউন ছিল। এখান থেকে কেমিক্যাল বিক্রি করা হতো বলেও জানা গেছে।' 

বার্ন ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন আরও দুই দমকলকর্মীর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। 

এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, 'পুড়ে যাওয়া গুদামটি এখনো উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। মাঝেমধ্যে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আবার আগুন লাগার সম্ভাবনা তেমন নেই। তবে এখান থেকে যে গ্যাস বের হচ্ছে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।' 

ঘটনাস্থলের ১০০ মিটারের মধ্যে সাধারণ জনগণকে না আসার অনুরোধ জানান তিনি।