
‘বাতিল মতবাদের সাথে কোনো জোট করা হবে না। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। মওদূদী ১৯৪১ সালে বাতিল আক্বিদা নিয়ে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠা করছেন। আমরা ১৯৪১ সালের মওদূদীর ইসলাম মানি না। আমরা দেড় হাজার বছর আগের মদিনার ইসলাম মানি। মওদূদী পবিত্র কুরআনের হাদিসের ভুল ধরে ভ্রান্ত মতবাদ ছড়িয়েছেন। এ দেশে পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামাদের মাধ্যমেই প্রকৃত ইসলাম এসেছে। হকপন্থি ইসলামপ্রিয় জনগণ কোনো ভ্রান্ত মতবাদের ধোঁকাবাজিতে পড়বে না।’ গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাগণ এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে আলেম ওলামাগণ বলেন, বর্তমান সংকটময় সময়ে যখন জাতি বিভ্রান্তি, অন্যায় ও অস্থিরতার শিকার, তখন ইসলামি দলগুলোর পথ ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে হক্কানি আলেমদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলামি দলগুলো যদি দ্বীনদার, নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ মোতাবেক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে তাতে ইসলাম, মুসলমান, দেশ ও জাতির প্রকৃত কল্যাণ নিহিত থাকবে, এমনটিই বিশ্বাস করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। দলের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়ার যৌথ সঞ্চালনায় ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন। ওলামা সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা মাওলানা আতাউর রহমান আরেফিসহ কয়েকজন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। জমিয়ত নেতৃবৃন্দ যোগদানকৃত নেতাদের স্বাগত জানান।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আহূত জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে দেশের শীর্ষ আলেম, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর হযরত মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি সর্বপ্রথম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশ ও জাতির সংকটময় মুহূর্তে এই সম্মেলন আহ্বান করার জন্য জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে মোবারকবাদ জানাই। আজ আমরা এক কঠিন সময় পার করছি, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি, আরেক দিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধেও বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করছি। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা আমি কল্পনাও করিনি। চব্বিশের অভ্যুত্থানে আমরাও সম্পৃক্ত ছিলাম। আমাদেরও বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং বহু লোক আহত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে যাওয়া একক কারো অর্জন নয়; বরং এই অর্জনে দেশের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল, সেখানে আমরাও ছিলাম। সুতরাং আমাদেরকে অবজ্ঞা করার পরিণতি কারো জন্যই ভালো হবে না। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে স্পষ্ট করে বলতে চাইÑ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের জন্য, আমাদের স্বাধীনতা ও অখ-তার জন্য এবং আমাদের ধর্মীয় কৃষ্টি-সভ্যতার জন্য এক অশনি সঙ্কেত। আমি দেশ ও ইসলামবিরোধী এই চুক্তির তীব্র নিন্দা জানাই এবং তা বাতিল করারও জোর দাবি জানাই। যে সকল ব্যক্তি, নেতা ও সংগঠন এই চুক্তির প্রতিবাদ করেছে এবং সাধ্যমতো কর্মসূচিও পালন করেছে আমি তাদেরকে মোবারকবাদ জানাই এবং তাদের জন্য দোয়া করি।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক সর্ববৃহৎ ঈমানি সংগঠন হলেও এর সাথে যে সকল ইসলামি রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের সবার নিকট আমার সুস্পষ্ট পরামর্শ হচ্ছেÑ আগামী নির্বাচনে এমন কারো সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করবেন না, যাদের বিষয়ে আমাদের বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষরা আমাদেরকে সতর্ক করে গেছেন এবং তাদের ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অনেক বই-পুস্তক লিখে গেছেন। যাদের কাছে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম আজ্বমাঈনের শান ও সম্মান নিরাপদ নয় তারা কখনোই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। নবীয়ে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবেই ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও আমার সাহাবায়ে কেরাম যে পথ ও পন্থার উপর আছি সেটিই একমত্র মুক্তির পথ।’
সহিহ আক্বিদার সব ইসলামি দল যদি এক হতে পারত তাহলে সেটিই সবচেয়ে ভালো হতো এবং এ রকম আহ্বানও ইতোপূর্বে আমি করেছি কিন্তু আমার এ আহ্বানে সাড়া দেয়ার মতো তেমন কোনো পরিবেশই এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমতাবস্থায় আমার সর্বশেষ পরামর্শ হলো : ইলমে ওহি এবং ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করবেন না। এ দেশের মাসাজিদ, মাদারিস, দাওয়াত ও তাবলিগ এবং তাসাউউফ ও সুলুকের মেহনত কোনোটিই যেন অদূর ভবিষ্যতে হুমকির মুখে না পড়ে সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা আপনাদের ঈমানি দায়িত্ব বলে আমি তীব্রভাবে অনুভব করছি। এর ফলে অন্তত যুগযুগ ধরে চলে আসা দ্বীন ও ইসলামের বিশুদ্ধ মতাদর্শের সুরক্ষাটা নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ। পরিশেষে আমি আপনাদের সকলের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাকে এবং আপনাদের সবাইকে মৃত্যু পর্যন্ত দ্বীনে হক্ব ও সীরাতে মুস্তাক্বিমের উপর পাহাড়সম দৃঢ়তা নসিব করেন, আমিন। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একখানি হাদিস শরিফ পেশ করে আমি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করতে চাই।
হজরত সুফইয়ান ইবনে আব্দিল্লাহ সাক্বাফি রাজিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করলাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন একটি কথা, এমন একটি উপদেশ দিন যা শ্রবণ করার পর ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য আমাকে আর অন্য কারো কাছে প্রশ্ন করতে না হয়। উত্তরে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘তুমি বলো যে, আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম, অতঃপর এই ঘোষণার উপর অটল-অবিচল থাকো।’ তিনি বলেন, আজ আমাদের জীবনে ইস্তিক্বামাতের এই ঈমানি গুণ হারিয়ে গেছে। তাই আমরা সবাই এই ঈমানি গুণ অর্জনের চেষ্টা করি। ইনশাআল্লাহ এর অনেক ফায়দা পাওয়া যাবে।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, ওলামায়ে দেওবন্দের আলেমদের রেখে যাওয়া আমানত জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কাফেলা জাতির কাছে মাফ চাওয়ার মসিবতে পড়েনি। দেশ, জাতি ও দ্বীন ইসলামের কল্যাণে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম কাজ করছে। তিনি বলেন, ভ্রান্ত মতবাদের সাথে হকপন্থিরা আপস করতে পারছে না। ভ্রান্ত মতবাদ কচুরিপানার মতো ভেসে যাবে। তিনি বলেন, আমরা নগদ ফায়দা হাসিল করতে চাই না। আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুকী বলেন, মওদূদী কুরআন-হাদিস সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। মওদূদী ১৯৪১ সালে ভ্রান্ত মতবাদ নিয়ে জামায়াতে ইসলাম শুরু করেছে। আমরা দেড় হাজার বছরের আগের মদিনার ইসলামে বিশ্বাসী আমরা ১৯৪১ সালের মওদূদীর ইসলামী বিশ্বাসী নই। তিনি বলেন, মওদূদী ছয়-সাতজন নবীর ওপর আক্রমণ করেছেন। আমরা লাহোরি ইসলাম গ্রহণ করতে পারি না। মওদূদীর ইসলামের আক্বিদা বরদাশত করতে পারি না।
সম্মেলনে শীর্ষ উলামায়ে কেরামের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মহাপরিচালক মাওলানা খলীল আহমদ কুরাইশী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, আল-জামেয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী পীর সাহেব জৈনপুরের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আব্দুল রহিম, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা আরশাদ রহমানী। চট্টগ্রাম দারুল মারিফের মহাপরিচালক মাওলানা ফুরকানুল্লাহ নদভী, মাওলানা আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ হাটহাজারী, মাওলানা খুবাইব জিরি, মাওলানা আনোয়ারুল করিম যশোরী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা যাইনুল আবিদীন, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মাওলানা মুসা আল হাফিজ, হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী হাটহাজারী, মুফতি মুহাম্মদ আলী আফতাবনগর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মুফতি সালাউদ্দিন দিলু রোড। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, সহ সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস তালুকদার, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাদী, সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, মাওলানা তফাজ্জল হক আজিজ, মাওলানা শেখ মুজিবুর রহমান, মুফতি মুজিবুর রহমান, মাওলানা মাসউদুল করিম, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, হাফেজ মাওলানা আলী আকবর কাসেমী, মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, মাওলানা আব্দুল হক কাওসারী, মাওলানা লোকমান মাযহারী, মুফতি নাছির উদ্দিন খান মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা নুর মুহাম্মদ কাসেমী, মুফতি জাবের কাসেমী, মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, মুফতি মাহবুবুল আলম কাসেমী ও মুফতি হাসান আহমদ কাসেমী।
জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবগুলো হচ্ছেÑ ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি বাতিল করতে হবে। আজকের সম্মেলন মনে করে, এই চুক্তির ফলে ইসলামি মূল্যবোধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ঘুচাতে এবং জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে ঘোষিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের সব আয়োজন সম্পন্ন করতে হবে। সাথে সাথে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করত: রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে, শরিয়াহর সীমারেখার আলোকে নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একই সাথে বিতর্কিত নারী কমিশনের প্রস্তাবনা বাতিল করতে হবে, সমকামিতা ও ট্রান্সজেন্ডারসহ ইসলামবিরোধী সব পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে, পিলখানা হত্যাকা-, শাপলা হত্যাকা-, ২১ সালের মোদিবিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ধর্ম অবমানা রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করতে হবে, গাজায় গণহত্য বন্ধ এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যথাযথ উদ্যোগ প্রহণ করতে হবে, পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধ করতে হবে, কাদিয়ানী সম্প্রদায়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে, সকল প্রকার জুলুম, বৈষম্য, চাঁদাবাজি ও মসজিদ-মাদরাসা দখল করার অপরাজনীতি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মুশতাক আহমদ গাজী নগরীর হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, আমরা সবাই ঐক্য চাই। ঐক্যবদ্ধ না হলে বড় কাজও সফল হয় না। তাকওয়া অবলম্বন করলে ঐক্যবদ্ধ থাকা যাবে। তিনি বলেন, আল্লাহ বিশ্ব জগতের রহমত স্বরূপ রাসূল (সা.)-কে পাঠিয়েছিলেন। একমাত্র তিনিই সবচেয়ে বড় মুত্তাকি। আমাদের একটি পরিচয় আমরা সবাই একই নবীর উম্মত। নবী (সা.) ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য বড় তাগিদ দিয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ হলে ওলামাদের হাতেই ক্ষমতা আসবে। আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, আমাদের ইতিহাস রক্ত দেয়ার ইতিহাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম রক্ত দিয়ে তাদেরকে ভারত উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে জমিয়ত। তিনি বলেন, বালাকোটের ময়দানে কারা রক্ত দিয়েছেন, পাকিস্তানের আমলে ফ্যামিলি প্লানিংয়ের বিরুদ্ধে আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরীর নেতৃত্বে, হাফেজ্জী হুজুর (রহ.), আল্লামা শাইখুল হাদিস (রহ.), মুফতি আমিনী (রহ.) নেতৃবৃন্দ তসলিমা নাসরিন, হাইকোর্টের ফতোয়াবিরোধী রায়, ঢাকাসহ সারা দেশে মূর্তি নির্মাণের বিরুদ্ধে কসাই মোদিবিরোধী আন্দোলনে আমরাই রক্ত দিয়েছি। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির বিরুদ্ধে তাদের নেতারা প্রতিবাদ করতে পারেননি। আল্লামা জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, যারা ১৫ বছর হাতপাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস দিয়েছেন। তাদের দেশবিরোধী চক্রান্ত এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলন ছিল জনগণের অধিকার ও ভোটের অধিকারের আন্দোলন। আগামী নির্বাচন যারা বানচাল করার পাঁয়তারা করবে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চলবে। মাওলানা খালেদ ছাইফুল্লাহ আইয়ূবী বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম শত শত বছর ধরে উপমহাদেশের মুসলমানদের অধিকার ও স্বাধীনতার হেফাজতের আন্দোলন করছে। তিনি বলেন, দেশে যখন অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে এবং বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। জমিয়তকে একামতে দ্বীনের ভিত্তিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী পীর সাহেব জৈনপুরীর লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনেকে এখন আর ইসলামী রাষ্ট্রের কথা বলেন না; কল্যাণ রাষ্ট্রের কথা বলেন। তারা পিআর পদ্ধতির পশ্চিমা মৌলবাদের স্লোগান বাস্তবায়নে মাঠে নামছেন। পিআর পদ্ধতি অনেকটা জুয়ার মতো। ‘পিআর পদ্ধতি’ এটি তো অন্ধকারের উপর আরেক অন্ধকার। পিআরকে ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামের বাইরে চলার কোনো সুযোগ নেই। রাসূল (সা.) সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে হবে। মাওলানা ইউনুস (রংপুরী) বলেন, ওলামায়ে দেওবন্দের আলেমগণ কোনো দিন আক্বিদাবিরোধীদের সাথে আপস করেননি। হকের ওপর অটল থাকার শিক্ষা দিয়েছে আলেমগণ। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম লড়াই করেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের বিরুদ্ধে একইভাবে লড়াই করতে হবে। ২০১৩ সালে মতিঝিল শাপলা চত্বরের গণহত্যার বিচার করতে হবে। বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। অন্যথায় বর্তমান সরকারকেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পরিণতি বরণ করতে হবে। নানুপুর পীর আল্লামা সালাহ উদ্দিন লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। আক্বিদাবিরোধীদের সাথে কোনো আপস নয়। বিদেশি দালালদের সাথে ঐক্য হতে পারে না। তিনি সিলেটে ইমাম হত্যার বিচার দাবি জানান। হাটহাজারীর আল্লামা খলিল আহমেদ কোরাইশী বলেন, আকাশে দু’টি কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। ওই মেঘের সাথে মোলাকাত নয়; মোকাবিলা করে হকের আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমাদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের লক্ষ্যে ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ নিতে হবে।